শুরু পৌষ উৎসবের। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
শনিবার রাতের বৈতালিকে ‘আজি যত তারা তব আকাশে’ এবং রবিবার ভোরের বৈতালিকের গানের পরে সকাল সাড়ে সাতটায় ছাতিমতলায় উপাসনার মধ্যে দিয়ে শুরু হল ১২৪ তম পৌষমেলা। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীক্ষার ১৭৫ তম সাংবাৎসরিক উৎসবে আচার্যের আসনে বসেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। ছিলেন রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ তথা রবীন্দ্র বংশধর সুপ্রিয় ঠাকুর, বিশ্বভারতীর সংস্কৃত, পালি ও প্রাকৃত বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপিকা কল্পিকা মুখোপাধ্যায়, বিশ্বভারতীর শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীবৃন্দ, ছাত্রছাত্রী এবং অগণিত দেশি-বিদেশি পর্যটক।
রবিবার ছাতিমতলায় পৌষ উৎসবের সূচনা অনুষ্ঠানের পরে মেলা প্রাঙ্গণে প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগের স্টলে কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়। কলাভবনের প্রথম যুগের ছাত্র প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গ্লিমপস অফ এনসিয়েন্ট ইন্ডিয়া’ প্রকাশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী না হয়েও বিশ্বভারতীর আচার্য হয়েছিলেন উমাশঙ্কর যোশী। তাঁর লেখা ২০টি প্রবন্ধ নিয়ে ‘রবীন্দ্রনাথ: কালেকশন অফ এসে’ প্রকাশিত হয়। এ ছাড়াও ‘রবীন্দ্রসপ্তাহ ভাষণ’ এবং ‘বিশ্বভারতী’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। বিশ্বভারতী কর্মিসভার উদ্যোগে ‘সোনার তরী’ প্রকাশিত হয়। সেখানে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক, আশ্রমিক থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রীদের লেখাও স্থান পেয়েছে।
বিশ্বভারতী পেনসনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ‘অবসর’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে এ দিন। পাঠভবনের অধ্যাপক কিশোর ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘খোয়াই’ পত্রিকার ৩৪ তম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ‘ভানুসিংহ’ স্টলে। শৈলেন মিশ্রের লেখা ‘শান্তিনিকেতনে অচ্যুতানন্দ’ নামের একটি বইও প্রকাশিত হয়। লেখক জানান, অচ্যুতানন্দ মিশ্র তাঁর পূর্বপুরুষ। বিশ্বভারতীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন যে তিন জন বেদিতে বসেছিলেন তাঁর মধ্যে এক জন ছিলেন অচ্যুতানন্দ মিশ্র। তাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পর্ক সহ শান্তিনিকেতন সম্পর্কিত একাধিক তথ্য রয়েছে বইটিতে।
‘বিশ্বভারতী ভাবনার শতবর্ষ’ নামক রবীন্দ্রভবনের প্রদর্শনীতে এক দিকে যেমন বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার নানা ইতিহাস উঠে এসেছে। অন্য দিকে, বিভিন্ন সময় ক্ষিতিমোহন সেন, ভূপেন্দ্রনাথ সান্যাল, কুঞ্জলাল ঘোষ, সন্তোষচন্দ্র মজুমদারকে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠির অংশ তুলে ধরা হয়েছে। শতবর্ষ উপলক্ষে বিশেষ একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে কলাভবন। এ ছাড়াও সমাজকর্ম বিভাগ, সঙ্গীতভবন, শারীরশিক্ষা বিভাগ, জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগ সহ বেশ কয়েক’টি বিভাগ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছে।
প্রথম দিন থেকেই পৌষমেলায় পর্যটক সমাগম হয়েছে। জিনিস কেনা থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া, সব জায়গাতেই পর্যটকদের ভিড়। জোরদার নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে বলে দাবি পুলিশের। মেলায় দূষণ রুখতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতি মুহূর্তে ঘোষণা করেছেন বিশ্বভারতীর এনএসএস পড়ুয়ারা। সন্ধ্যায় ছাতিমতলা এবং উদয়ন গৃহে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।