বোমাবাজির ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে শনিবারও সাঁইথিয়ার কল্যাণপুর ছিল থমথমে। দৃশ্যতই পুরুষ শূন্য। ঘটনার পরে থেকেই গ্রামের পথে পুলিশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে ওই রাত্রেই গ্রামের দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম জিয়ারুল শেখ ও শেখ গেনি। তাঁদের এ দিন সিউড়ি আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃত দু’জনকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। আগামী ১৮ নভেম্বর তাঁদের ফের আদালতে তোলা হবে।
পুলিশ সূত্রে খবর, বোমাবাজির ঘটনায় যুক্ত সন্দেহে গ্রাম ও এলাকার অনেকের নামে পুলিশ একটি সুয়োমটো মামলা দায়ের করেছে। বোমাবাজি, মারামারি-সহ একাধিক ধারা দেওয়া হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় গ্রামে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। এ দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলেও দাবি করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল থেকে সাঁইথিয়ার ভ্রমরকোল অঞ্চলের কল্যাণপুর গ্রামে শাসক দলের দুই যুযুধান শেখ হান্নান ও মর্তুজা শেখদের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক বোমাবাজি হয়। কয়েকটি বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। বোমায় কয়েকজন আহত হয়। এ দিন হান্নানের দাবি, ‘‘পুলিশ দু’জন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করেছে। যাঁরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। তাঁদের অপরাধ, তাঁদের কোনও আত্মীয় আমাদের সঙ্গে তৃণমূল করে।’’ মর্তুজা বলেন, ‘‘আমি তো আগেই বলেছিলাম পুলিশ তদন্ত করলেই সব পেয়ে যাবে, কারা বোমাবাজি করেছে। আমি গ্রামে থাকি না, এবং ওই ঘটনার সঙ্গে কোনওভাবে যুক্ত নই।’’
গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের টয়লেটের দেওয়ালেও বোম পড়ে। স্কুলের শিক্ষকরা সময় মতো স্কুল খুললেও আতঙ্কিত পড়ুয়ারা স্কুল আসেনি। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার থেকেই থমথমে গ্রাম। প্রধান শিক্ষক শুভ্রকান্তি মণ্ডল বলেন, ‘‘এ দিনও সময়মতো স্কুল খোলা হয়। কিন্তু পড়ুয়ারা না আসায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে ১১৭ জন পড়ুয়ার মধ্যে ২২-২৩ জন পড়ুয়াকে স্কুলে আনা সম্ভব হয়। বেলা বারোটা পর্যন্ত সেই সংখ্যা বেড়ে ৫০ হয়। তবে গড় হাজিরার চেয়ে প্রায় ৩৫-৪০টা কম। বোমাবাজির কারণে গত শুক্রবার স্কুলে দুপুরের রান্না হয়নি। এ দিন অবশ্য উপস্থিত পড়ুয়াদের জন্য রান্না চেপেছে।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, যে দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে তাদের একজন জিয়ারুল শেখের বাড়ি একই থানার কানাইপুর গ্রামে। দীর্ঘ দিন থেকে তিনি ঘরজামাই হিসাবে এই গ্রামেই থাকেন। তাঁর স্ত্রী আনেসা বিবির দাবি, ‘‘আমার স্বামী এই ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নয়। একটা ছোটো মুদির দোকান ও চাষাবাদ করে কোনও রকমে সংসার চালায়। আমরা কোনওরকম সাতে পাঁচে থাকি না। স্বামীকে মিথ্যে মামলায় ধরা হয়েছে।’’ প্রায় একই দাবি করে শেখ গেনির ছেলে হিরো বলেন, ‘‘আমার বাবার প্রায় ৫৫-৫৬ বছর বয়স। বাবা বা আমাদের পরিবারের কেউ কোনও ঝামেলায় থাকি না। চাষবাস করে কোনওরকমে সংসার চালায়। গ্রাম বা এলাকায় খোঁজ খবর করলেই আমাদের সম্পর্কে পুলিশ বা সকলে জানতে পারবেন। শুক্রবার ঘটনার পরে অনেকে গ্রামে ছেড়ে চলে গেলেও আমরা গ্রামেই থেকে যাই।’’
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি প্রশান্ত সাধু বলেন, ‘‘বোমাবাজি সঙ্গে দলের কেউ যুক্ত নয়।’’
এ দিন জেলা পুলিশের এক কর্তা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জানান, হান্নান, মর্তুজা-সহ ওই এলাকার ৬০ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাসি চলছে।