— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দশ মাস আগে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগ থেকে দেহ পাচারের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল। আর জি কর কাণ্ডে নড়ে বসে সেই ফাইল চেয়ে পাঠালেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন, তাহলে কি দেহ পাচারেও ‘বর্ধমান লবি’র হাত রয়েছে? চিকিৎসকদের সংগঠনগুলিও মনে করছে, মৃতদেহ পাচারের ঘটনায় অভীক দে-র নেতৃত্বাধীন বর্ধমান লবি জড়িত। সেই কারণেই কলেজ কর্তৃপক্ষ ‘চুপ’ করেছিলেন, দাবি তাঁদের। পুলিশ রুখে না দাঁড়ালে দেহগুলি পাচারই হয়ে যেত হয়তো। যদিও এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, “ফাইল দেখার পরে বর্তমানে কী পরিস্থিতি সবটা জেনে তবেই মন্তব্য করব।”
গত বছরের নভেম্বরে এক সকালে মৃতদেহ পাচার করার সময়ে কয়েক জন নিরাপত্তারক্ষী বিষয়টি বুঝতে পেরে বর্ধমান থানায় ফোন করেন। পুলিশ এসে তিনটি দেহ আটক করে বর্ধমান মেডিক্যালের হাতে তুলে দেয়। এই ঘটনায় মেডিক্যালের কর্মী, ডোম-সহ পাঁচ জন গ্রেফতার হন। তবে সেই সময় বিষয়টি নিয়ে আর নড়াচড়া হয়নি।
আন্দোলনকারীদের দাবি, ‘‘লোভে পড়ে হয়তো দেহ বিক্রি করছিল বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু আর জি কর কাণ্ডের পরে সেখানকার মর্গ থেকে মৃতদেহ পাচারের অভিযোগের কথা সামনে আসতেই আমাদেরও প্রশ্ন জাগছে। বর্ধমানেও মৃতদেহ পাচারের কোনও চক্র কাজ করছিল কি না, দেখতে হবে।’’ আর জি করে মৃতদেহ পাচারে যাদের নাম উঠেছে, তাদের সঙ্গে ‘বর্ধমান লবি’র মাথাদের ভালমতো যোগাযোগ ছিল বলেও দাবি করেছেন তাঁরা।
‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিসে’র যুগ্ম সম্পাদক সুবর্ণ গোস্বামী দাবি করেছেন, ‘‘নিশ্চিত ভাবে বর্ধমান মেডিক্যালে মৃতদেহ পাচারের চেষ্টার ঘটনায় অভীকের নেতৃত্বাধীন বর্ধমান লবি যুক্ত ছিল। সেই কারণেই কলেজ কর্তৃপক্ষ সমস্ত কিছু জেনেও চুপ করে ছিলেন।” চিকিৎসকদের আর একটি সংগঠন ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের’ সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসও বলেন, “সিন্ডিকেটের মদত ছাড়া বিভাগ থেকে মৃতদেহ পাচার করা সম্ভব নয়।” তবে বর্ধমান মেডিক্যালের চিকিৎসক-শিক্ষকেরা দাবি করেছেন, ওই ঘটনার আগে মৃতদেহ পাচারের কোনও অভিযোগ তাঁরা শোনেননি।
বর্ধমান থানা সেই সময় তদন্ত করে জানতে পেরেছিল, দেহগুলি অজ্ঞাতপরিচয়। শববাহী গাড়ি করে সেগুলি উত্তরাখণ্ডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাচার করার ছক কষা হয়েছিল। গাড়ির ভিতর একটি ‘ড্রয়ারে’ দু’টি দেহ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। আর একটি দেহ দেখা যাচ্ছিল। ওই ঘটনার পিছনে একজন ‘প্রাক্তনী’র হাত ছিল বলেও পুলিশ জানতে পারে। তিনিই ‘বরাত’ দিয়েছিলেন।
বর্ধমান মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের দাবি, আর যাতে এই রকম অভিযোগ না ওঠে, সে জন্য কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মৃতদেহ রাখার ঘরটি সম্পূর্ণ ভাবে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে রয়েছে। বর্তমানে সেখানে ২০-২৫টির মতো মৃতদেহ রয়েছে। তার মধ্যে ৮-১০টি দেহ দানের।
বিভাগীয় প্রধান জোনাকি দাস সরকার বলেন, “নজরদারির জন্য পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা রয়েছে।”