রেললাইনের ধারে ভিড়। সোমবার সকালে দুর্ঘটনার পরে। নিজস্ব চিত্র।
কর্মসূত্রে বাবা-মা রয়েছেন চেন্নাইয়ে। মাস দুয়েক আগে মেলা দেখার জন্য মাসির সঙ্গে কীর্ণাহারের জুবুটিয়া গ্রামের বাড়িতে ফিরেছিল ৭ বছরের অনিন্দিতা হাজরা। কথা ছিল, মেলার পরে বাবা-মা এসে নিয়ে যাবেন তাকে। সেই যাওয়া আর হল না। তার আগেই ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ চলে গেল ওই শিশুকন্যার। ওই ঘটনায় এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার ১১টা ৪০ মিনিট নাগাদ কীর্ণাহারের জুবুটিয়া স্কুলের কাছে আমোদপুর-কাটোয়া রেলপথে কাটোয়াগামী ডাউন এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় অনিন্দিতার। মারাত্মক ভাবে আহত হয়ে তার ঠাকুমা যোগমায়া হাজরা বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, ঠাকুমার কোলে রেললাইন পার হচ্ছিল মেয়েটি। দু’জনে ছাগল নিয়ে লাইন পেরিয়ে মাঠের দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময় কোনও ভাবে ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে মাথায় আঘাত লেগে মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ছাড়া মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাবে না।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে জুবুটিয়ার বাগদিপাড়ায় অনিন্দিতার বাড়ি। মামারবাড়ি একই গ্রামে। মেয়েটির বাবা অমর হাজরা চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মা পাপিয়া এবং দাদা আবীরের সঙ্গে অনিন্দিতাও সেখানে ছিল। দুর্ঘটনার পরে কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না দুই দাদু চেতন হাজরা এবং বিকাশ মেটে (মাতামহ)। কোনও রকমে বলেন, ‘‘মাস দুয়েক আগে মাসি আর মেসোর সঙ্গে গ্রামে শিবরাত্রির মেলা দেখার জন্য বাড়ি এসেছিল অনিন্দিতা। ওর বাবা-মায়ের এসে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই এমন ঘটনা।’’
প্রতিবেশী বাবন মেটে বলেন, ‘‘মেয়ে খুব অসুস্থ জানিয়ে অনিন্দিতার বাবা-মাকে চলে আসতে বলা হয়েছে। এসে যখন সত্যিটা জানবে, তখন কী হবে কে জানে।’’ গ্রামের মুদিখানার মালিক কানাই গড়াইয়ের কথায়, ‘‘মেয়েটি দিনে বহুবার আমার দোকানে আসত। ওর কাছে হিন্দিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা শুনতে চাইতাম। খুব ভাল লাগত। তার এমন মর্মান্তিক মৃত্যু, ভাবতে পারছি না।’’