Purulia

নতুন ভোটারে বাদ ৪০ শতাংশ

এই লপ্তে ভোটার তালিকায় নতুন ভোটারদের নাম তোলার দিন শেষ হচ্ছে আজ, বুধবার। অথচ, পুরুলিয়া জেলায় চল্লিশ শতাংশ নতুন ভোটার নাম তোলাতে চেয়ে আবেদনই করলেন না।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল 

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২০ ০১:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

এই লপ্তে ভোটার তালিকায় নতুন ভোটারদের নাম তোলার দিন শেষ হচ্ছে আজ, বুধবার। অথচ, পুরুলিয়া জেলায় চল্লিশ শতাংশ নতুন ভোটার নাম তোলাতে চেয়ে আবেদনই করলেন না। এই অবস্থায় কী ভাবে ওই ৪০ শতাংশের নাম ভোটার তালিকায় আনা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি। তাঁদের দাবি, অন্য বার নাম তোলার জন্য কয়েকমাস সময় দেওয়া হয়। কিন্তু এ বার এক মাস সময় দেওয়ায় অনেকেই নাম তোলার সুযোগ পেলেন না।

Advertisement

ভোটার তালিকায় নাম সংযোজন, সংশোধন ও বিয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বুথে-বুথে শিবির চলছে। যদি আজ, বুধবার নাম তোলার শেষ দিন মকর সংক্রান্তি হওয়ায় এই জেলার মানুষজন উৎসবে মাতেন। ফলে, কত জন বুথে নাম তোলাতে যাবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে পুরোদস্তুর। পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মুফতি শামিম শওকত বলেন, ‘‘যে ব্লকগুলিতে ঘাটতি রয়েছে, সেখানে বিশেষ জোর দিতে বলা হয়েছে।’’

নতুন ভোটারদের নাম ভোটার তালিকায় তোলার কাজ গুরুত্ব দিয়েই জেলা প্রশাসনকে করতে বলেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ডিসেম্বরের শেষের দিকে পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই কাজ ভাল ভাবে করতে নির্দেশ দিয়ে যান।

Advertisement

কিন্তু জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট কয়েকটি ব্লক বাদ দিয়ে বেশির ভাগ জায়গাতেই নতুন ভোটারদের নাম তালিকায় তোলার ক্ষেত্রে অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, সোমবার পর্যন্ত জেলায় নাম তোলার ক্ষেত্রে সব থেকে পিছিয়ে বান্দোয়ান ব্লকে। সেখানে মাত্র ২৯.৩১ শতাংশ নতুন ভোটার আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। তার পরেই রয়েছে ঝালদা ১ (৩১.৩৭ শতাংশ), পুরুলিয়া ২ (৩৬.৩৯) ও বরাবাজার (৩৭.৬০) ব্লক। সেখানে সোমবার পর্যন্ত জেলায় নতুন ভোটার হতে চেয়ে আবেদনের গড় ৫৯ শতাংশ।

কেন এই অবস্থা?

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র এ জন্য বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) খামতি রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে।

কী ভাবে কাজ হওয়ার কথা? বিডিওদের একাংশ জানাচ্ছেন, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ১৮ বছর বয়স কাদের হচ্ছে, তা জানতে বিএলওদের সংশ্লিষ্ট বুথের বাড়ি-বাড়ি ঘুরে সমীক্ষা করে লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করার কথা। সেই সময়েই যোগ্যদের বাড়িতে ৬ নম্বর ফর্ম বা আবেদনপত্র দিয়ে আসতে বলা হয়। তার পরে আবেদনপত্র সংগ্রহও করা হতে পারে, কিংবা বুথে শিবির চলার সময়ে তা জমা করতে বলা হয়। পরে সেই আবেদনপত্র যাচাই করে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে ‘আপলোড’ করা হয়।

যদিও প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছেন, কিছু কিছু জায়গায় বিএলও এবং তাঁর সঙ্গীরা বুথে নিয়মিত বসেননি। আবার বসলেও খুব অল্প সময়ে বসেছেন। আবেদনকারীদেরও অনেকের অভিযোগ, সকালের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে না বসে দুপুরে বা বিকেলে বসা হয়েছে কিছু জায়গায়। আবার অনেক জায়গায় সে ভাবে প্রচারও করা হয়নি। তাঁরা এ জন্য প্রশাসনের উপরতলায় নজরদারির খামতির অভিযোগ তুলেছেন।

বিডিও (রঘুনাথপুর ২) মৃণ্ময় মণ্ডল ও বিডিও (নিতুড়িয়া) অজয়কুমার সামন্তের দাবি, ‘‘বিএলও এবং সুপারভাইজ়ারদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করার পরেই প্রত্যাশিত সংখ্যায় নতুন ভোটারদের নাম তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।”

আবার ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে গত কয়েক দশকে প্রশাসনের সমান্তরাল যে ভাবে রাজনৈতিক দলগুলি এলাকায় ঘুরে ঘুরে প্রচারের কাজ করেন, এ বার সেটাও তেমন দেখা যায়নি বলে অনেকে জানাচ্ছেন। বিশেষত বামদলগুলিই এ ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকত। গত কয়েক বছর শাসকদল তৃণমূল সেই ভূমিকা নিলেও এ বারে তাদের মধ্যেও খামতি রয়েছে বলে কিছু কিছু এলাকাবাসীর অভিযোগ।

তৃণমূলের জেলা সম্পাদক নবেন্দু মাহালির স্বীকারোক্তি, ‘‘বুথ লেভেল এজেন্ট ঠিক করে, তাঁদের মাধ্যমে নতুন ভোটারদের নাম তোলার কাজে কিছু কিছু জায়গায় খামতি রয়েছে ঠিকই। তবে সময় অল্প দেওয়াতেই সমস্যা হয়েছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের বক্তব্য, ‘‘নতুন ভোটারদের নাম নথিভুক্ত করানোর জন্য আমরা সংগঠন ভাবে সমস্ত কাজ করেছি। কিন্তু প্রশাসনের একাংশের গা ছাড়া মনোভাবের জন্য এই খামতি।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘নতুন ভোটারদের নাম তোলার জন্য আমাদের পক্ষে যা করণীয়, তা কর্মীরা করেছেন। কিন্তু প্রশাসনের গাফিলতিতে বহু নতুন ভোটারের নাম তোলা বাকি রয়ে গিয়েছে।’’ যদিও জেলা প্রশাসন এই গাফিলতির অভিযোগ মানতে নারাজ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement