প্রতীকী ছবি।
তাদের তৎপরতা যখন প্রশ্নের মুখে, সেই সময়েই সিবিআই জানাল, কয়লা ও গরু পাচারের লভ্যাংশের কয়েকশো কোটি টাকা ছিল পুরনো নোটে। এবং ২০১৬ সালে নোটবন্দির সময় সেই পুরনো নোট বেআইনি ভাবে বদল করা হয়েছিল। তাদের অভিযোগ, রাজ্য পুলিশের নিচু তলার কিছু কর্মী এবং এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর যোগসাজশে সেই পুরনো টাকা নতুন করা হয়। গরু ও কয়লা পাচারের তদন্তে নামার পরে সম্প্রতি এমন কিছু তথ্য তদন্তকারীদের হাতে এসেছে।
শুধু সিবিআই নয়, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর তদন্তের গতি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে জনমানসে। মাঝখানে ওই দুই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার যতটা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছিল, সেই তুলনায় এখন তা অনেক স্তিমিত বলে অভিযোগ। বিভিন্ন সময়ে তদন্তের নিত্যনতুন দিকের কথা বললেও তদন্তকারী সংস্থা সেই সব বিষয়ে কতটা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে, তা এখন আতসকাচের তলায়। তবে ইডি অতি সম্প্রতি রাজ্যের এক মন্ত্রী এবং এক প্রভাবশালী আইনজীবীকে তলব করেছে। ফেব্রুয়ারির প্রথমেই তাঁদের দিল্লিতে হাজির থাকার কথা।
সিবিআই সূত্রের খবর, নিচু তলার কয়েক জন পুলিশ ইনস্পেক্টর এবং প্রভাবশালী-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের কয়েক জনকে নিয়ে আলাদা দল গড়ে পাচারের লভ্যাংশের কালো টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। তার পরে কোনও ভুয়ো লেনদেন দেখিয়ে তার অগ্রিম হিসেবে তা জমা দেওয়া হয় ব্যবসায়ীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। সিবিআইয়ের দাবি, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দক্ষিণ ২৪ পরগনা শাখার কয়েক জন নেতাও ওই নোট বদলের ঘটনায় জড়িত বলে সম্প্রতি কিছু তথ্যে প্রমাণ মিলেছে।
তদন্তকারীরা জানান, নোটবন্দির আগে গরু ও কয়লা পাচারে কয়েকশো কোটি টাকা কলকাতা ও লাগোয়া কয়েকটি জায়গায় ব্যবসায়ীদের কাছে জমা করা হয়েছিল। আচমকা নোটবন্দি ঘোষণার পরে সেই সব পুরনো নোট বদল করা হয়। সিবিআইয়ের দাবি, রাজনৈতিক দলকে বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ করেন, এমন ব্যবসায়ীদের অগ্রিম টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে, নির্বাচনের সময় বা দলীয় অনুষ্ঠানে সামগ্রী নিয়ে সেই কালো টাকা সাদা করা হয়। তদন্তকারীদের দাবি, ওই সব ব্যবসায়ী এবং ছোট-বড় অনেক রাজনৈতিক নেতাকে শনাক্ত করা হয়েছে।
কয়েক দফায় গরু ও কয়লা পাচার কাণ্ডের তদন্তে রাজ্য পুলিশের বেশ কয়েক জন কর্তা ও নিচু তলার কিছু ইনস্পেক্টরকে ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই ও ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, মূলত কয়লা ও গরু পাচারের লভ্যাংশের টাকা নিচু তলার কয়েক জন ইনস্পেক্টর মারফত পলাতক বিনয় মিশ্রের কাছে পৌঁছে দেওয়া হত বলে তদন্তে উঠে এসেছে। দক্ষিণ কলকাতার বেশ কয়েকটি জায়গায় ওই টাকা মজুত করা হত। পরে তা পাচার করা হত বিভিন্ন জায়গায়। এমনকি হাওয়ালা মারফত কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশেও পাচার করা হয়েছে বলে তদন্তকারী দুই সংস্থার অফিসারদের সন্দেহ।
তদন্তকারীদের কথায়, নোটবন্দির সময় এক প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠদের টাকা বদলানোর তৎপরতাই বিষয়টিকে আতসকাচের তলায় নিয়ে এসেছে। সেই জন্য ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিচু তলার কয়েক জন পুলিশ ইনস্পেক্টরকে শনাক্ত করে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগামী মাসেই ওই সব ইনস্পেক্টরকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সিবিআই সূত্রের খবর।
সিবিআইয়ের এক পদস্থ কর্তা জানান, নানা তথ্য উঠে আসার পরে ইডি-র তরফে এক সাংসদের আপ্ত-সহায়ককে তলব করা হয়েছে। তিনি কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আইনি রক্ষাকবচ পেয়েছেন। ইডি-র পাশাপাশি কয়লা ও গরু পাচারের লভ্যাংশের টাকার ক্ষেত্রে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগ স্পষ্ট হয়েছে বলে সিবিআইয়ের তদন্তেও উঠে এসেছে। তবে তলব করার পরেই করোনা পরিস্থিতিকে হাতিয়ার করে ভার্চুয়াল জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন অধিকাংশ অভিযুক্ত। ‘‘নোটবন্দির সময় কালো টাকা বদলের ঘটনায় জড়িত পুলিশ ইনস্পেক্টর, ব্যবসায়ী ও শাসক দলের নেতাদের শনাক্ত করে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে ধাপে ধাপে তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস পাঠানো হবে,’’ বলেন ওই সিবিআই-কর্তা।