বিধানচন্দ্র রায়। ছবি সংগৃহীত
কথায় বলে, ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’! সঙ্কটের সময়ে জোটের অন্দরের জট কাটাতে বাম ও কংগ্রেসের ভরসা হয়ে উঠতে পারেন পুরনো নেতারা। ভবিষ্যতের স্বার্থে ভুলে থাকতে হতে পারে প্রাচীন বিবাদও! জোট শিবিরের মধ্যে তৎপরতায় ইঙ্গিত অন্তত তেমনই।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানে আগামী ১ জুলাই কংগ্রেস দফতরে দেখা যেতে বাম নেতাদের। আবার পর দিনই, ২ জুলাই অশোক ঘোষের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ফরওয়ার্ড ব্লকের দফতরে হাজির হতে পারেন সিপিএমের পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। দু’টো ঘটনাই শেষ পর্যন্ত ঘটলে সাম্প্রতিক অতীতে তা হবে প্রথম বার। বাম এবং কংগ্রেসের মিলিত ভাবে যৌথ মঞ্চ বা কমিটি গড়ার প্রস্তাব এখনও কিছু নেতার ওজর-আপত্তিতে জটে আটকে। সেই বাতাবরণকে আরও সহজ করতেই এ বারের জুলাই-ভাবনা! প্রসঙ্গত স্মরণ করে নেওয়া যেতে পারে, রাজ্যে প্রথম খাদ্য আন্দোলনের উত্তাল পর্বে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বিধানচন্দ্র এবং তাঁর সরকারের পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রণং দেহি ছিলেন অশোকবাবুরা।
জোটের তরফে যৌথ কর্মসূচি হিসেবে আজ, সোমবারই রেড রোডে পেট্রল, ডিজেলের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে দাঁড়ানোর কথা সোমেন মিত্র, বিমান বসুদের। কিন্তু কিছু কর্মসূচি ঠিক করা ছাড়া বামফ্রন্ট, তার বাইরের বাম ও সমমনোভাবাপন্ন দল এবং কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ মঞ্চ বা কমিটি গড়ার প্রস্তাব এখনও ঝুলে। বাম নেতৃত্বের একাংশের অনড় অবস্থানই তার কারণ। সিপিএম এবং বাম শরিকদের অন্য একাংশের মতো প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেনবাবুও দু’পক্ষকে নিয়ে স্টিয়ারিং কমিটি করার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন। সূত্রের খবর, এই প্রেক্ষাপটেই প্রদেশ কংগ্রেস এবং ফ ব নেতৃত্বের মধ্যে কথা হয়েছে। পারস্পরিক আমন্ত্রণ জানিয়ে পরপর দু’দিন দুই প্রয়াত ব্যক্তিত্বকে স্মরণ অনুষ্ঠান মারফত বার্তা দেওয়া এবং জোটে জট কাটানোর প্রয়াস নিতে চান দু’পক্ষের নেতারা।
এক বাম নেতার কথায়, ‘‘বিধান রায়ের আমলে খাদ্য আন্দোলনের সময়ে রাজনৈতিক পতাকার পাশাপাশিই যৌথ কমিটি (পিআইএফআরসি) গড়ে বিরোধীরা লড়াই করেছিল এবং জনমত সংগঠিত করেছিল। বিধানসভায় শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে সব চেয়ে তিক্ত বিবাদের রেকর্ড ওই সময়েই। কিন্তু পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে কী ভাবে বিরোধীদের এগোতে হয়, সেই শিক্ষা নেওয়ার অনেক উপাদান ওই সময়ে আছে। বিধানবাবু ও অশোকদা’র জন্মদিন পালনের মধ্যে দিয়ে অনেক বার্তাই দেওয়া সম্ভব।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতা বলছেন, ‘‘বহু ক্ষেত্রেই পুরনো তিক্ততা ভুলে আমরা এগিয়েছি। এখানেও তা নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে ১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানের কার্ড ছাপানো হয়ে গিয়েছে। তাই কী করা যায়, সেটা একটু ভাবতে হবে।’’
অতীতের পাতা থেকে পুরনো নেতারা কি সহায় হবেন বর্তমানের জন্য— চর্চা চলছে জোট শিবিরে!