প্রতীকী ছবি।
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দেওয়া ‘অপবাদ’-এর জেরে অসুস্থ হয়ে ব্যাঙ্কের এক কর্মী মারা গিয়েছেন বলে তাঁর বাবা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। জানিয়েছেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকেও। পুরুলিয়ার বলরামপুর থানার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
২০১৯-’২০ আর্থিক বছর শেষের পরে পুরুলিয়া কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের বলরামপুর শাখায় আট লক্ষ টাকার গরমিল ধরা পড়ে। ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, ৩ এপ্রিল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে, ওই ব্যাঙ্কে যত টাকা থাকার কথা, তার থেকে আট লক্ষ টাকা কম রয়েছে। বলরামপুর শাখার তরফে পুরো ঘটনাটি পুরুলিয়ায় ব্যাঙ্কের জেলা সদর অফিসে জানানো হয়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ঘটনার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, যে সময়ে গরমিল ধরা পড়ে, তখন ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে ছিলেন অভিষেক জয়সওয়াল। বলরামপুরের মুরাদগঞ্জে তাঁর বাড়ি। অভিষেকের বাবা ধ্রুপচাঁদ জয়সওয়াল সম্প্রতি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, মাঝেমধ্যে তাঁর ছেলেকে ক্যাশিয়ারের কাজ করতে হত। ৩১ মার্চ ওই ব্যাঙ্কের কোষাধ্যক্ষ অবসর নেওয়ার পরে, অভিষেককে সে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারপরেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে আট লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ তোলেন।
ধ্রুপচাঁদবাবুর অভিযোগ, ‘‘পুলিশের ভয় দেখিয়ে আমার ছেলের কাছ থেকে সম পরিমাণ টাকা ব্যাঙ্ক আদায় করে। সে জন্য ছেলেকে তাঁর স্ত্রীর গয়না ও বাড়ি তৈরির জন্য কেনা জমি বিক্রি করতে হয়েছে। ওই ঘটনার পরে, ছেলে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে। শুধু বলত, ‘আমাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে’। ব্রেন স্ট্রোক হওয়ায় কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ জুন ছেলে মারা যায়।’’
তাঁর দাবি, ‘‘ছেলে জানিয়েছিল, সে ওই ব্যাঙ্কের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে কাজ করলেও ৩০ মার্চ পর্যন্ত মাঝেমধ্যে তাকে ক্যাশের দায়িত্ব সামলাতে হয়েছে। সে দিন পর্যন্ত কোনও গণ্ডগোল ছিল না। মার্চ মাসের বেশির ভাগ সময় কোষাধ্যক্ষ শ্যামচাঁদ বন্দ্যোপাধ্যায় ছুটিতে থেকে কর্মজীবনের শেষ দিন ৩১ মার্চ কাজে যোগ দেন। তারপরেই ছেলের নামে অতগুলো টাকা গরমিলের অপবাদ দেওয়া হয়।’’ পুলিশের কাছে তিনি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার দেবদুলাল মিশ্র ও প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ শ্যামচাঁদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ছেলেকে মানসিক নির্যাতন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ করেন।
ব্যাঙ্কের ওই শাখার তৎকালীন ম্যানেজার দেবদুলাল মিশ্র অন্যত্র বদলি হয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ‘‘গরমিল ধরা পড়ার পরে, আমরা ব্যাঙ্কের সিইও-কে গোটা ঘটনা জানাই। তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছিল। সেই কমিটি অভিষেকবাবুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে। কমিটির তদন্তে যা উঠে এসেছে তার ভিত্তিতেই কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ করেছেন।’’ প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ শ্যামচাঁদবাবুর দাবি, ‘‘৩১ মার্চ আমার অবসর গ্রহণের দিন ছিল। তার আগে আমি টানা ছুটিতে ছিলাম। আর গরমিল ধরা পড়েছে ৩ এপ্রিল।’’
ব্যাঙ্কের সিইও নিজামউদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, ‘‘তদন্ত কমিটির রিপোর্ট মোতাবেক সে সময় দায়িত্বে থাকা ক্যাশিয়ারকে টাকা জমা করতে বলা হয়।’’