ডোমকলের ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতে সেই স্কুল। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।
সরকারের লিজ নেওয়া জমিতে সরকারি টাকাতেই গড়া হয়েছিল পাকা হাট। কিন্তু ক্রেতা-বিক্রেতার কেউই উৎসাহ না দেখানোয় সেই হাট পড়ে ছিল বেশ কয়েক মাস। এ বার হঠাৎ দেখা গেল মুর্শিদাবাদের ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েতের বক্সিপুর গ্রামের সেই হাটে রাতারাতি তৈরি হয়েছে একটি বেসরকারি ‘স্কুল’। তবে সেই স্কুল সম্পর্কে শিক্ষা দফতর কিছুই জানে না।
এই ‘স্কুলে’র মালিক কে? ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের আরফাতন বিবির স্বামী বাবলু মণ্ডলের দাবি, ‘‘আমিই মালিক।’’ হাটের জায়গায় স্কুল কেন? বাবলুর দাবি, ‘‘হাট তৈরি করা হয়েছিল অনেক স্বপ্ন নিয়ে, কিন্তু সেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ আসেননি। ফলে আমরা স্কুল তৈরি করেছি, এতে অন্যায়ের কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না।’’ স্কুলে ভর্তির ফি তিনশো টাকা। সে টাকার রসিদে পঞ্চায়েতের নাম নেই। তা হলে টাকা কে নিচ্ছেন? বাবলু বলেন, ‘‘আপাতত ওই টাকায় স্কুলের আসবাবপত্র কেনা হয়েছে। যদি স্কুল চললে লাভ হয়, তখন দেখা যাবে, টাকা কে পাবেন।’’ আরফাতনের বক্তব্য, ‘‘স্কুল নিয়ে যা বলার আমার স্বামী বলবেন। স্কুল উনি তৈরি করেছেন, ওই বিষয়ে তিনিই সব জানেন।’’ তবে ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলাম বলছেন, ‘‘ভাবতেও পারছি না এমনটা হতে পারে। যদি সত্যি সত্যিই এমন হয়ে থাকে তাহলে প্রশাসনকে বলব তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার।’’
স্কুলটি সদ্য শুরু হয়েছে। প্রায় ৩০০ ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে প্রথম বর্ষে। নার্সারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি নেওয়া হয়েছে। তবে প্রধান শিক্ষক কেউ এখনও নেই। স্কুলের এক শিক্ষক রুবেল মণ্ডল বলেন, ‘‘অনেক বাচ্চাই ভর্তি হয়েছিল। তবে তাদের অনেকে চলেও গিয়েছে। স্কুলটি গোটাটাই পরিচালনা করেন বাবলু মণ্ডল। আমরা জনা কয়েক শিক্ষক রয়েছি।’’ তবে স্কুল এখন ছুটি। জেলা শিক্ষা দফতর অবশ্য এখনও স্কুলটি সম্পর্কে কিছুই জানে না। এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী টোটোন বিশ্বাসের দাবি, ‘‘সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে স্কুলটি শুরু করেছেন প্রাধানের স্বামী।’’ স্থানীয় সিপিএম নেতা মোস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্য, ‘‘সরকারি জায়গা ও সরকারি অর্থে তৈরি বাড়ি ব্যবহার করে লাভের গুড় খাচ্ছেন প্রধান ও তাঁর স্বামী। শিক্ষা এখন লাভজনক ব্যবসা বুঝেই এমন ব্যবসায় পা বাড়িয়েছেন তৃণমূলের নেতা। সবটাই পঞ্চায়েতের খরচে হলেও নামে গন্ধে কোথাও পঞ্চায়েতের ছোঁয়া নেই।’’
রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে ওই হাট শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের জুলাইয়ে। প্রধান আরফাতনের স্বামী বাবলুর পারিবারিক জমিই লিজ নিয়ে তৈরি হয় ওই হাট। তৎকালীন ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছিল, জমি লিজ নিয়ে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওই হাট তৈরি করা হয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধানের তরফেও জানানো হয়েছিল ওই হাট তৈরি হলে কৃষিনির্ভর এই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। কিন্তু হাটটি চলেনি। কারণ বাজার এলাকা থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে। তাই সেখানে কেউ যেতে চাননি।
টোটোনের দাবি, ‘‘প্রকাশ্যে একটা সরকারি বাড়ি বদল হয়ে যাচ্ছে অথচ এ নিয়ে প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। এক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য লিখিত ভাবে ওই হাটের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিল পঞ্চায়েতের কাছে, তারও কোনও উত্তর মেলেনি।’’ ডোমকলের ভিডিও শ্যামসুন্দর মিত্র সদ্য দায়িত্ব নিয়েছেন ব্লকের। তাঁর কথায়, ‘‘গোটা বিষয়টি শুনলাম। খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, ‘‘ঘটনার খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’