শুক্রবার সিউড়ি আদালত চত্বরে বিশ্বভারতীর আধিকারিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
বিশ্বভারতীর প্রাক্তন সহ কর্মসচিব প্রশান্ত মেশরামের বিরুদ্ধে জাতিবিদ্বেষমূলক মন্তব্যের মামলায় শর্তসাপেক্ষে জামিন পেলেন বিশ্বভারতীর তিন আধিকারিক।
এই মামলায় সিউড়ির জেলা আদালতে শুক্রবার সশরীর হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, সহ কর্মসচিব তন্ময় নাগ এবং অভ্যন্তরীণ অডিট অফিসার প্রশান্ত ঘোষের। এ দিন উপাচার্য হাজিরা না দিলেও বাকি তিন আধিকারিক এসেছিলেন আদালতে। তাঁদের জামিন দেওয়া হলেও আদালতের নির্দেশ, তাঁরা আদালতের নির্দেশ ছাড়া কোনও ভাবেই রাজ্যের বাইরে যেতে পারবেন না এবং এই মামলার সঙ্গে সংযুক্ত কোনও প্রমাণ বিকৃত করতে পারবেন না।
হাজিরা না দেওয়ায় এই মামলায় উপাচার্যের জামিন নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। বিশ্বভারতীর আইনজীবীরা জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই আসতে পারেননি উপাচার্য। হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় কোনও মেডিকেল সার্টিফিকেটও জমা দেওয়া যায়নি বলে জানান বিশ্বভারতীর আইনজীবী সুচরিতা বিশ্বাস। আগামী ২ ডিসেম্বর উপাচার্যের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমা দিতে বলা হয়েছে এবং তাঁকে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে আইনজীবী মহল থেকে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, ওই চার জনের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। আগামী ৫ ডিসেম্বর সেই আবেদনের শুনানি হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জুলাই প্রশান্ত মেশরামের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বিশ্বভারতীর এই প্রাক্তন আধিকারিক অভিযোগ করেন, ওড়িশার একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়া সত্ত্বেও তাঁকে সেখানে যেতে বাধা দেন উপাচার্য। এমনকি একটি বৈঠকে সকলের সামনে তাঁর উদ্দেশে জাতিবিদ্বেষমূলক কটূক্তিও করেন। এই নিয়ে জাতীয় তফশিলি জাতি ও জনজাতি কমিশনের কাছে অভিযোগ জানান তিনি। শান্তিনিকেতন থানাতেও লিখিত অভিযোগ করেন প্রশান্ত। জেলা পুলিশের ডিএসপি (ডিইবি) স্বপন কুমার চক্রবর্তীকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ৩১ অগস্ট উপাচার্য সহ মোট চার জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়ে জেলা আদালতে। তার ভিত্তিতেই এ দিন আদালতে সশরীর হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল চার জনকে।
অভিযোগকারীর আইনজীবী রঞ্জিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “যাঁরা এ দিন হাজিরা দিয়েছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে হাই কোর্টের রক্ষাকবচ থাকায় নানা শর্তসাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। তবে এ দিন বিশ্বভারতীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আদালতে প্রশান্ত মেশরামের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগকে তুলে ধরে মামলার অভিমুখ পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছে। এই সবই ভিত্তিহীন।’’ তাঁর দাবি, এই মামলাটি জাতিবিদ্বেষমূলক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে। এর সঙ্গে অন্যান্য অভিযোগের কোনও সম্পর্ক নেই।
বিশ্বভারতীর আইনজীবী সুচরিতা বলেন, “পুলিশ পাখার হাওয়া খেতে খেতে একটা চার্জশিট বানিয়েছে। তাতে অভিযোগ প্রমাণিত হয় না। এ দিন তিন জন আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। তাঁরা জামিন পেয়েছেন। উপাচার্যের হাজিরার জন্য আগামী একটি দিন ধার্য হয়েছে। এর বেশি কিছুই হয়নি।’’