আট মাস ধরে যে বৃষ্টির অপেক্ষায় তিনি ছিলেন, সেই ঝড়-বৃষ্টিতেই প্রাণ গেল তাঁর। বৃষ্টির জল ধরে রাখতে জমির আল বাঁধতে গিয়ে বজ্রাঘাতে মারা গেলেন বাঘমুণ্ডি থানার টিকরটাঁড় গ্রামের যুবক রাজেশ মুর্মু (২৩)। তাঁর সঙ্গেই শনিবার ও রবিবার দু’দিনে দুই জেলায় বাজ পড়ে মারা গেলেন আরও কয়েকজন।
গত অগস্টের পর থেকে পুরুলিয়া সে ভাবে বৃষ্টির দেখা পায়নি। এই জেলার একটা বিরাট অংশের চাষবাস এখনও বৃষ্টি-নির্ভর। বৃষ্টির অভাবে পুরুলিয়ায় আমন চাষ মার খায়। খরা ঘোষণা করা হয় জেলার প্রায় সমস্ত মৌজাকে। এখন বোরো চাষ চলছে। কিন্তু বৃষ্টির জন্য সেই হাপিত্যেশ ছিলই। তাপ চড়লেও বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় চাষিরা বোরোতেও ফের লোকসানের মুখ দেখবে বলে আশঙ্কা করছিলেন। এমনই পরিস্থিতিতে শনিবার বিকেলে আকাশ কালো করে ধেয়ে আসে ঝড়। সঙ্গে বাজ পড়া শুরু হয়। নামে তুমুল বৃষ্টি।
রাজেশের বাবা ভবতারণ মুর্মু জানান, এ বার সে ভাবে বৃষ্টি হয়নি। জমি শুকিয়ে ছিল। চাষবাস নিয়ে সবাই খুব চিন্তায়। তাঁর কথায়, ‘‘তাই শনিবার বিকেলে আকাশ কালো করে ঝড়বৃষ্টি শুরু হতেই ছেলে কোদাল নিয়ে মাঠে গিয়েছিল। যাওয়ার সময় বলেছিল, আল বাঁধিয়ে দিয়ে আসছি, যাতে জল না বেরিয়ে যায়। ছেলে বেরিয়ে যাওয়ার একটু পরেই প্রচণ্ড শব্দে কাছেপিছে কোথাও বাজ পড়ে। বেশ চিন্তায় ছিলাম ওর কিছু হল না তো! একটু পরেই খবর পাই আমার ছেলে জমিতে পড়ে রয়েছে। এমনটা হবে কে জানত?’’ গ্রামবাসী রাজেশকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
বজ্রাঘাতে দুই জেলায় কার্যত মৃত্যু-মিছিল লেগে রয়েছে। রবিবার বিকেলে পুরুলিয়ার বরাবাজারের ধডাঙা গ্রামে গাজনের মেলা বসেছিল। প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। সেই সময় অনেকেই শিব মন্দিরের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।
হঠাৎ বাজ পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তারিণী গোপ (৩২) নামে এক যুবকের। ওই গ্রামেই তাঁর বাড়ি। ভিড়ের মধ্যে থাকা আরও পাঁচ জন আহত হন। বরাবাজার ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, আহতদের মধ্যে লালমোহন সহিস এবং বাবলু গোপ নামে দুই যুবককে গুরুতর জখম অবস্থায় পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বাকিদের ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই চিকিৎসা চলছে।
এ দিনই দুপুরে পুরুলিয়া মফস্সল থানার ভবানীপুর গ্রামে কয়েকজন যুবক বৃষ্টির মধ্যে একটি গাছের নীচে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সময় বাজ পড়লে চারজন চোট পান।
তাঁদের নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে সাহেব গড়াই (২০) নামে এক যুবককে মৃত বলে জানান। বাকি তিনজনকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে।
অন্যদিকে, শনিবার সন্ধ্যায় মোটরবাইক চালিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে বাজ পড়ে মৃত্যু হয় এক যুবকের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম মধুসূদন বাগ (২৩)। বাড়ি ইঁদপুর থানার আমড্যাংরা গ্রামে। শনিবার সন্ধ্যায় মোটরবাইক চালিয়ে ওই যুবক চরাবাইদ গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছিলেন। ধরমপুর থেকে আড়ালডিহি যাওয়ার রাস্তায় ভুলারখাদ এলাকায় বাজ পড়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে।