নাম জড়াল শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর

১০০ দিনের কাজে সংঘর্ষ দুবরাজপুরে

অভিযোগ ছিল দু’টি। প্রথমত ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে আইন ভেঙে এলাকার একটি পুকুর সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত। গ্রামবাসীদের দ্বিতীয় অভিযোগ ছিল, এলাকার জবকার্ড হোল্ডার দিয়ে নয়,  কাজ হচ্ছিল মাটি কাটার যন্ত্র ব্যবহার করে। এই দুই অভিযোগ ঘিরেই  রবিবার সংঘর্ষ বাধল দুবরাজপুরের জালালপুর গ্রামে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১৩
Share:

গোলমাল: জেসিবি দিয়ে কাটা হচ্ছে পুকুর। নিজস্ব চিত্র

অভিযোগ ছিল দু’টি। প্রথমত ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে আইন ভেঙে এলাকার একটি পুকুর সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত। গ্রামবাসীদের দ্বিতীয় অভিযোগ ছিল, এলাকার জবকার্ড হোল্ডার দিয়ে নয়, কাজ হচ্ছিল মাটি কাটার যন্ত্র ব্যবহার করে। এই দুই অভিযোগ ঘিরেই রবিবার সংঘর্ষ বাধল দুবরাজপুরের জালালপুর গ্রামে। ঘটনায় জখম হয়েছেন জনা চারেক। তাঁদের মধ্যে দুজনকে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসার পরে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এই ঘটনার পিছনেও শাসকদলের দু’টি গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব রয়েছে। সে জন্যই বিষয়টি সামনে এসেছে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় গিয়েছিল। তবে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ হয়েছে, এমন খবর নেই। বিডিও (দুবারজপুর) মুজিবর রহমান বলছেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।’’ একই দাবি করেছে পুলিশও।

এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, যখন বছরে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত মালিকাধীন পুকুর সংস্কারে নিষেধাজ্ঞা ছিল না, ২০১১-১২ অর্থবর্ষের সেই সময় হেতমপুর পঞ্চায়েতের জানালপুর গ্রামের কালীবাঁধ নামে একটি পুকুর সংস্কারের কাজ হয়েছিল। এখন ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে পুকুর সংস্কারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তা সত্ত্বেও ওই একই পুকুরের নাম বদলে

Advertisement

কালীডাঙা নতুন পুকুর নামে সম্প্রতি সংস্কারকাজ শুরু করে হেতমপুর পঞ্চায়েত। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েতের নির্দেশে একই বোর্ডের দু’দিকে একই পুকুরের দু’রকম নাম দেওয়া হয়েছে। এর পিছনে আসল উদ্দেশ্য ‘পুকুর চুরি’ বলেই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। নতুন করে কাজের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৪ লক্ষ ৪৯ হাজার ৭২০ টাকা। কর্মদিবস সৃষ্টি

হওয়ার কথা ২১৮৮টি।

বিষয়টি নিয়ে প্রথম থেকে এলাকাবাসীর আপত্তি থাকলেও গ্রামের মানুষ কাজ পাবেন বলে বিরোধ এত দিন সামনে আসে নি। কিন্তু, রবিবার সকালে সেই পুকুর সংস্কারে যখন যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছিল, তখন আপত্তি তোলেন বেশ কিছু গ্রামবাসী। তার পরেই সংঘর্ষ বাধে। অভিযোগ, হেতমপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মহম্মদ জসিমউদ্দিনের লোকেরা বাধা দিতে আসা লোকেদের মাথা ফাটিয়ে দেয়, হাতও ভেঙে দেয়। মারধরে জখম শেখ নঈম ও শেখ জাহির বলেন, ‘‘একে এমন অন্যায় চলছে। এত টাকা বরাদ্দের কাজ কেন গ্রামের মানুষ পাবেন না, যন্ত্র দিয়ে করানো হবে—এই প্রশ্ন তুলতে গিয়েই মার খেলাম।’’

তৃণমূল এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, হেতমপুর পঞ্চায়েতের আগের তৃণমূল প্রধানের প্রধান স্বামী মঙ্গল দাসের সঙ্গে বর্তমান প্রধান জসিমউদ্দিনের মতপার্থক্য রয়েছে। সেই জন্যই

বিষয়টি সামনে এল। বর্তমানে দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ মঙ্গল দাসের বক্তব্য, ‘‘বর্তমান প্রধানের বিরুদ্ধে মেশিন দিয়ে মাটি কাটানোর অভিযোগ একদম ঠিক। অনেক এলাকাতেই উনি মেশিন দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। আমি বারণ করলেও কথা শোনেন না।’’ এ দিন যাঁরা যন্ত্রে মাটি কাটার প্রতিবাদ করেছেন, তাঁরা মঙ্গলবাবুর অনুগামী বলেই এলাকায় পরিচিত।

এ দিনের ঘটনার বিন্দু বিসর্গ তিনি জানেন না দাবি করেছেন হেতমপুর পঞ্চায়েতের প্রধান জসিমউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার লোক কাজ চেয়েছে। মাস্টার রোল তৈরি হয়েছে। কাজ হচ্ছিল। কেন মেশিন দিয়ে কাজ হচ্ছিল, কী নিয়ে

ঝামেলা, আমি কিছুই জানি না।’’ মঙ্গল দাসের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। তা ছাড়া, আমার লোক ওঁর লোক বলে কিছু হয় না। গোটা পঞ্চায়েতে এলাকার বাসিন্দারাই আমার

লোক। আমি খোঁজ নিচ্ছি, জালালপুরে ঠিক কী হয়েছিল।’’

কিন্তু, কেন একই পুকুর সংস্কারের কাজ দ্বিতীয়বার হচ্ছে, সে প্রশ্নে প্রধানের জবাব, ‘‘এটা টেকনিক্যাল বিষয়। অন্যেরা দেখে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement