প্রশান্ত কিশোর। — ফাইল চিত্র।
তিন দিনে পিকে-র দফতর থেকে প্রায় পাঁচশোরও বেশি ফোন এল সাগরদিঘিতে বুথে বুথে তৃণমূল কর্মীদের কাছে। চার জনের নামের তালিকা দিয়ে প্রত্যেকের কাছে একই প্রশ্ন “কাকে প্রার্থী করলে ভাল হয়?” যে যাঁর মতো করে উত্তর দিয়েছেন পিকে টিমকে।
প্রস্তাবিত ৪ প্রার্থীর ৩ জনই অবশ্য বহিরাগত। অথচ জঙ্গিপুর জেলা কমিটির তরফে জোর দেওয়া স্থানীয় প্রার্থীতেই।শুধু শাসক দল তৃণমূলই নয়, উপ নির্বাচনে সাগরদিঘিতে স্থানীয় প্রার্থীতেই জোর দিচ্ছে বিরোধী সব দলই। সেই মতই রাজ্য নেতাদের কাছে প্রার্থীদের নাম সুপারিশ করে পাঠাবার তোড়জোড় শুরু হয়েছে স্থানীয় নেতাদের তরফ থেকে।
কংগ্রেস আজ শুক্রবার এ নিয়ে ব্লক কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বিজেপির উত্তর মুর্শিদাবাদ জেলা কোর কমিটির বৈঠক বসে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। তৃণমূলের জঙ্গিপুর জেলা কমিটিও চাইছেন এ বার সাগরদিঘিতে বিধানসভার প্রার্থী হোন সাগরদিঘিরই স্থানীয় কোনও নেতা। সেই মতোই সুপারিশ গিয়েছে। সিপিএম প্রতি বারই স্থানীয়দেরই প্রার্থী করে, এ বারও তার অন্যথা হচ্ছে না।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সাগরদিঘিতে অপ্রত্যাশিত ভাবে অকাল ভোট চলে আসায় প্রতিটি দলের কাছে এই ভোট পঞ্চায়েতের মহড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সব দলই স্থানীয় প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দলের ওজন বুঝে নিতে চাইছে।
তৃণমূলের মধ্যে সাগরদিঘিতে স্থানীয় প্রার্থীর দাবি বহুদিনের। এমনকি এই ইস্যুতে দলের মধ্যে রীতিমত কোন্দলও রয়েছে। স্থানীয় প্রার্থী এখনও বড় ইস্যু সাগরদিঘির তৃণমূল কর্মীদের কাছে। সুব্রত সাহা বিধায়ক থাকায় এতদিন সেই ইস্যুকে মদত দিতে না পারলেও জঙ্গিপুরের বর্তমান জেলা কমিটিও স্থানীয় প্রার্থীর পক্ষেই সওয়াল করেছেন এদিন। স্বভাবতই রাজনৈতিক সমীকরণের পাশাপাশি সব দলেরই স্থানীয় প্রার্থী হলে এবারের উপনির্বাচনে ব্যক্তি প্রভাবও একটা বড় প্রভাব ফেলবে।
মনোনয়নপত্র জমা পড়ার শেষ দিন ৭ মার্চ। ইতিমধ্যেই সব দলের হয়েই উঠে আসছে একাধিক নাম। সেই পিকে টিমের ফোন সমীক্ষা নতুন মাত্রা দিয়েছে প্রার্থী নির্বাচনে। এই সমীক্ষায় অবশ্য প্রথমেই রয়েছে সাগরদিঘির সামশুল হোদা। ২০১১ সালে তৃণমূলের হয়ে প্রচারে তিনি ছিলেন সামনের সারিতে। ২০১৬ সালে নিজেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ৩১৯২০ ভোট পেয়ে নজর কাড়েন। তার আগেই অবশ্য সাগরদিঘিতে সভা করতে এসে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। বহিষ্কৃত হন দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও। হোদা যোগ দেন কংগ্রেসে। সম্প্রতি দেবাশিস দলে ফিরেছে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হয়ে। ২০২১ সালের নির্বাচনে ফের তৃণমূলের হয়ে প্রচারে নামেন সামশুল হোদা। এ বারে তার নাম উঠল সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকার পিকে সমীক্ষায়। এ দিন সামশুল বলেন, “দল দায়িত্ব দিলে অবশ্যই নির্বাচনে দাঁড়াব।”
দলের চেয়ারম্যান কানাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “আমরাও চাই স্থানীয় কেউ প্রার্থী হোক এবারের উপ নির্বাচনে। কর্মীদেরও মনোভাব তাই। কারণ বহিরাগত প্রার্থী হলে সামান্য শংসাপত্র পেতেও সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। প্রার্থী হওয়ার মত দলের একাধিক নেতা রয়েছে সাগরদিঘিতে। প্রকাশ্যে বিশেষ কারও নাম বলা ঠিক হবে না, তাই বলছি না।’’