ছবি পিটিআই।
কমবেশি সাড়ে তিন বছর ধরে তিন-তিন দফায় দীর্ঘ আন্দোলন। বুধবার, ধর্মতলায় গান্ধী-মূর্তির কাছে নবম থেকে দ্বাদশের শিক্ষকপদ প্রার্থীদের অবস্থান-বিক্ষোভের ৫০০তম দিনে দাবি উঠল, মেধা-তালিকাভুক্ত সকলকেই চাকরি দিতে হবে।
ইলিয়াস বিশ্বাস নামে এক কর্মপ্রার্থী এ দিন জানান, প্রথমে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনে ২৯ দিন টানা বিক্ষোভ অনশন চলে। সামনের লোকসভা ভোটের পরেই তাঁদের নিয়োগ করা হবে বলে ২৭ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী (বর্তমান শিল্পমন্ত্রী) পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁদের প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি পেয়ে তাঁরা অনশন ও অবস্থান তুলে নেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের কাছে ২০২১-র জানুয়ারিতে ফের ধর্না অবস্থানে বসেন প্রার্থীরা। ১৮৭ দিন টানা ধর্না অবস্থানের পরে তা উঠে যায় সে-বছরের ৫ অগস্ট। ইলিয়াস বলেন, “আমরা স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) অভিযান করেছিলাম বলে আমাদের মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়। ওখান থেকে উঠে আদালতের অনুমতি নিয়ে ধর্মতলার গান্ধী-মূর্তির কাছে ধর্না অবস্থান শুরু করি অক্টোবরে। সল্টলেক ও ধর্মতলার ধর্না অবস্থানের মাঝখানের সময়টাতেও আমরা রাস্তায় নেমে লাগাতার আন্দোলন করে গিয়েছি।” ইলিয়াসেরা জানাচ্ছেন, তিন দফায় ধর্না অবস্থান ধরলে বুধবার তাঁদের ধর্না অবস্থান ৫০০ দিনে পা দিল।
অভিষেক সেন নামে অন্য এক চাকরিপ্রার্থী বললেন, “আমরা অনেক বার পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং এখনকার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বাড়ি গিয়েছি। দ্রুত নিয়োগের দাবিতে এসএসসি আধিকারিক এবং শিক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি।” চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, তাঁদের মামলার জেরে অনেকের চাকরি বাতিল হয়েছে। তাঁরা বার বার অভিযোগ করে এসেছেন যে, টাকার বিনিময়ে নীচের র্যাঙ্কে থাকা প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। “টাকার বিনিময়ে যে চাকরি হয়েছে, এখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং সিবিআইয়ের তদন্তে তো সেটাই উঠে আসছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে যে-টাকা উদ্ধার হয়েছে, তার অনেকটাই নিশ্চয়ই এসএসসি-র চাকরি বিক্রির টাকা! অযোগ্যেরা চাকরি পেয়েছেন আর আমরা, যোগ্য প্রার্থীরা দীর্ঘ ৫০০ দিন ধরে রাস্তায় বসে আছি চাকরির আশায়,” অভিযোগ ইলিয়াসের।
মে মাসে শিক্ষা দফতর ঘোষণা করেছিল, নবম থেকে দ্বাদশের জন্য মোট ২১৭৯টি শূন্য পদ তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে নবম ও দশমের জন্য আছে ১৯৩২টি এবং একাদশ ও দ্বাদশের জন্য ২৪৭টি পদ। দ্রুত সেই সব পদে নিয়োগ হবে। প্রার্থীদের দাবি, ২১৭৯টি শূন্য পদে নিয়োগ করলেই হবে না, নবম থেকে দ্বাদশের মেধা-তালিকায় থাকা সব প্রার্থীকেই চাকরি দিতে হবে। কারণ মেধা-তালিকায় থাকা সবাই যোগ্য প্রার্থী।
স্কুলশিক্ষক পদে চাকরিপ্রার্থীদের ৫০০ দিনের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ওয়েবকুটা) সদস্যেরা এ দিন ধর্নামঞ্চে যান। তার পরে দুর্নীতির প্রতিবাদে কলেজ স্ট্রিটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সভা হয়। তাতে যোগ দেন আন্দোলনরত কর্মপ্রার্থীদের একাংশও। ওয়েবকুটার সভাপতি শুভোদয় দাশগুপ্ত জানান, প্রার্থীদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে কিছু আর্থিক সহায়তা খুব তাড়াতাড়ি তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।