অল্প স্বল্প নয়। অন্তত ১০০টি ট্রেনে লুঠপাটে যুক্ত তারা। জয়চণ্ডী স্টেশনে চলন্ত ট্রেন থেকে চার দুষ্কৃতীকে ধরে জেরা করার পরে এমনই দাবি করছে আদ্রার রেলপুলিশ ও আরপিএফ। ওই দুষ্কৃতী চক্র শুধু এ রাজ্যই নয়, আশপাশের অন্তত আরও চারটি রাজ্যে বহু ট্রেন ডাকাতির সঙ্গে তারা যুক্ত বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা।
রবিবার ভোরে জয়চণ্ডী স্টেশনে পটনা-বিলাসপুর এক্সপ্রেস থেকে চার দুষ্কৃতীকে ধরে চার দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পায় রেলপুলিশ। তাদের দাবি, জেরায় ধৃতেরা তদন্তকারীদের কাছে স্বীকার করেছে, গত আট-নয় বছর ধরে ওডিশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ট্রেনে লুঠপাট চালিয়েছে তারা। তবে মূলত হাওড়া থেকে ভুবনেশ্বরগামী এক্সপ্রেস ট্রেনগুলির দিকেই তাদের নজর বেশি ছিল। ওই রুটেই বেশির ভাগ লুঠপাট চালিয়েছে তারা।
রেলপুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা ওই চার জনকে জেরা করে ট্রেনে হওয়া বহু অপরাধ সম্পর্কে বিশদে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। গত আট-দশ বছরে কমপক্ষে একশোর বেশি অপরাধে যুক্ত তারা।’’ তবে ওই দুষ্কৃতী চক্রের বাকি দুই সদস্যের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। ধৃতেদের জেরা করে তাদের হদিস পাওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সূত্রের খবর, পটনা-বিলাসপুর এক্সপ্রেসে ছ’জন দুষ্কৃতী টাটা থেকে পটনা যাচ্ছে বলে খবর আসে আরপিএফের কাছে। সেই মতো রবিবার ভোরে আরপিএফের আদ্রা, আসানসোলের ওসি-সহ আদ্রার রেলপুলিশের ওসি মিলিত ভাবে অভিযান চালান ওই ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায়। তখনই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দলটির পান্ডা বিহারের মুঙ্গেরের পাপ্পু যাদব-সহ মহম্মদ এসরামূল, মহম্মদ ইমতিয়াজ ও ঝাড়খণ্ডের বোকারোর আইনুল হক। তাদের কাছ থেকে দু’টি পাইপগান, ছ’রাউন্ড কার্তুজ ও দু’টি ভোজালি উদ্ধার করা হয়। তবে ওই দলের বাকি দু’জন পালিয়ে যায়।
ধৃতদের সে দিনই রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হয়। হেফাজতে নিয়ে জেরার পরে তথ্য পেয়ে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন রেলপুলিশ ও আরপিএফের কর্তারা। রেল পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রথমে ভাবা হয়েছিল ট্রেনে ছোটখাটো মাপের অপরাধের সাথে জড়িত ওই দলটি। কিন্তু জেরায় জানা যাচ্ছে, অন্তত চার-পাঁচটি রাজ্যে দূরপাল্লার ট্রেনে লুঠ, ডাকাতি, চুরির বহু ঘটনা ঘটিয়েছে ওই দুষ্কৃতীরা।” বিশেষ করে সংরক্ষিত কামরায় আসন সংরক্ষণ করে যাত্রী সেজে ট্রেনে উঠে যে ভাবে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, সোনা লুঠ ও চুরি করত, সেই ধরন দেখে তাঁরা অবাক।
রেলপুলিশ সূত্রের খবর, বিভিন্ন ট্রেনের আসন সংরক্ষণের ২০টি টিকিট ওই চার জনের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে। রবিবার টাটা থেকে আসানসোল পর্যন্ত পটনা-বিলাসপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের সংরক্ষিত কামরার টিকিট কেটেছিল তারা। পুলিশের দাবি, জেরায় তারা জানিয়েছে, সংরক্ষিত কামরায় টিকিট কেটে যাত্রী সেজে ওঠার পরে সুযোগ বুঝে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, গয়না লুঠ করত। মূলত গভীর রাতে ও ভোরের দিকে যাত্রীরা ঘুমে আচ্ছন্ন থাকলে, সেই সময়ে চুরি করত তারা। বাধা পেলে বের করত পাইপগান ও ভোজালি। লুঠপাট সেরে গন্ত্যব্যের আগেই কোনও স্টেশনে নেমে পড়ত। বেশ কয়েকদিনের জন্য আশ্রয় নিত বড় হোটেলে। সেখানে কয়েকদিন কাটিয়ে ফের পরের অপারেশনে নামত তারা।
ধৃতদের কাছ থেকে ঝাড়খণ্ডের টাটা, আসানসোল, ওডিশার বালেশ্বর-সহ অন্যান্য কয়েকটি জায়গার বড়মাপের হোটেলের বিল পেয়েছে রেলপুলিশ।