সিদুঁরদান: মুণ্ডমালিনীতলা মন্দিরে বিয়ে অমর, পিঙ্কির। —নিজস্ব চিত্র।
মঙ্গলবার ছিল বিয়ের দিন। তার কয়েক ঘণ্টা আগে সোমবার সন্ধেয় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় পাত্রের ভাইয়ের। মুহূর্তে বদলায় দুই বাড়ির পরিবেশ।
দুপুরে রামপুরহাট হাসপাতালের মর্গে ভাইয়ের দেহের ময়না তদন্তের পর শেষকৃত্য। সন্ধেয় অনেক দিনের বান্ধবীর সঙ্গে বিয়ের লগ্ন— দোটানায় ছিলেন তারাপীঠ থানার সরলপুর গ্রামের অমর সূত্রধর। সামাজিক নিয়মে নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে শুভকাজ কি হতে পারে, তা নিয়েও ছিল সংশয়।
এ দিন সকালে সরলপুর গ্রামে লজ ব্যবসায়ী অমর সূত্রধরের বাড়িতে ভিড় জমে আত্মীয়-পড়শিদের। সোমবার সন্ধেয় ওই বাড়িতেই বিয়ের প্রস্তুতি ছিল তুঙ্গে। তৈরি হচ্ছিল হরেক খাবার, মিষ্টি। এলাকাবাসী জানান, এক তলায় মিষ্টি তৈরির জায়গায় আলোর ব্যবস্থা করছিলেন অমরের ভাই সমর। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে তার দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ করতে গিয়ে আচমকা তড়িদাহত হন বছর তেইশের ওই তরুণ। রামপুরহাট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। শোকের ছায়া নামে সরলপুরে। খবর পৌঁছয় তারাপীঠে অমরের শ্বশুরবাড়িতে। বিয়েবাড়ির হুল্লোড় থামে নিমেষে।
বড়ছেলে অমরের বিয়ের তোড়জোড় করবেন না ছোটছেলের শেষকৃত্যের— ভেবে পাচ্ছিলেন না প্রশান্ত সূত্রধর। মেয়ের বিয়ে নিয়ে আশঙ্কায় পড়েন তারাপীঠের সঞ্জয় ভকতও। এই পরিস্থিতিতে দুই পরিবারের পাশে দাঁড়ান তারাপীঠ ও সরলপুরের বাসিন্দারা। সোমবার রাত থেকে দফায় দফায় দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক হয়, সামাজিক বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই চার হাত এক হবে।
এ দিন দুপুরে মর্গে ময়না তদন্ত চলার ফাঁকে তারাপীঠ মুণ্ডমালিনীতলা মন্দিরে পিঙ্কি ভকতের সিঁথিতে সিঁদুর দিলেন অমর। পরিজনদের পাশাপাশি সেই বিয়ের সাক্ষী থাকলেন সরলপুর, তারাপীঠের অনেক বাসিন্দাই।