মাটি ছাড়াই গাছ ফলিয়ে, বিজ্ঞানে শিরোপা জেলার পাঁচ ছাত্রের

মাটি ক্রমশ ঢেকে যাচ্ছে ইট-কাঠে। টলটলে জলে ভরা দিঘী, ফল-ফুল-ছায়ায় ভরা গাছ— সব ফেলে শহরের এক চিতলে ঘরে মধ্যবিত্ত বাঙালিকে সংসার পাততে হচ্ছে অনেক কাল ধরেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৯
Share:

প্রকল্পের রিপোর্ট হাতে ছাত্রেরা। — নিজস্ব চিত্র

মাটি ক্রমশ ঢেকে যাচ্ছে ইট-কাঠে। টলটলে জলে ভরা দিঘী, ফল-ফুল-ছায়ায় ভরা গাছ— সব ফেলে শহরের এক চিতলে ঘরে মধ্যবিত্ত বাঙালিকে সংসার পাততে হচ্ছে অনেক কাল ধরেই। ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাটবাড়িতে দেওয়াল ফুঁড়ে বেড়ে ওঠা মরিয়া বট বা অশ্বত্থও ঘেঁষতে পারে না। কিন্তু চাইলে কংক্রিটের জঙ্গলেও বাগান করা যেতে পারে। মাটিও চাই না। এক ফালি বারান্দায় একটা পাত্রে জল হলেই হল। রামপুরহাট জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনের পাঁচ ছাত্র তাদের প্রকল্পে এমনটাই দেখিয়ে সুযোগ পেয়েছে ন্যাশনাল চিলড্রেন’স সায়েন্স কংগ্রেসের জাতীয় স্তরে যোগ দেওয়ার।

Advertisement

দীপ্তেশ সাহা, অভিজিৎ রায়, কৌস্তভ ঘোষ, তমোঘ্ন চট্টোপাধ্যায় এবং সৌমেন্দু বাগ। প্রত্যেকেই একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। রাজ্য থেকে যে ৩০টি স্কুল জাতীয় স্তরের ওই বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছে তার মধ্যে জেলার একমাত্র জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছে ওরা। প্রকল্পে ওই পাঁচ ছাত্র জানিয়েছে, জীবন বিজ্ঞানে জলের মধ্যে চাষ বা হাইড্রোপোনিক্স বিষয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে প্রথম এই বিষয়ে উৎসাহ তৈরি হয়। স্কুলের শিক্ষক জহিরুল ইসলামের তত্বাবধানে সেপ্টম্বরের শেষ দিকে ‘স্মার্ট লোকালিটি’ নামে একটি প্রকল্প তৈরি করে রাজ্য স্তরের বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় যোগ দেয় তারা। প্রকল্পটির দলপতি ছিল দীপ্তেশ।

এই বছরের ন্যাশনাল চিল়়ড্রেন’স সায়েন্স কংগ্রেসের থিম ছিল ‘স্থিতিশীল উন্নয়নে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন’। তার ‘খাদ্য, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য’ বিভাগে সফল হয়েছে দীপ্তেশদের প্রকল্পটি। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ এবং ২ অক্টোবর কলকাতার বালিগঞ্জ গভর্মেন্ট হাইস্কুলে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতাটি হয়েছিল। রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল থেকে জমা পড়া ২০০টি প্রকল্পের মধ্যে ঠাঁই পেয়েছিল বীরভূমেরও ১৯টি। জেলার মধ্যে একমাত্র রামপুরহাট জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনই জাতীয় স্তরে যোগ দেওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছে।

Advertisement

ওই পাঁচ ছাত্র জানায়, এই প্রকল্পে তারা দেখিয়েছে, পাত্রে জল রেখে তার মধ্যে বিভিন্ন খনিজ দিয়েই গাছ লাগানো যেতে পারে। বাজারে যে সমস্ত সব্জি পাওয়া যায় তার ফলনে, অনেক ক্ষেত্রেই, ক্ষতিকর রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন বড় দোকানে জৈব পদ্ধতিতে ফলানো শাকসব্জি বেশি দামে বিকোয়। কৌস্তভ এবং তমোঘ্ন বলে, ‘‘আমাদেরর প্রকল্পের মাধ্যমে বাড়িতেই বিনা রাসায়নিকে টুকটাক সব্জি ফলিয়ে নেওয়া যায়। একেবারে টাটকা সেই সব্জিতে পুষ্টিগুণ যেমন অনেকটাই বেশি থাকে, খরচও ঢের কম হয়।’’

কী লাগবে এই চাষ করার জন্য? পাঁচ ছাত্র জানায়, মামুলি কিছু সরঞ্জাম হলেই চলবে। একটি পাত্রে জল রাখতে হবে। তার মধ্যে মেশাতে হবে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, ফেরাস সালফেট, কপার সালফেট, জিঙ্ক সালফেট-সহ কিছু খনিজ লবন। অ্যাকোয়ারিয়ামে যে ছোট পাম্প ব্যবহার করা হয় সেগুলি ব্যবহার করে পাত্রের জলে অক্সিজেন চলাচল করানো যাবে।

সম্প্রতি ন্যাশনাল চিল়়ড্রেন’স সায়েন্স কংগ্রেসের বীরভূম জেলা কো-অর্ডিনেটর তারক বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে জাতীয় স্তরে মনোনয়নের খবর পেয়ে উচ্ছসিত দীপ্তেশ, অভিজিতেরা। জাতীয় স্তরে সাফল্যের বিষয়েও তারা আশাবাদী। ন্যাশনাল চিল়়ড্রেন’স সায়েন্স কংগ্রেসের রাজ্যের মুখ্য কো-অর্ডিনেটর অভিজিত বর্ধন জানান, জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতাটির এটি ২৪তম বছর। তাত্বিক বিজ্ঞান শিক্ষাকে যাতে স্কুল স্তরের পড়ুয়ারা প্রায়োগিক কাজে লাগাতে পারে, সে কথা মাথায় রেখেই এই আয়োজন করা হয়। জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনের ছাত্রদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ভবিষ্যতে তাদের আরও বড় কাজ করতে সাহায্য করবে বলে তিনি মনে করেন।

প্রকল্পের তত্বাবধায়ক শিক্ষক জহিরুল ইসলাম জানান, জাতীয় স্তরের জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুতি নেওয়া ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে পাঁচ ছাত্র। এই পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর সুবিধার কথা যাতে আরও সহজ করে বোঝানো যায় তার জন্য অনুশীলন করছে তারা।

ছাত্রদের সাফল্য খুশি স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌরচন্দ্র ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘অনেক দিনের পরিশ্রমের ফল পেয়েছে ওরা। জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতাতেও ওরা সফল হবে আশা করি।’’

বীরভূমের ছাত্রদের এই সাফল্যে রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা চাই ওরা রাজ্যের মুখ উজ্বল করুক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement