রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
আপাতদৃষ্টিতে কোভিড রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া। কিন্তু তারই মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের প্রতিদিন পরীক্ষা বাবদ চিকিৎসার খরচ জানারও সুযোগ ছিল। এ নিয়ে সরকারি নির্দেশ জারির পরও ‘কোভিড পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে’ (সিপিএমএস) তথ্য না দেওয়ায় কলকাতা এবং জেলার একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের নামের তলায় লালকালির দাগ দিল স্বাস্থ্য দফতর।
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য নথিভুক্ত করার জন্য জুলাইয়ে সিপিএমএস প্রক্রিয়া চালু করে স্বাস্থ্য ভবন। কিন্তু সিপিএমএস পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে রাজ্য সরকার চিকিৎসাধীন রোগীর তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি রোগীর পরিজনকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিলে বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা নেয়। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকের পরে গত শনিবার স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশ জারি করা হয়। সেখানে ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনে রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রেও তথ্য প্রদানের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, নির্দেশিকা মানার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলি কে কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই সংক্রান্ত প্রতিদিন একটি রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ভবন। বস্তুত, শনিবারের আগেও এই রিপোর্ট প্রকাশ হত। কিন্তু নির্দেশ জারির পরে মূল্যায়নের ধারা বদলে ফেলে কোভিড চিকিৎসায় যুক্ত রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করেছে স্বাস্থ্য ভবন। হাসপাতালে ভর্তি একশো শতাংশ রোগীর তথ্য দিলে ‘স্বচ্ছতা সূচক’এ হাসপাতালের নামের পাশে লেখা থাকছে প্রথম। কার্যত সেটি হল স্বাস্থ্য দফতরের মেধাতালিকা। নব্বই শতাংশ পর্যন্ত নম্বর প্রাপ্ত হাসপাতালগুলিকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ হিসেবে রিপোর্ট কার্ডে দেখানো হয়েছে। পরবর্তী স্থানে যে সকল হাসপাতাল পঞ্চাশ শতাংশের বেশি রোগীদের তথ্য দিয়েছেন তাদের নাম রয়েছে। তৃতীয় ভাগে পঞ্চাশ শতাংশের কম নম্বর প্রাপ্ত হাসপাতালের তালিকা। স্কুল পরীক্ষার পরিভাষায় টেনেটুনে পাশ। আর এই প্রক্রিয়ায় যারা একেবারে কোনও তথ্য দেয়নি তারা হল ‘লাস্ট’। লালকালির দাগ সেই সকল হাসপাতালের নামের তলাতেই দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
আরও পড়ুন: লোকাল ট্রেন, মেট্রো চালু হলে মানা যাবে কি দূরত্ব-বিধি
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, রবিবার মোট ৪৭টি বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে সতেরোটি হাসপাতালের নামের তলায় লালকালির দাগ পড়েছিল। মঙ্গলবার তা কমে দাঁড়িয়েছে আট। স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্দেশিকা জারির পরবর্তী তিনদিনে যে সকল হাসপাতালের নামের পাশে লালকালির দাগ ওঠেনি তাদের মধ্যে রয়েছে অ্যাপোলো গ্লেইনেগলস, একবালপুর নার্সিংহোম, টাটা মেডিক্যাল সেন্টারের মতো হাসপাতালের নাম রয়েছে। রবিবারের রিপোর্টে লালকালির দাগ ছিল সিএমআরআই, বেলভিউ, ফর্টিসের নামের পাশেও। সর্বশেষ প্রাপ্ত রিপোর্ট কার্ডের (২৪ অগস্ট) ‘স্বচ্ছতা সূচকে’ ৭.০৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে সিএমআরআই কার্যত টেনেটুনে পাশ। একই তালিকায় নাম রয়েছে বেলভিউ (৪৮.৬২) এবং ডিভাইন নার্সিংহোমের (২০.৫১)। মঙ্গলবারের রিপোর্ট আমরি ঢাকুরিয়া থেকে (৫৯.৩২) এগিয়ে রয়েছে আমরি মুকুন্দপুর (৯২.৮৬)।
আরও পড়ুন: জল, সুপারিতে ‘করোনা দিদি’কে স্বাগত গ্রামের
বেসরকারি হাসপাতালের সিসিইউ, আইসিইউ, এইচডিইউয়ে চিকিৎসাধীন রোগীদের শারীরিক অবস্থা সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য স্বাস্থ্য ভবনকে জানানোর পাশাপাশি প্রতিদিনের চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার (ইনভেস্টিগেশন) রিপোর্টও পাঠাতে বলা হয়েছিল শনিবারের নির্দেশিকায়। ঘটনাচক্রে ওই দিনই বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার খরচে রাশ টানতে নতুন করে পাঁচটি নির্দেশিকা জারির পাশাপাশি করোনা রোগীর ক্ষেত্রে কী ধরনের পরীক্ষা হতে পারে, কতবার সেই সকল পরীক্ষা করানো প্রয়োজন, তার রূপরেখা নির্ধারণে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য কমিশন। এ রাজ্যে বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার লাগামহীন খরচ নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। ঘুরপথে সেই প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবে একদিকে কমিশনের ইনভেস্টিগেশন কমিটি, অন্যদিকে সিপিএমএসে চিকিৎসাধীন রোগীর প্রতিদিনের পরীক্ষার রিপোর্ট আপলোড করার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। যার প্রেক্ষিতে ধারাবাহিকভাবে বেসরকারি হাসপাতালের একাংশ কেন সব রোগীর তথ্য আপলোড করছেন না, সে বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশ।
অ্যাপোলোর ডিরেক্টর অব মেডিক্যাল সার্ভিসেস তথা চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রচুর রোগীর চাপ থাকায় রিয়েল টাইম সকল রোগীর তথ্য আপলোড করতে সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা সমাধানের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’’ আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ। সিএমআরআইয়ে কোভিড নোডাল অফিসার তথা চিকিৎসক দেবকিশোর গুপ্ত জানান, স্বাস্থ্য দফতরের পোর্টালে তথ্য আপলোড করতে গিয়ে কয়েকটি হাসপাতাল অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনকে জানানো হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিলেও প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি জটিলতা মুক্ত হয়নি। এরই মধ্যে এ ধরনের মূল্যায়নের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য রিয়েল টাইমে আপডেট করা সহজ নয়। এ বিষয়ে আরও সহযোগিতা আশা করব।’’