রুট চিহ্নিতকরণের কাজ শহরের এমএসএ ময়দানে। —নিজস্ব চিত্র
ছোট মফস্সল শহরে রিকশার বিকল্প হয়ে উঠতে এর সময় লাগেনি। দূষণমুক্ত যান এবং রিকশার চেয়ে কম ভাড়ায় ও তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছনোর সুয়োগ মেলায় পথে নামার সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয়তাও জুটে গিয়েছে। কিন্তু, একই সঙ্গে শুরু হয়ে গিয়েছে সংঘাত। কোথাও রিকশা, কোথাও অটোর সঙ্গে। অল্প হলেও উঠতে শুরু করেছে যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও।
এ যানের নাম টোটো। পুরুলিয়া শহরেও পথে নামার সঙ্গে সঙ্গে রিকশাচালকদের সঙ্গে টোটো চালকদের সংঘাত বাধতে দেরি হয়নি। একাধিক ঘটনা মাথাব্যথা বাড়াচ্ছিল প্রশাসনের। এই অবস্থায় টোটোগুলিকে এ বার রুটে বাঁধছে প্রশাসন। টোটোগুলি এ বার থেকে আর নিজেদের খেয়ালখুশি মতো রাস্তায় যাতায়াত করতে পারবে না। গোটা শহরকে মোট ১৩টি রুটে ভাগ করে প্রশাসন জানিয়েছে, এগুলির মধ্যে থেকেই এক একটি টোটোকে রুট বেছে নিতে হবে।
কিছুদিন আগেই টোটোগুলিকে নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করার কাজ শেষ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এ বার টোটোগুলির রুট বেঁধে দেওয়া হবে।’’ কোন টোটো কোন রুটে চলবে, তা চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হল শনিবার থেকে। এ দিন মানভূম ক্রীড়া সংস্থার মাঠে টোটোগুলিকে ডাকা হয়। সেখানেই রুট চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু কিছু টোটো চালক ক্রীড়া সংস্থার মাঠের সামনে হাটের মোড় আটকে অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকেন। তাঁদের বক্তব্য, রুটে বেঁধে দিলে তাঁরা কী ভাবে খরচা তুলবেন? এই মোড়ে যান চলাচল ব্যাহত হতে শুরু করেছে, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে টোটো চালকদের সরিয়ে দেয়।
বছর খানেক আগেও রিকশাই ছিল পুরুলিয়া শহরের ভিতরে যাতায়াতের মূল মাধ্যম। পথে টোটো নামায় শহরের মানুষ এবং প্রতিদিন যাঁরা কাজের জন্য জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুরুলিয়া শহরে আসেন, তাঁরা তাঁরা স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু বাড়তে বাড়তে শহরে বর্তমানে টোটোর সংখ্যা হাজার ছুঁয়েছে। পুরুলিয়ার মতো ছোট জেলা শহরে এত টোটো চলায় ইদানীং একাধিক রাস্তায় যানজট তৈরি হচ্ছে। একই ভাবে দিনভর রাস্তায় থেকেও অনেক টোটোরই তেমন লাভ হচ্ছে না। পাশাপাশি টোটো চলায় রুজিতে টান পড়েছে রিকশাচালকদের। এর থেকে মুক্তি পেতেই ১৩টি রুটে ভাগ করে টোটো চালানোর ভাবনা প্রশাসনের।
জেলা পরিবহণ আধিকারিক অনির্বাণ সোম বলেন, ‘‘এক-এক জন টোটো চালককে তাঁর পছন্দমতো তিনটি করে রুট বেছে নিতে বলা হয়েছিল। তাঁরা তিনটি করে রুটের কথা জানিয়েছিলেন। সেই তিনটি রুটের মধ্যে থেকেই সংশ্লিষ্ট টোটো চালককে একটি রুট দেওয়া হবে।’’ পুরুলিয়ার উপ পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘আমরা কেবল রুট তৈরি করে দিয়েছি।’’ এক একটি রুটে বেশি দাবিদার হলে লটারির মাধ্যমে কোন কোন টোটো সেই রুটে চলবে, তা নির্ধারিত হবে বলে অনির্বাণবাবু জানিয়েছেন। জেলা পরিবহণ দফতরের ভাইস চেয়ারম্যান সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সংশ্লিষ্ট টোটো চালক যে এলাকার বাসিন্দা, তিনি প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বেরনোর সময় ও বাড়ি ফেরার সময় নিজের এলাকার মোড় দিয়ে একবার রুট করতে পারবেন। তা ছাড়া তিনি যে রুট পছন্দ করেছেন সেই রুটে চালাবেন।
টোটো চালকদের সংগঠনের সম্পাদক জ্যোতি সহিস বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করছি। কিন্তু, কী ভাবে টোটোগুলি চলবে, তা পুরোপুরি জানার পরেই এই ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাব।’’