পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ফাইল চিত্র।
দেশের রাষ্ট্রপতি পদে বসার পর এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসছেন দ্রৌপদী মুর্মু। দু’দিনের সফরে আসছেন তিনি। নবান্ন সূত্রের খবর, আগামী ২৭ মার্চ সকালে রাষ্ট্রপতি কলকাতায় পৌঁছবেন। ওই দিন বিকেলেই রাজ্য সরকারের তরফে তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়ার কথা। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। অনুষ্ঠানে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত তাঁর উদ্যোগেই এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, দ্রৌপদী দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি। এবং ঘটনাচক্রে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁর বিরুদ্ধে যে বিরোধী প্রার্থী দাঁড় করানো হয়েছিল, সেই উদ্যোগে শামিল হয়েছিলেন মমতাও। সেই বিরোধী প্রার্থী ছিলেন দেশের প্রাক্তন মন্ত্রী যশোবন্ত সিন্হা। তিনি তখন ছিলেন তৃণমূলের সদস্য। তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নাম ঘোষণার পরে যশোবন্ত তৃণমূল থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। প্রত্যাশিত ভাবেই তিনি বিজেপি তথা এনডিএ প্রার্থীর কাছে হেরে যান। তখন অনেকেই মনে করেছিলেন, দ্রৌপদীকে রাষ্ট্রপতি করে দেশের মূলবাসী এবং আদিবাসী সমাজকে একটি বার্তা দিতে চেয়েছিল বিজেপি। তাদের সেই ‘মাস্ট্রারস্ট্রোক’ বিরোধী শিবিরকে খানিকটা বেকায়দায় ফেলেছিল।
দ্রৌপদীর নাম ঘোষণা হওয়ার পর মমতা বলেছিলেন, আগে বিজেপি তথা এনডিএ দ্রৌপদীর নাম নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বা তাঁর সঙ্গে আলোচনা করলে তিনি আদিবাসী প্রার্থীকেই সমর্থন করতেন। অনেকেই মনে করছেন, সেই কারণেই মমতা স্বয়ং উদ্যোগী হয়ে দ্রৌপদীকে নাগরিক সংবর্ধনা দিতে উদ্যোগী হয়েছেন। তাঁরা আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথাও মাথায় রাখছেন। সাগরদিঘি-উত্তর পর্বে মুসলিম ভোট নিয়ে উদ্বিগ্ন মমতা। সেই প্রেক্ষিতে দ্রৌপদীর নাগরিক সংবর্ধনার মাধ্যমে আদিবাসীদের তাঁর বার্তা দেওয়ার জল্পনা খুব অমূলক না-ও হতে পারে। তবে পাশাপাশিই অনেকে বলছেন, দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি রাজ্যে এলে তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়াটা রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী সহবত এবং দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। মমতা সেই সৌজন্য, শ্রদ্ধা এবং সহবত থেকেই ওই সংবর্ধনার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন।
আদিবাসী নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারের ক্ষেত্রে বিজেপির ‘বড় হাতিয়ার’ রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির করা রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে একটি ‘অসম্মানজনক’ মন্তব্য। যা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে। অখিলের মন্তব্যের জেরে সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষমাপ্রার্থনাও করতে হয়েছিল তাঁকে।
ফলে রাজ্য সরকার যে ‘আদিবাসী বিরোধী’ নয়, তা তুলে ধরার তাগিদ মুখ্যমন্ত্রীর রয়েছে। আদিবাসীদের উন্নয়নে তাঁদের সরকার কী কী কাজ করেছে, তা-ও সরকারি প্রচারযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে জনসমক্ষে তুলে ধরা হচ্ছে। আদিবাসীকন্যা বিরবাহা হাঁসদাকে যে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভায় জায়গা দিয়েছেন, তা-ও পাল্টা প্রচারে বলা হচ্ছে। তাই পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা ঘিরে বাংলার রাজনীতি আবার শাসক বিরোধী তরজায় উত্তপ্ত হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি পদে বসার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে রামনাথ কোবিন্দকেও সংবর্ধিত করা হয়েছিল। সে বার রাইসিনা হিলসের বাসিন্দা হওয়ার পর প্রথম রাজ্যসফর হিসাবে পশ্চিমবঙ্গকেই বেছে নিয়েছিলেন ভারতের প্রথম দলিত রাষ্ট্রপতি। দ্রৌপদী রাষ্ট্রপতি পদে বসার ৯ মাসের মাথায় পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসছেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগে রাষ্ট্রপতি যেতে পারেন এলগিন রোডে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাসস্থান নেতাজি ভবনে। সেখানে নেতাজির স্মৃতিবিজড়িত স্থান পরিদর্শন করবেন তিনি। সেখান থেকে তিনি যাবেন জোড়াসাঁকোয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান ঠাকুরবাড়ি ঘুরে দেখবেন। এর পর কলকাতায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর। ওই দিন রাজভবনেই রাত্রিবাস করবেন তিনি। পর দিন ২৮ মার্চ সকালে যাবেন বেলুড়মঠে। সেখান থেকে তিনি যাবেন বীরভূমের শান্তিনিকেতনে। সেখানে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগদানের কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। শান্তিনিকেতন থেকেই দিল্লি ফিরে যাওয়ার কর্মসূচি রয়েছে রাষ্ট্রপতির।
রাষ্ট্রপতি এই সফরকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বাংলার রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। কয়েক মাসের মধ্যে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন ছাড়াও আগামী বছর লোকসভা নির্বাচন। মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভোট টানতেই কেন্দ্রের শাসক বিজেপি আদিবাসী দ্রৌপদীকে রাষ্ট্রপতি পদে বসিয়েছে, এমন আলোচনা প্রথম থেকেই জারি ছিল। পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী ভোটেও নজর রয়েছে গেরুয়া শিবিরের।