—ফাইল চিত্র।
কলকাতার পুরভোটে প্রশান্ত কিশোরদের বেশির ভাগ সুপারিশই খাটেনি। এবং তা হয়েছে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি এবং অনুমোদনে। যেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সব শীর্ষনেতাও ছিলেন। এই অবস্থায় আগামী দিনে আরও পাঁচটি কর্পোরেশন ও শতাধিক পুরসভার প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কী হবে, তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে।
কলকাতার পুরভোটে দলের প্রার্থী বাছাই নিয়ে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তৃণমূলের অন্দরে। ২০১৯ সালে পরামর্শদাতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম দলের অন্দরে পাল্টা ব্যাখ্যার মুখে পড়তে হয়েছে প্রশান্তকে। মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর মতো নেতাদের মুখে শুনতে হয়েছে, ‘আপনি পরামর্শ দিন, সিদ্ধান্ত দল নিক’ বা ‘আমরাও বাংলাকে চিনি। মানুষকে চিনি’। গত দু’আড়াই বছর ধরে প্রশান্ত যে প্রশ্নহীন কর্তৃত্ব করছেন, স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এ ভাবেই তাঁর তালিকার ৭০ শতাংশই খারিজ করে দিয়েছে তৃণমূল। ফলে আগামী দু’মাসের মধ্যে বাকি পুরসভাগুলির নির্বাচনের আগেই এই ফারাকের সম্ভাবনা নিয়ে ভাবছে তৃণমূল।
দলীয় সূত্রে খবর, মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া পুরসভাগুলির নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে গত বছর থেকেই প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় হাত দিয়েছিল প্রশান্তের সংস্থা আইপ্যাক। প্রাথমিক ভাবে পুর-প্রতিনিধিদের কাজ এবং ভাবমূর্তিই ছিল সেই বাছাই প্রক্রিয়ার মাপকাঠি। হাওড়া, বিধাননগর এবং আসানসোল-সহ পুরসভাগুলিতে পরিষেবা ও অন্যান্য বিষয়ে স্থানীয় স্তরে মত যাচাই করেছিল ওই সংস্থা। হাওড়া এবং বিধাননগরেও একগুচ্ছ মুখ বদলের ভাবনা ছিল তাদের। জেলার পুরসভাগুলিতেও এই মাপকাঠিতে ভর করেই প্রার্থী বাছাইয়ের ভাবনা এগিয়েছিল তারা। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে একেবারে নীচের তলা থেকেই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজে যুক্ত করার কথাও ভাবনায় ছিল তাদের। এবং বিধানসভা ভোটে এই বিপুল সাফল্যের বছরেই দলের এই ‘সংস্কার’ সেরে ফেলার কথা ভেবেছিলেন পরামর্শদাতারা। সেই পারমর্শের খসড়াও তৈরি তাঁদের।
কলকাতা পুরভোটের এই পর্ব অবশ্য সেই ভাবনার সামনে প্রশ্ন তুলেছে। দলের অনেকে মনে করছেন, যে কারণে কলকাতায় সেই সংস্কারের কাজ করা যায়নি, জেলাতেও তা মসৃণ হবে না। একটা নতুন প্রজন্মকে তুলে আনতে গেলে জায়গা তৈরির এই প্রক্রিয়া নিয়ে কলকাতার মতোই জেলাতেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। এবং সংখ্যা ও অন্যান্য দিক থেকে তা তুলনায় বেশি জটিল হতে পারে। বিশেষ করে প্রশান্তের পরামর্শের যে অংশে (সংখ্যার বিচারে) স্বয়ং তৃণমূলনেত্রী ‘সিলমোহর’ দিয়েছেন তাতে জেলা স্তরেও এই বদল নিয়ে নির্দিষ্ট বার্তা গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ‘এক ব্যাক্তি এক পদ’-এর মতো ঘোষিত নীতি কার্যকর করা কতটা সহজ হবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।