স্মার্ট ক্লাস শুরু হয়েছে হজরতপুর ২ নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র senguptadayal@gmail.com
স্কুলের দেওয়ালে টাঙানো মস্ত মনিটরে ফুটে উঠছে পড়ানোর বিষয়বস্তু। পাঠ্যবইয়ের নীরস বিষয়গুলি অডিয়ো, রঙিন ছবি বা ভিডিয়োর মাধ্যমে জীবন্ত ভাবে ফুটে উঠতে দেখে তাতেই বুঁদ হয়ে আছে পড়ুয়ারা।
শহরের নামী স্কুল বা বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল নয়। এই ছবি খয়রাশোল দক্ষিণ চক্রের হজরতপুর ২ নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ওই স্কুলের শিক্ষক ও এলাকাবাসীর মিলিত সহযোগিতায় ‘স্মার্ট ক্লাস’ শুরু হয়েছে ওই স্কুলে। অভিনব উদ্যোগে খুশি পড়ুয়া ও অভিভাবক শিক্ষক সকলেই। প্রসঙ্গত, স্কুলের দুই প্রাক্তনীর উদ্যোগে কেক দিনের মধ্যে স্মার্ট ক্লাসরুম পাচ্ছে বোলপুরের বাহিরি ব্রজসুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ও। আগামী ১০ জানুয়ারি ওই ‘স্মার্ট’ ক্লাসঘরের উদ্বোধন হওয়ার কথা।
খয়রাশোলের প্রাথমিক স্কুলে অবশ্য গত বৃহস্পতিবার থেকেই ‘স্মার্ট’ ক্লাস চালু হয়ে গিয়েছে। নতুন ক্লাসের উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় পরিদর্শক রবিউল ইসলাম। তাঁর কথায়, ‘আমার চক্রে মোট ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। স্মার্ট ক্লাস এই প্রথম। গ্রামীণ এলাকায় পড়ুয়াদের পাঠদানকে আরও আকর্ষণীয় করতে স্কুলের শিক্ষক ও এলাকাবাসীর উদ্যোগ সত্যিই প্রসংশনীয়।’’
ওই স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা ১৪০। রয়েছেন তিন জন শিক্ষক। এমনিতে বেশ সাজানো স্কুলেটি। কিন্তু, কী করলে স্কুলের মান বাড়ে, পড়ুয়াদের আরও বেশি করে স্কুলের প্রতি আগ্রহী করে তোলা যায়, লেখাপড়াকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতে করতেই উঠে এসেছিল স্মার্ট ক্লাস গড়ার প্রসঙ্গ। প্রধান শিক্ষক সাধন কুমার পান বলছেন, ‘‘ভাবনা প্রথম মাথায় এসেছিল আমার সহ-শিক্ষক দেবাশিস সেনের। তার পরে আমরা সেটা নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগীদের সঙ্গে বৈঠক করি। সকলের মিলিত দানে ভাবনা বাস্তবে রূপ পেল। খরচ হয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার টাকা।’’
৫৩ ইঞ্চির মনিটর এবং একটি ল্যাপটপ ও সাউন্ড সিস্টেম কিনেই স্মার্ট ক্লাসের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। শিক্ষকেরা জানালেন, এখন অ্যাপ-নির্ভর অনেক ব্যবস্থা চালু হয়েছে। অনলাইনে পড়াশোনার বিষয়বস্তু পাওয়া যায়। কোনও বিষয়কে পড়ুয়াদের মনোগ্রাহী করে তোলার জন্য ইউটিউবেও দক্ষ শিক্ষকদের ক্লাস রয়েছে। সবই কাজে লাগানো হবে স্মার্ট ক্লাসের মাধ্যমে।
স্কুলে এত্ত বড় ‘টিভিতে’ পড়াশোনা করা যাবে ভেবেই রোমাঞ্চিত ছোট্ট পড়ুয়া জয় মণ্ডল, সৃজিতা দাস, সূর্য বাগেরা। তাদের কথায়, ‘‘খুব আনন্দ হচ্ছে।’’ অভিভাবক সদানন্দ মণ্ডল, আনন্দ বাগ, শেখ রফিকেরা বলেন, ‘‘গ্রামীণ এলাকার পড়ুয়াদের কথা ভেবে শিক্ষকেরা যা করলেন, তার তুলনা নেই।’’