লরা গ্যাসকোয়েন। নিজস্ব চিত্র
বোধ হয় একেই বলে স্বপ্নপূরণ।
‘স্বপ্ন যদি কিছু থাকে, ফোটাও গোলাপে ঘাসে নয়নতারায়/ ব্যক্ত হোক অপরূপ আদিগন্ত স্পন্দিত জীবন-ধারায়’— ‘অভিব্যক্তি’ কবিতায় লিখেছিলেন ছান্দারের উৎপল চক্রবর্তী। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘অভিব্যক্তি’ নামে এক প্রতিষ্ঠান। উদ্দেশ্য ছিল, শিক্ষার্থীরা সেখানে নিজেকে ব্যক্ত করবেন। অপরের অভিব্যক্তি উপলব্ধি করবেন। এই ভাবনা থেকেই প্রতিষ্ঠানের পথচলা শুরু হয়েছিল। এ বার তার নাম রাঢ়বঙ্গের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়াবে মার্কিন মুলুকে। সৌজন্যে, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, শিল্পশিক্ষার আদান-প্রদানের লক্ষ্যে ‘অভিব্যক্তি’র সঙ্গে আমেরিকার ক্যানসাস প্রদেশের জনসন কাউন্টি কমিউনিটি কলেজের চুক্তি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়।
বেলিয়াতোড়ের ছান্দার গ্রামে অনেকের সাহায্যে উৎপলবাবু অভিব্যক্তির প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৭৮-র ১০ মার্চ। তাঁর উদ্যোগে দেশ-বিদেশের বহু গুণী মানুষ এসেছেন প্রতিষ্ঠানে। হয়েছে মত বিনিময়। প্রতিষ্ঠানে হয়েছে শিল্পসংস্কৃতির কর্মশালা। পরে অবশ্য আর্থিক কারণে অভিব্যক্তির সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। ২০১৭-র মে মাসে উৎপলবাবুর মৃত্যুর পরে, অভিব্যক্তির দায়িত্ব নেয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে শুরু হয় শিল্পকলার বিভিন্ন সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্স।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানান, কয়েক মাস আগে বৃত্তি পেয়ে ভারতে আসেন জনসন কাউন্টি কমিউনিটি কলেজের সেরামিক্সের অধ্যাপক লরা গ্যাসকোয়েন। তিনি অভিব্যক্তিতে এক মাস ধরে মাটির কাজ ও টেরাকোটার কাজ করেন। উপাচার্য বলেন ‘‘ওঁকে অনুরোধ করি, দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে অভিব্যক্তির শিক্ষার্থীদের যাতে লাভ হয়, এমন কিছু করতে।’’
লরা ফিরে যাওয়ার পরে, ওই কলেজের ‘ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন’ বিভাগের ডিরেক্টর ক্যারেন মিলার এবং ভিন্স মিলার শিল্পশিক্ষার আদান-প্রদানের জন্য একটি ‘পাইলট প্রজেক্ট’-এর প্রস্তাব পাঠান। বিশ্ববিদ্যালয় তাতে সম্মতি জানিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়েছে। এই চুক্তির ফলে ওই কলেজের দু’জন প্রত্যেক বছর অভিব্যক্তিতে আসবেন। আবার অভিব্যক্তির দু’জন ওই কলেজে যাবেন। এ দেশের শিক্ষার্থীরা বেলমালা ও শাঁখের কাজের মতো অনেক শিল্পকর্ম ওই দেশের শিক্ষার্থীদের শেখাবেন। আবার অভিব্যক্তির শিক্ষার্থীরা ওই দেশের শিক্ষার্থীদের থেকে তাঁদের দেশের শিল্পকর্ম শেখার সুযোগ পাবেন।
বাঁকুড়ার ভাস্কর সমরেন্দ্র মিশ্র বলেন, ‘‘এই আদান-প্রদানে অভিব্যক্তি বিশ্বের দরবারে তার কাজ তুলে ধরার সুযোগ পাবে। প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরাও উপকৃত হবেন।’’