বিরোধী শিবিরের কাউন্সিলরদের ভাঙিয়ে তৃণমূল বোর্ড গঠন করতে চাইলে আগে ২৩জন বাম কাউন্সিলরকে জেলে পুরতে হবে। শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন বামেদের মেয়র পদপ্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য। শাসকদল ‘‘অনৈতিক’’ ভাবে অন্য দলের কাউন্সিলরদের সমর্থন আদায় করে বোর্ড গঠন করতে চাইবে, সেই ইঙ্গিত করে এ দিন অশোকবাবু প্রশ্ন তোলেন, কলকাতা পুরবোর্ড কবে গঠন হবে, সে বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও, জেলার বোর্ড গঠন নিয়ে ঘোষণা হয়নি কেন?
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিলিগুড়ি যাওযার কথা। তার আগে সুর চড়াচ্ছেন বিরোধীরা। তাঁদের সন্দেহ, নেপালে ত্রাণ বিলির কাজের সূচনা করার জন্য মমতা আসছেন বলে সরকারি ভাবে দাবি করা হলেও, পুরবোর্ড গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করবেন তৃণমূল নেত্রী। সেই ইঙ্গিত করে অশোকবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর পদের গুরুত্ব রয়েছে। দয়া করে তাকে ছোট করবেন না।’’
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌতম দেব বলেন, ‘‘কলকাতায় আগে ভোট হয়েছে, আগে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। এ সব নির্বাচন কমিশন ঠিক করে।’’ তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে আসছেন। বামেদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত নেপালে ত্রাণ পাঠানোর কাজের সূচনা করতে নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কিতে যাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। তার পরে শিলিগুড়িতে দলের সদ্যনির্বাচিত ১৭ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে মমতা বৈঠক করবেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। সেই বৈঠককে নিয়ে শিলিগুড়ির রাজনীতি সরগরম। বিরোধীদের আশঙ্কা, কী ভাবে নির্দল ও বাম শরিক দলের কাউন্সিলরদের দলে টেনে পুরবোর্ড গঠন করা যায়, তার ছক কষছেন তৃণমূল নেতারা। বোর্ড গঠন করার জন্য ব্যস্ত হয়েছে বামেরা। বাম কাউন্সিলররা শিলিগুড়ি পুরসভায় গিয়ে এ বিষয়ে পুরসচিবকে স্মারকলিপিও দেন।
শিলিগুড়ির পুরবোর্ড গড়তে দরকার ২৪জন কাউন্সিলর। বামেরা পেয়েছে ২৩টি। নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন, দাবি বামেদের। ফলে আসনের বামেরা বোর্ড গড়ার ব্যাপারে ‘‘১০১ শতাংশ’’ নিশ্চিত, দাবি অশোকবাবুর। বাকি ২৩ জনকে নিয়ে তৃণমূলের তরফে বোর্ড গঠন তখনই সম্ভব, যদি মেয়র নির্বাচনের সভা থেকে বাম কাউন্সিলরদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়। ‘‘আমাদের মেয়র নির্বাচনের দিন ভোটাভুটি থেকে বিরত রাখতে হলে গ্রেফতার করে জেলে পাঠাতে হবে,’’ বলেন তিনি।
কেন বোর্ড দখলে এতটা মরিয়া তৃণমূল? দলের একাংশ বলছে, এ বার রাজ্যজুড়ে পুরভোটে শাসকদলের প্রায় নিরবচ্ছিন্ন আধিপত্যের নকশায় প্রধান ব্যতিক্রম শিলিগুড়ি। তৃণমূল নেতাদের আশঙ্কা, সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে এক আসন দূরে থেকেও অশোকবাবু মেয়রের পদে বসতে সফল হলে, গোটা রাজ্যেই বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রামধনু জোটের ‘শিলিগুড়ি মডেল’ সামনে রেখে তৃণমূলকে টক্কর দেওয়ার চেষ্টা করবে বিরোধীরা। বছর ঘুরলেই বিধানসভা ভোট। তাই অশোকবাবুকে রুখতে মরিয়া তৃণমূলের একাংশ।
বিরোধীদের অভিযোগ, অ-বাম কাউন্সিলরদের নিজেদের দিকে টানতে তাঁদের নানা সরকারি পদের টোপ দিচ্ছেন তৃণমূল নেতাদের কয়েকজন। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার কিছু নেতা জানান, অন্য দলের ও নির্দল কাউন্সিলরদের দলে টানতে তাঁদের নানা সরকারি কমিটির শীর্ষ পদ, সরকার-পরিচালিত সংস্থার চেয়ারম্যান বা কমিটির সদস্য করার জন্য দরবার চালাচ্ছেন তৃণমূলের সম্ভাব্য মেয়র নান্টু পাল-অনুগামীদের কিছু নেতা। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁরা তেমনই নানা ‘ফর্মুলা’ পেশ করবেন, এমনই মনে করছেন বামেরা।
তবে বিরোধীদের সমর্থন পেলেও বোর্ড গঠন নিয়ে দলের অন্দরেই ‘কাঁটা’ রয়েছে, বলে সন্দেহ করছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ। দীর্ঘদিনের বাম কাউন্সিলর নান্টুবাবু কংগ্রেস হয়ে এখন তৃণমূলে। গৌতম দেবের ঘনিষ্ঠরা অনেকেই নান্টুবাবুকে পছন্দ করেন না বলে দলীয় সূত্রে খবর। নান্টুকে মেয়র হিসেবে তুলে ধরে তৃণমূল পুরবোর্ড গড়তে চাইলে তা দলেরই একাংশের কাছে গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে। তৃণমূলের একজন কাউন্সিলরও বিরুদ্ধে ভোট দিলে সব অঙ্ক জলে যাবে। তাই শেষরক্ষা হবে কিনা, তা নিয়ে অস্বস্তি আছে শাসকদলেও। মুখ্যমন্ত্রীর সফর এই সব জল্পনায় জল ঢালে, নাকি আরও উস্কে দেয়, তা-ই দেখার অপেক্ষায় শিলিগুড়ি।