অসুস্থ: হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
উপসর্গ পায়খানা, বমি। এক বেলার মধ্য পেটের রোগে আক্রান্ত দুই শতাধিক রোগীকে পাঠানো হল হাসপাতালে। আক্রান্তদের মধ্যে মধ্যে সিংহ ভাগই শিশু।
সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে সিউড়ি ২ ব্লকের অবিনাশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুবিরপুর গ্রাম ও লাগোয়া এলাকায় আদাবাসী পাড়াগুলিতে। পরিস্থিতি এতটা উদ্বেগজনক হয়ে পড়ে, সোমবার বিকাল থেকে আক্রান্তদের খান দশেক অ্যাম্বুল্যান্স ও ভাড়ার গাড়িতে চাপিয়ে সিউড়ি জেলা হাসপাতাল, স্থানীয় সুলতানপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এত সংখ্যক আক্রান্তের খবরে রীতিমতো চমকে গিয়েছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতরও। সন্ধ্যাবেলায় পাঁচ চিকৎসককে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি। তৎপরতার সঙ্গে চিকিৎসকেরা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের দেখভাল শুরু করেন। মঙ্গলবার পরিস্থিতি কিছুটা ভাল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার ও সোমবার কবিরপুর বড়ডাঙায় দু’দিনের একটি ফুটবল প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল। আয়োজক স্থানীয় আদিবাসী যুবকেরা। স্থানীয় কিসান বেঁশরা, রফিকুল শেখরা বলছেন, বিকালে খেলা শেষ হওয়ার পরে থেকে খেলা দেখতে যাওয়া ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যেই প্রথম উপসর্গ দেখা দেয়। নেতিয়ে পড়ে ছোট টুডু, সুনিরাম টুডু, রাজু মারডি, পরেশ মূর্মরা। ঘন্টা খানেকের মধ্যে সেটা দ্রুত ছড়াতে থাকে।
সন্ধ্যার মধ্যে শুধু ওই পাড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। একই উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত হতে থাকে পাশের স্কুল পাড়া, শেওড়াপাড়া, শিবেরবাঁধ ও বাদিলপুরের বাচ্চারা। বড়রাও কয়েকজন আক্রান্ত হন। খবর পেয়েই এলাকায় ছুটে আসেন জনপ্রতিনিধিরা। এলাকায় পৌঁছে যান স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তাপসকুমার দাস। তৃণমূল ব্লক সভাপতি নরুল ইসলামরা।
স্থানীয় মানুষের সহায়তায় দ্রুত আক্রান্তদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তাঁরা। খবর যায় জেলা স্বাস্থ্য দফতরেও।
স্থানীয়রা বলছেন, খেলার মাঠে বিক্রিত কোনও আঢাকা খাবার খেয়েই এই পরিণাম। সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়িও বলেন, আমাদেরও আপাতভাবে তেমনটাই মনে হচ্ছে। সিএমওএইচ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এলাকা থেকে খবর পেয়েই ঘটনাস্থালে যাই। সঙ্গে ছিলেন চিকিৎসকেরা। একই সঙ্গে জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের দায়িত্ব দিয়ে সিউড়ি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সতর্ক করা হয় অন্যান্য হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও। এখন পরিস্থিতি স্থিতিশীল।’’
সিউড়ি জেলা হাসপাতালেই প্রায় ৭০জন রোগী ভর্তি বলে জানা গিয়েছে। তাদের প্রায় সকলেরই বমি উপসর্গ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে কিছু জনের এখনও পায়খানা বন্ধ হয়নি। হাসপাতালে ভর্তি কুবিরপুর স্কুল পাড়ার বছর আটেকের সুনীল সরেন, অনীল হেমব্রমের মা-রাও সেই কথাই জানালেন। সুনীলের মা সরু সরেন এবং অনিলের মা অনাপি হেমব্রমরা বলছেন, ‘‘এত জন একসঙ্গে অসুস্থ হয়েছে দেখে আমরা খুব ভয় পেয় গিয়েছিলাম। এখন ওরা কিছুটা হলেও ভাল।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবারও ডেপুটি সিএমওএইচ শকুন্তলা সরকার এলাকা পরিদর্শন করেন। ছিলেন অন্যান্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে গঠিত মেডিক্যাল টিম।
এ দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান প্রবেশনারি প্রিয়ডের জন্য সিউড়ি ২ ব্লকের বিডিও-র পদে থাকা আইএএস অফিসার গন্ধর্ব রাঠোর ও ব্লক প্রশাসনের অন্য কর্তারা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, খাবার থেকে সমস্যা হয়েছে এমনটা মনে করা হলেও পানীয় জলের বিষযটি গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর।
সোমবার বিকাল থেকে বোলপুর এ সিউড়ি পুরসভা থেকে মোট ৪টি জলের ট্যাঙ্কার পাঠানো হয়েছে এলাকায়।
মঙ্গলবার থেকে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরে থেকে পানীয় জলের পাউচ দেওয়া হচ্ছে সংক্রামিত এলাকায়। উদ্দেশ্য পরিস্রুত পানীয় জলের জোগান অক্ষুণ্ণ রাখা।