হেমন্ত। ফাইল চিত্র।
কালীপুজোর গভীর রাতেই দুর্যোগ কেটে গিয়েছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ক্রমশ ফিরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে হেমন্ত। রোদ এবং উত্তুরে বাতাসের যুগলবন্দিতে হিমেল ভাব মালুমও হতে পারে। অতঃপর কি শীতের প্রতীক্ষা বাঙালির?
পথ চেয়ে থাকায় কোনও সমস্যা নেই। তবে আবহবিদেরা বলছেন, শীতের হাজির হওয়ার কোনও নির্ঘণ্ট নেই। তবে হেমন্তের শেষে পারদপতন, উত্তুরে বাতাস ইত্যাদি নানা অনুষঙ্গ দেখে শীত থিতু হওয়ার কথা জানানো হয়। সেই হিসাবে চললে শীত পড়তে অন্তত মাস দেড়েক সময় তো লাগবেই! তাই আপাতত নরমে-গরমে হেমন্ত কাটানোই ভবিতব্য।
কার্যত মার্চ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ঘেমেপুড়ে অস্থির হয়ে কাটানো বাঙালির কাছে তা-ই বা কম কী! শুধু তাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের পাকেচক্রে কার্তিকের হিম তো বাঙালি হারিয়েই ফেলেছিল। তাই কাঁপুনি দিয়ে শীত না-হোক হেমন্তের আমেজ পেলেও অখুশি হওয়ার কারণ নেই।
তবে আবহাওয়া যে দ্রুত ছন্দে ফিরছে তার পিছনে সিত্রাংয়ের দুর্বলতার কথা বলছেন আবহবিদদের অনেকে। বঙ্গোপসাগরের উপরে থাকলেও খুব বেশি শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি সিত্রাং। বরং শেষ বেলায় কিছুটা তাড়াহুড়ো করেই যেন ডাঙায় উঠে পড়তে চেয়েছে সে। সোমবার রাত থেকে কার্যত মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত জল ছেড়ে ডাঙায় ওঠার পর্ব চলেছে তার। এ দিন মৌসম ভবন জানিয়েছে, বাংলাদেশে আছড়ে পড়ার সময়েও খুব শক্তি দেখাতে পারেনি সিত্রাং। বরং হামলার পরে দ্রুত শক্তি খোয়াতে খোয়াতে নিম্নচাপের চেহারা নিয়েছে সে। মঙ্গলবার তার অবস্থান বাংলাদেশ-মেঘালয়ের উপরে।
সিত্রাং যে শক্তি সঞ্চয় করতে পারল না এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুখ ফিরিয়ে বাংলাদেশে গেল তার পিছনে উত্তুরে বাতাসকে দায়ী করছেন (প্রকারান্তরে ধন্যবাদ দিচ্ছেন) আবহবিদদের অনেকে। তাঁরা বলছেন, উত্তর ভারতে আগত একটি শক্তিশালী পশ্চিমী ঝঞ্ঝার (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে আগত ঠান্ডা, ভারী বায়ু) ঠেলায় উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে জোরালো হাওয়া বঙ্গে এসেছে। সে-ই কার্যত ঠেলা দিয়ে বিদেয় করেছে সিত্রাংকে। এই জোরালো ঝঞ্ঝাই কার্যত ভারতের উত্তরার্ধে শীত ডেকে আনে। এই ঝঞ্ঝার দাপটেই হিমালয় পার্বত্য এলাতায় তুষারপাত হয়। অক্টোবরেই জোরালো ঝঞ্ঝার আগমন কি তবে শীতকে ত্বরান্বিত করবে?
দু-একটি ঝঞ্ঝা দেখে নিশ্চিত কিছু বলতে নারাজ আবহবিদেরা। বরং তাঁরা বলছেন, শীত ত্বরান্বিত হবে কি না, বলা মুশকিল। তবে ঝঞ্ঝা যদি ঠিক মতো আসে তা হলে বাংলার হারিয়ে ফেলা হেমন্ত ফিরে পাওয়া যেতে পারে।ঋতুবৈচিত্র উদ্যাপনে সেটাই বড় পাওনা হতে পারে।