প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে
কার্শিয়াঙের ডাওহিলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাম্পাস তৈরির কথা গত বছরই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলান্যাসও হয়ে গিয়েছে। পুরোদমে ক্যাম্পাস চালুর আগে পাহাড়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সেখানেই আবাসিক ‘উইন্টার স্কুল’ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিল প্রেসিডেন্সি। উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া জানিয়েছেন, ক্যাম্পাস পুরোপুরি চালুর আগে এই কর্মসূচিকে একটা প্রস্তুতিপর্ব বলা যেতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘এর ফলে আমাদের শিক্ষকেরা বুঝতে পারবেন ওখানকার পড়ুয়ারা কী শিখতে চাইছে। পুরোদস্তুর পড়াশোনা চালু করতে সাহায্য করবে এটা।’’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের সম্মতিতেই এ ব্যাপারে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ২৯ জুলাই ক্যাম্পাসে গিয়ে উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া, রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার-সহ একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকেই ‘উইন্টার স্কুল’ সম্পর্কিত পরিকল্পনা ও পাঠ্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। জানা গিয়েছে, ১৫ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে ওই কর্মশালা। ডাওহিলে ফরেস্ট রেঞ্জার্স কলেজ ভবনের একাংশেই ওই আবাসিক শিবির হবে। প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষের দাবি, রাজ্য সরকারের তরফে প্রশাসনিক স্তরে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অনুরাধাদেবী জানান, রাজ্য সরকারের কাছে এ জন্য আর্থিক সহযোগিতাও চাওয়া হবে।
ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্সির তরফে এ জন্য পাঁচ শিক্ষককে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির আহ্বায়ক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক সত্যব্রত সিংহ জানান, দেশ-বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন উইন্টার বা সামার স্কুল আয়োজনের চল থাকলেও রাজ্যে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। তিনি জানান, পাহাড়ের নানা কলেজের স্নাতক স্তরের দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের ছাত্রছাত্রীদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আপাতত, কেবল কলা বিভাগের নানা বিষয়ই পড়ানো হবে ওই শিবিরে। তবে তার মধ্যেই পাহাড়ের পরিবেশ-সংস্কৃতির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে। তার মধ্যে রয়েছে পাহাড়ের ভাষা ও সাহিত্য, চা ও পর্যটন শিল্প, ঐতিহ্য, অর্থনীতি— সবই।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, পাহাড়ের পড়ুয়াদেরই ওই শিবিরে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং, মিরিক, সোনাদার মতো পাহাড়ের নানা জায়গার কলেজের কাছে প্রেসিডেন্সির তরফে যোগাযোগ করা হবে। সেখান থেকে ২০ জন পড়ুয়াকে বাছাই করে নিয়ে শিবিরে রাখা হবে। শিবিরে তাদের সঙ্গে তিন সপ্তাহ কাটাবেন শিক্ষকেরাও। কেবল ক্লাসেই নয়, ‘প্রজেক্ট ওয়ার্কে’র জন্য তাঁদের সঙ্গে নানা জায়গায় গিয়েও পড়াবেন শিক্ষকেরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে স্থানীয় বিশেষজ্ঞরাও ক্লাস নেবেন ওই শিবিরে।
প্রেসিডেন্সি সূত্রের খবর, সত্যব্রতবাবু ছাড়া ওই কমিটিতে রয়েছেন অর্থনীতির শিক্ষক প্রবেশ তামাঙ্গ, হিন্দি ও ভাষা বিভাগের শিক্ষক তনুজা মজুমদার, ইতিহাসের সৌমেন মুখোপাধ্যায় ও সমাজতত্ত্বের সৌভিক মণ্ডল। সৌভিকবাবু বলেন, ‘‘ওই কর্মশালায় শিক্ষকেরা যেমন ছাত্রছাত্রীদের শেখাবেন, তেমনই ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকেও শেখার চেষ্টা করবেন। পারস্পরিক আদানপ্রদানের মাধ্যমে ওই প্রস্তুতি শিবিরই ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়কে সফল করে তুলবে।’’ তিনি জানান, পরে পাহাড়ে সামার স্কুল করার পরিকল্পনাও রয়েছে।