অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোনে আড়িপাতার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডলে প্রতিবাদী পোস্ট। নিজস্ব চিত্র।
সোমবার দিল্লি যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগের দিনই কংগ্রেসের টুইটার হ্যান্ডলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ। পেগাসাস-কাণ্ড নিয়ে করা এই টুইট ঘিরে শুরু হয়েছে জল্পনা। কংগ্রেস হাইকমান্ডের দিক থেকে এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে সুস্পষ্ট বার্তা বলেই মনে করছেন অনেকে।
কংগ্রেসের ওই পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘নিজের শত্রুদের চোখে চোখে রাখতে হয়। এই প্রবাদ ধরে কাজ করতে গিয়ে মোদী একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন।’ তার নীচে হ্যাশট্যাগ ‘পেগাসাসস্নুপগেট’।
টুইটটির সঙ্গে দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। ছবির পাশে লেখা হয়েছে, ‘আপনি ক্রোনোলজিটা বুঝুন। পেগাসাসে গুপ্তচরবৃত্তির লক্ষ্য।
কে? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো।
কখন? ২০২১।
কেন? পশ্চিমবঙ্গের ভোটের সময়।'
তার নীচে মন্তব্য, 'মোদী সরকারের নিরাপত্তাহীনতার শেষ নেই।’
ইতিপূর্বে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ভবানীপুর উপনির্বাচনে মমতা দাঁড়ালে তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। যদিও বিধানসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে লাগাতার তোপ দেগে গিয়েছেন অধীর। প্রচারে বিজেপি এবং তৃণমূলকে একই সুরে সমালোচনা করে যাওয়াকে দলের শীর্ষনেতৃত্ব ভাল ভাবে নেয়নি বলেই কংগ্রেসের একটা সূত্রের খবর।
সোমবার দিল্লি যাচ্ছেন মমতা। চার দিনের দিল্লি সফরে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে ২০২৪ সালের ভোট নিয়ে আলোচনাও হতে পারে তাঁর। তার আগেই অভিষেকের ফোনে আড়িপাতার ঘটনা নিয়ে সরব হয়ে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে বার্তা পাঠিয়ে রাখলেন কি? মানতে চাননি রাজ্যসভার সাংসদ তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, ‘‘বিরোধী কোনও নেতার ফোনে আড়িপাতার বিরুদ্ধে কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রতিবাদ জানাতেই পারে। শুধুই অভিষেকই নয়, দেশের অনেক বিরোধী নেতা আছেন যাঁদের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছে। শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্ব নন, দেশের বহু উল্লেখ্যযোগ্য মানুষের ফোনেও আড়ি পাতা হয়েছে। সবার আগে পুরো বিষয়টির তদন্ত হওয়া দরকার।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই ঘটনায় কংগ্রেস সার্বিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। এবং তা কোনও বিশেষ দলের জন্য নয়। প্রতিবাদ মানে এই নয় যে, কোনও নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হচ্ছে।’’
একই সঙ্গে প্রদীপ বলেন, ‘‘রাজনৈতিক সমীকরণের ক্ষেত্রে কেবল আমরা এগোলেই তো হবে না। তৃণমূলকেও সদিচ্ছা দেখাতে হবে। তাঁদের পক্ষ থেকে এখনও কোনও সাড়া এসেছে বলে আমার কাছে কোনও খবর নেই।’’ কংগ্রেসের এমন প্রতিবাদ নিয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভার উপ-দলনেতা সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস অভিষেকের ফোনে আড়িপাতার ঘটনার নিন্দা করায় আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। রাহুল গাঁধী-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতা, বিচারপতি, প্রাক্তন সিবিআই কর্তাদের ফোনে আড়িপাতার ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পর আমরাও প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। আমরা চাই, দু'টি রাষ্ট্র যেমন পেগাসাস নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, তেমনই কেন্দ্রীয় সরকারও তদন্ত করে প্রকৃত সত্য প্রকাশ্যে আনুক।’’ উল্লেখ্য, কংগ্রেসের এই টুইটিকে রিটুইট করে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন লেখেন, ‘খেলা হবে’। আর সদ্য রাজ্যসভার অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড হওয়া শান্তনু সেন আবার রিটুইট করে লেখেন, ‘ভারতীয় জাসুস পার্টি পেগাসাস স্নুপগেট মারফৎ গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারে। তৃণমূলের সাংসদদের অসংসদীয় ভাবে সংসদ থেকে সাসপেন্ড করতে পারে। মন্ত্রীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধিদের হুমকি দিতে পারেন। কিন্তু ২০২৪ সালের বিজেপি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না, মানুষ তাদের চিরতরে সাসপেন্ড করে দেবে।’