ভরসা: রোগিনীর সঙ্গে চিকিৎসক পবন মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
পরীক্ষাতেই ধরা পড়েছিল, বছর সত্তরের বৃদ্ধার পিত্তথলি ও নালিতে জমে রয়েছে প্রচুর পাথর। কিন্তু সংখ্যাটা যে ১,১১৫, অস্ত্রোপচারের আগে আঁচ করতে পারেননি চিকিৎসকও।
পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের এই অস্ত্রোপচারের ঘটনায় অবাক হয়ে যাচ্ছেন? তাহলে জেনে রাখা ভাল, দক্ষিণ কলকাতার একটি নার্সিংহোমে বছর আড়াই আগে এক মহিলার পিত্তথলি থেকে বেরিয়েছিল ১১,৯৫০টি পাথর! যা রেকর্ড। সেই অস্ত্রোপচার করেছিলেন শল্য চিকিৎসক মাখনলাল সাহা। তিনিও পুরুলিয়ার বৃদ্ধার অস্ত্রোপচার করা দুই শল্য চিকিৎসক পবনকুমার মণ্ডল ও স্নেহাংশু কলার প্রশংসাই করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোর বেশ উন্নতি হয়েছে। কয়েকজন চিকিৎসকও উদ্যোগী হয়ে জটিল অস্ত্রোপচার করছেন। পবনকে চিনি। ভাল কাজ করছেন।’’
পুরুলিয়া মফস্সল থানার শিরকা গ্রামের বৃদ্ধা মণি কুমার বছর দুয়েক ধরে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা করাতে গিয়ে জানতে পেরেছিলেন, তাঁর পিত্তথলিতে পাথর জমেছে। কিন্তু বয়স বেশি হওয়ায় এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকায় জেলায় এই অস্ত্রোপচার সম্ভব নয় বলে তাঁকে অনেকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু অভাবের সংসারে বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য ছিল না। যন্ত্রণা চেপেই দিন কাটাচ্ছিলেন। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি খবর পেয়ে তিনি পবনবাবুর কাছে যান। তিনি এমআরসিপি (ম্যাগনেটিক রেসোন্যান্স কোল্যানজিও প্যানক্রিয়াটোগ্রাফি) পরীক্ষা করাতে বলেন। তাতেই ধরা পড়ে মণিদেবীর পিত্তথলিতে প্রচুর পাথর জমে রয়েছে। তবে পবনবাবুকে উদ্বেগে ফেলে পিত্তনালিতে পাথরের উপস্থিতি।
পবনবাবু বলেন, ‘‘যা অবস্থা, বেশি দিন ফেলে রাখলেও রোগ আরও জটিল আকার নিত। আবার বৃদ্ধার যা অবস্থা, তাতে ঝুঁকিও ছিল। শেষ পর্যন্ত ১৭ মার্চ পুরুলিয়া সদর হাসপাতালেই তাঁর ল্যাপারোস্কোপি করা হয়। কিন্তু এত পাথর দেখে তাজ্জব হয়ে যাই। গুনে গুনে দেখি, পিত্তথলিতে ১,১১৩টি ও পিত্তনালিতে দু’টি পাথর রয়েছে। ১৭ বছর ধরে অস্ত্রোপচার করছি। এত পাথর কারও দেখিনি।’’
অস্ত্রোপচারের পর থেকে সদর হাসপাতালেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে মণিদেবীকে। শুক্রবারই প্রথম তিনি ওয়ার্ডে হাঁটাহাঁটি করেন। তাঁর দুই ছেলে কৃষিজীবী রিঙ্কুলাল কুমার ও মহিলাল কুমার বলেন, ‘‘বাইরে চিকিৎসা করানোর মতো টাকা নেই। তাই পবনবাবুকেই ভরসা করে চেপে ধরেছিলাম। তাঁর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’’