কলেজ-ছাত্রী বোনের শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় দাদাকে গাছে বেঁধে পেটানোর অভিযোগ উঠল পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে। শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্তই মারধর করাতেও প্রধান অভিযুক্ত। বুধবারের ওই ঘটনায় থানায় অভিযোগ হয়েছে শুক্রবার। কারণ, বছর বাইশের ওই ছাত্রীর দাবি, ঘটনার পরে তাঁদের পরিবারকে শাসিয়েছিল অভিযুক্ত শ্যামগোপাল মাইতি।
পুলিশ অবশ্য শনিবার রাত পর্যন্ত শ্যামগোপালকে ধরতে পারেনি। জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘অভিযুক্ত পলাতক। তার খোঁজ চলছে।’’
এই ঘটনায় শাসক দলের নামও জড়িয়ে গিয়েছে। যুবতীর দাদার দাবি, মারধর করার পরে তাঁকে গুমকিয়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য অজিত পট্টনায়কের বাড়ি নিয়ে গিয়ে মুচলেকা লেখাতে বাধ্য করে শ্যামগোপাল। মুচলেকার বয়ান— শ্যামগোপালের বিরুদ্ধে ছাত্রীটির পরিবারের কোনও অভিযোগ নেই। সেখানে হাজির ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তপন পাত্র। শেষ পর্যন্ত এলাকার এক সিপিএম নেতা কার্তিক জানা মেয়েটির দাদাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন। বৃহস্পতিবার গলায়, গায়ে-হাতে চোট লাগা অবস্থায় বছর সাতাশের ওই যুবককে ভগবানপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। এ দিন তিনি ছাড়া পান।
এই সূত্রেই শাসক দলকে বিঁধেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। এ দিন দলীয় কাজে তমলুকে এসে ভগবানপুরের ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের নানা প্রান্তে অনবরত এমন ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের নিচুতলার লোকজন তাতে জড়িত। আর সে জন্যই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ‘ছোট ঘটনা’, ‘সাজানো ঘটনা’ বলে সেগুলিকে লঘু করে দেখাচ্ছেন।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৩ সাল থেকেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ওই তরুণীকে বারবার উত্ত্যক্ত করত শ্যামগোপাল। মেয়েটি রাজি না হওয়ায় সে তাঁর ব্যাগ-মোবাইল কেড়ে নিয়েছে বা রাতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ। তবে ছাত্রীটির পরিবারের দাবি, মেয়েটির দাদা বেঙ্গালুরুতে রান্নার কাজ করেন। বাড়িতে ছাত্রীটির বৃদ্ধ বাবা ছাড়া অন্য কোনও পুরুষ না থাকায় তাঁরা থানা-পুলিশ করেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, রূঢ়ভাষী বলে পরিচিত বছর আঠাশের শ্যামগোপালকে মদ্যপান করে বিভিন্ন সময়ে এলাকার বিভিন্ন ঝামেলায় জড়াতে দেখা গিয়েছে। সে একাধিক বার বিয়েও করেছে।
ভূগোল অনার্সের ওই ছাত্রীটির দাবি, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাজকুলের একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। কোটবাড় অঞ্চলে জোর করে সাইকেল থেকে নামিয়ে তাঁর হাত ধরে টানাটানি শুরু করে শ্যামগোপাল। মেয়েটির চিৎকারে লোক জড়ো হতে সে সরে যায়। ছাত্রীটি বাড়ি ফিরে ঘটনা জানান সম্প্রতি বেঙ্গালুরু থেকে বাড়ি ফেরা তাঁর দাদাকে। দাদা শ্যামগোপালের খোঁজে বেরোন। সেই সময়ে জনা কুড়ি সঙ্গী নিয়ে শ্যামগোপাল তাঁকে ঘিরে ফেলে। ছাত্রীটির দাদার অভিযোগ, ‘‘আমাকে গাছে বেঁধে মারতে শুরু করে শ্যামগোপাল। বাকিরা মজা দেখছিল। রাত দেড়টা পর্যন্ত আমাকে ওরা আটকে রাখে।’’ এর পরেই শ্যামগোপাল তাকে তৃণমূল নেতা অজিতবাবুর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মুচলেকা লিখিয়ে, সেটা কেড়ে নিয়ে চলে যায় বলে দাবি ওই যুবকের।
অজিতবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘মুচলেকা লেখানোর প্রশ্ন নেই। এলাকার দুই পরিবারের বিবাদ। তাই তাঁরা আমার বাড়িতে এসেছিল।’’ এ দাবি সমর্থন করেছেন তাঁরই দলের আর এক নেতা তপন পাত্র। সিপিএম নেতা কার্তিকবাবু অবশ্য বলেছেন, ‘‘মুচলেকা লিখে না দিলে ওই ছাত্রীর দাদাকে শ্যামগোপালের হাত থেকে ছাড়ানো যেত না।’’
কোটবাড়ে গিয়ে দেখা মেলেনি শ্যামগোপালের। তার দাদা রামগোপাল মাইতি বলেন, ‘‘ভাই কোথায় জানি না। ওর কাজকর্ম সম্পর্কেও কিছু জানা নেই।’’