আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের বাইরে নিজেদের মতো করে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করেও বেসরকারি হাসপাতালকে তার আওতায় আনার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছিল রাজ্য সরকার। শেষ পর্যন্ত বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল ওই প্রকল্প মেনে নেওয়ায় স্বাস্থ্যসাথীর সমস্যা কাটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এতে সরকার খানিকটা স্বস্তিতে।
তারা যে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের শরিক হবে না, রাজ্য সরকার সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগেই। চিঠি পাঠিয়ে ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েও দিয়েছে তারা। সরকারের সিদ্ধান্ত, রাজ্যের নিজস্ব স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পই চালিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে বাধা না-থাকলেও সমস্যা ছিল বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নিয়ে। কারণ, বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতালই রাজ্যের ওই প্রকল্প মানতে চাইছিল না। কারণ, প্রকল্পটি মানতে হলে সরকার নির্ধারিত চিকিৎসা-ব্যয় মেনে চলতে হবে তাদের। এই সমস্যা দূর করতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছিল রাজ্য। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি বদলেছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। এত দিন মুখ ফিরিয়ে থাকা বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল এখন এই প্রকল্পে পরিষেবা দিতে সম্মত হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র তথ্য দিয়ে জানাচ্ছে, গত বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাঁচ লক্ষ ১৬ হাজার মানুষকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় ৪৯২ কোটি টাকার চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর ১০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে রাজ্যে ১৪০০ হাসপাতাল রয়েছে। তার মধ্যে সম্প্রতি ১৩০০ হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে পরিষেবা দিতে সম্মত হয়েছে। তার মধ্যে কমবেশি ৮০০টি হাসপাতালই বেসরকারি। কলকাতার পরিচিত কিছু বেসরকারি হাসপাতাল অবশ্য এখনও রাজ্যের এই প্রকল্প গ্রহণ করেনি। স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘গত দেড় বছরে গুগলে স্বাস্থ্যসাথী সার্চ হয়েছে ১৮ লক্ষের বেশি। প্রতিদিন পাঁচ-ছ’হাজার মানুষ সার্চ করেন। স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা নিতে চেয়ে প্রতিদিনই আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। সকলকেই যে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, তা নয়। মাপকাঠিতে যাঁরা উত্তীর্ণ হচ্ছেন, অনুমতি পাচ্ছেন তাঁরাই।’’
প্রশাসনের অন্দরের ব্যাখ্যা, আর্থিক দিক থেকে দুর্বল অংশের মানুষদের জন্য ‘রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা’ (আরএসবিওয়াই) রয়েছে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে। সেই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অংশীদারি রয়েছে। স্বাস্থ্যসাথীর সঙ্গে এখন এই প্রকল্পটি একসঙ্গেই পরিচালিত হচ্ছে। ৪২ লক্ষ পরিবার রয়েছে স্বাস্থ্যসাথী এবং আরএসবিওয়াই প্রকল্পের আওতায়। শুধু তাঁরাই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে থাকেন, যাঁরা সরকারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত। সম্প্রতি আয়ুষ্মান প্রকল্পের পরিবর্তে নিজেদের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের পরিধি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে প্রকল্পের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। সেই জন্যই হাসপাতালগুলিকে রাজি করাতে বাড়তি তৎপরতা হচ্ছে বলে প্রশাসনিক মহলের ধারণা। তবে অনেকে রাজি হলেও রোগী না-ফিরিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি কতটা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালিত হচ্ছে, সেই বিষয়ে এখন নজর রাখছে প্রশাসন।