বক্তা: মাঝিহিড়াতে মহারাষ্ট্রের প্রবীণ গাঁধীবাদী রাধাবেন ভট্ট। নিজস্ব চিত্র
মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর আদর্শেই গ্রামের বিকাশ সম্ভব। গাঁধী গ্রাম স্বরাজের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আজও পূরণ হয়নি। তাঁর জীবনমুখী শিক্ষার প্রয়োগেই সার্বিক বিকাশ গড়ে উঠবে। জাতীয় স্তরের একদিনের আলোচনায় এই নির্যাসই উঠে এল।
গাঁধীজির আদর্শে গড়ে ওঠা মানবাজারের মাঝিহিড়া জাতীয় বুনিয়াদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার ওই আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। ‘গান্ধীজির স্বপ্নের ভারত ও আজকের ভারত’— শীর্ষক আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন জেলা ও বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা আলোচকেরা।
প্রবীণ গাঁধীবাদী মহারাষ্ট্রের রাধাবেন ভট্ট বলেন, ‘‘গাঁধীর ভাবনা ছিল স্বাধীনতার পর যেন ভারতে সর্বোদয় সমাজ গড়ে ওঠে। সবার কল্যাণের মধ্যে আমার কল্যাণ। তিনি পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণ চেয়েছিলেন। এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চাননি।’’
আয়োজক সংস্থার পক্ষে প্রসাদ দাশগুপ্ত জানান, এ রাজ্যে মানবাজারের মাঝিহিড়া, বর্ধমানের কলানবগ্রামের মতো গুটিকয় সংস্থা এখনও গাঁধী-আদর্শে শিক্ষাদান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। প্রবীণ গাঁধীবাদী কাজল সেন, সংস্থার অন্যতম পরিচালক প্রদীপ দাশগুপ্ত জানান, চিত্তভূষণ দাশগুপ্ত সাত দশক আগে এই প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন। এখনও তাঁরা বুনিয়াদি শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের মতে, ‘‘পাশ্চাত্য দেশের শিক্ষানীতি অনুসরণ করতে গিয়ে কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলতে বসেছি।’’
ওয়ার্ধার বাসিন্দা প্রভাকর পুসদকার ও সুষমা শর্মা বলেন, ‘‘গাঁধীর ভাবনার মূলকথা জমি ও প্রকৃতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে উন্নয়ন। আমাদের শিক্ষানীতি ওই ভাবনা থেকে অনেকটাই সরে এসেছে।’’
বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা কুণাল দেশাই, কলানবগ্রামের জ্ঞানশঙ্কর বিশ্বাসদের কথায়, ‘‘গ্রাম শক্তিশালী না হলে দেশ শক্তিশালী হবে না। তাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গ্রামীণ বিকাশের উপরে গাঁধী জোর দেওয়ার কথা বলেছিলেন।’’
দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় কলকাতা বিড়লা মিউজিয়ামের প্রাক্তন অধিকর্তা বিজ্ঞানী সমর বাগচী, জাতীয় শিক্ষকের সম্মানপ্রাপ্ত অমিতাভ মিশ্র, সর্বোদয় মণ্ডলের বিশ্বজিৎ ঘড়াই বক্তব্য রাখেন। তাঁদের কথায়, ‘‘কেবল পুথিগত মুখস্ত বিদ্যার শিক্ষা কোনও কাজে আসে না। ওই শিক্ষা প্রকৃত মানুষ গড়ে তোলে না। আর প্রকৃত মানুষ গড়ে না উঠলে ভারতের সার্বিক বিকাশ ঘটবে না।’’
এ দিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রাক্তন উপ-অধিকর্তা শান্তনু দত্ত চৌধুরী, আয়োজক সংস্থার সম্পাদক কৃষ্ণা সেন, জেলার ইতিহাসবিদ প্রদীপ মণ্ডল।