বেআইনি ভাবে লাগানো সেই পাম্প। নিজস্ব চিত্র।
পাশাপাশি বাড়ি। একই জলের লাইন। অথচ এক বাড়িতে জল আছে, অন্য বাড়িতে জলের দেখা নেই!
প্রবল গরমে এ ঘটনা রামপুরহাটের। পুরসভা অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে জেনেছে, অবৈধ ভাবে পাম্প দিয়ে সরাসরি জলের লাইন থেকে জল টেনে নেওয়ায় শহরে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তারা তাই শহরে এই জলচুরি রুখতে মাঠে নেমেছে। ইতিমধ্যেই একটি ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি বাড়ির জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। পুলিশের সাহায্য চেয়ে আবেদনও করেছে। পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি বলেন, ‘‘পুরসভার জল ব্যবহার নিয়ে বেনিয়মের জন্য আগের বাড়িতে জল পাচ্ছেন তো পরের বাড়িতে জল পাচ্ছেন না। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য পুরসভার পক্ষ থেকে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাইকিং করা হয়েছে। এর পরে গত সোমবার থেকে পুরসভার পক্ষ থেকে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অভিযান চলবে।”
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় ২০০৭ সাল থেকে রামপুরহাট পুরসভায় পানীয় জল প্রকল্পে পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডে পানীয় জল সরবরাহের জন্য নতুন পাইপ লাইন বসানোর কাজ শেষ হয়। ২০১২ সালেই শেষ হয় তিনটে নতুন রিজার্ভার তৈরির কাজও। বর্তমানে ৭০০০ বাড়িতে নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। শহরে রাস্তায় ৩০০০ ট্যাপের সংযোগ আছে। অশ্বিনী তিওয়ারি জানান, নতুন জলপ্রকল্পের মাধ্যমে পুরসভার ১৮ টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের পানীয়জল পেতে কোনও সমস্যা হবে না। তবুও বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে পানীয় জল পাচ্ছে না বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই কিছু কিছু বাসিন্দা পানীয় জলের পাইপ লাইনের সংযোগের সঙ্গে সরাসরি পাম্পের মাধ্যমে জল ব্যবহার করছেন। জল নিয়ে সমস্যা এতেই বেড়েছে।
পুরসভার সাব অ্যাসিন্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র ডাল্টন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সোমবার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে চারটি অবৈধ সংযোগ বিছিন্ন করা হয়েছে। এবং এলাকাবাসী যে জলের সমস্যা ছিল তা দূর হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকালে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। এর জন্য পুলিশের সাহায্য চেয়ে রামপুরহাট থানায় পুরসভার পক্ষ থেকে আবেদন জানান হয়েছে।” রামপুরহাট পুরসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘পুরসভা থেকে যে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে তার প্রয়োজনীয়তা আছে। সেই সঙ্গে আইনসঙ্গত ভাবে পানীয় জলের সংযোগ পুরসভাকেই ব্যবস্থা করে দিতে হবে।” তাঁর অভিযোগ, পুরসভার নজরদারির অভাবে একটি ওয়ার্ডে ট্যাপের মুখ দিয়ে পড়ে যাচ্ছে। আবার একটি ওয়ার্ডে জল পাচ্ছেন না মানুষ। প্রথম থেকেই জলের সমস্যায় জর্জরিত পুরসভা। বিরোধী দল নেতার অভিযোগে পুরপ্রধান জানান, ‘‘পাইপ লাইনের ত্রুটি যদি থাকে তা পরীক্ষা করা হবে। তবে যিনি অভিযোগ করছেন তিনি প্রথম দিকে কেন অভিযোগ করেননি!’’
এ দিকে সোমবার যাঁদের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সমীর সরকার নামে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা মঙ্গলবার পুরসভায় এসে তাঁর বাড়িতে পুনরায় সংযোগের আবেদন জানিয়েছেন। এবং বাজেয়াপ্ত যন্ত্র ফেরৎ দেওয়ার জন্য পুরকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা থেকে সংযোগ দেওয়া হয় তখন আমি বাড়িতে ছিলাম না। মিস্ত্রি ভুল করে ওই যন্ত্র লাগিয়েছে।’’