তিন দিন ধর্মঘটের হুমকি আলু ব্যবসায়ীদের

তিন দফা দাবি নিয়ে রাজ্য সরকারকে এ বার চরমপত্র দিচ্ছেন আলু ব্যবসায়ীরা। তাঁদের সাফ কথা আগামী সোমবারের মধ্যে রাজ্যের তরফে ইতিবাচক সাড়া না মিললে মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার ফের কর্মবিরতি পালন করা হবে। আর সেই হুমকির মুখে সরকারের অসহায়তা স্পষ্ট রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ের কথাতেই। তিনি বলেছেন, “সরকার আলু ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করবে, তাঁরা যেন ধর্মঘটে না যান।”

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৪৩
Share:

তিন দফা দাবি নিয়ে রাজ্য সরকারকে এ বার চরমপত্র দিচ্ছেন আলু ব্যবসায়ীরা। তাঁদের সাফ কথা আগামী সোমবারের মধ্যে রাজ্যের তরফে ইতিবাচক সাড়া না মিললে মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার ফের কর্মবিরতি পালন করা হবে। আর সেই হুমকির মুখে সরকারের অসহায়তা স্পষ্ট রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ের কথাতেই। তিনি বলেছেন, “সরকার আলু ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করবে, তাঁরা যেন ধর্মঘটে না যান।”

Advertisement

ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার পথে আলুর ট্রাক আটক করার প্রতিবাদে সোমবার হিমঘর থেকে আলু তোলেননি ব্যবসায়ীরা। তার জেরে প্রায় তিন দিন ভুগতে হয়েছে ক্রেতা থেকে দোকানিদের। মঙ্গলবার কর্মবিরতি ওঠার পর বুধবার সবে কলকাতার বাজারগুলিতে বর্ধমান, হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে আলু এসে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে আবার টানা তিন দিন কর্মবিরতির হুমকির জেরে অনেকে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন।

বস্তুত, এ দিনই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্সের বৈঠকে ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডে আলু সরবরাহের উপরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। প্রায় একই সময়ে বর্ধমানে বৈঠকে বসে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য কমিটি। সেই বৈঠকেই রাজ্যকে চরমপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর বসে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের সঙ্গে দেখা করবেন। সেখানে তিনটি বিষয়ে দাবিপত্র পেশ করা হবে। এক, আলুর দাম বাড়াতে হবে। দুই, রাস্তায় আটক করা আলু যে ভাবে পচে যাচ্ছে তার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কারণ, প্রাথমিক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, আলু পচে যাওয়ায় ট্রাক-পিছু ক্ষতি হয়েছে অন্তত তিন লক্ষ টাকা। তিন, রাস্তায় পুলিশ যে ভাবে হেনস্থা করছে তা বন্ধ করতে হবে।

Advertisement

নবান্ন সূত্রের খবর, এ দিন টাস্ক ফোর্সের বৈঠকে ডাকা হয়েছিল প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতিকেও। কিন্তু তাঁরা কেউ বৈঠকে আসেননি। কেন? সমিতির বর্ধমান জেলা কমিটির উপদেষ্টা সাগর সরকারের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী এ দিন তড়িঘড়ি টাস্ক ফোর্সের বৈঠক ডেকেছিলেন। কিন্তু দুপুর সাড়ে ১২টার পরে ডাক পেয়েছি বলে বৈঠকে যোগ দিতে পারিনি।”

টাস্ক ফোর্সের বৈঠকের পর কৃষি দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি জেলায় উৎপাদিত আলু সেই জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহের পরেই অন্য জেলা বা রাজ্যে পাঠানো যাবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ব্যাপারে জেলাশাসকদের কড়া নজর রাখতে বলেছেন তিনি। ইতিমধ্যে খোলা বাজারে জ্যোতি আলুর দাম কোথাও ২২ টাকা, কোথাও বা ২৪ টাকা কেজিতে পৌঁছেছে। বাস্তব পরিস্থিতি মেনে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার নির্দিষ্ট ১৪ টাকা কেজির বদলে জেলা প্রশাসন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে ১৭ টাকা কেজি দর ঠিক করেছে।

এই সিদ্ধান্ত কি মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরিপন্থী নয়? রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরের পরিষদীয় সচিব অরূপ খাঁ, বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী, জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী সকলেরই বক্তব্য, আলুর সর্বোচ্চ দর ১৪ টাকা কেজিতে বেঁধে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের তরফে কোনও নির্দেশিকা আসেনি! তাতেও অবশ্য সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি। বাঁকুড়ার এক খুচরো ব্যবসায়ীর বক্তব্য, “অন্তত ১৮ টাকা কেজি হলে আমরা কিছুটা লাভ পেতাম। ক্রেতারা বাছাই করে আলু কিনতে গেলে বাধ্য হয়েই আমাদের দাম বাড়াতে হবে।” অর্থাৎ ১৭ টাকা কেজির আলু কিনতে হলে কোনও বাছাবাছি করতে পারবেন না ক্রেতারা।

নবান্নের কর্তারা অবশ্য এখনও আশ্বাস দিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, সোমবার হিমঘরের আলু সরবরাহ বন্ধ থাকলেও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। কারণ, আলু উৎপাদনের মূল দু’টি জেলা হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুরে কোনও ধর্মঘট হয়নি। রাজ্যের হিমঘরগুলিতে ৩০ লক্ষ টন আলু মজুত রয়েছে। তাই আগামী দিনে জোগানের কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু সে তো বেশি দরের আলু। সরকারি আলুর চাহিদা প্রথম থেকেই নেই। বুধবারও লেক মার্কেটে ‘সরকারি আলু ১৪ টাকা’ নোটিস ঝোলানো দোকান বন্ধ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। কাজেই প্রধান প্রশ্ন হল, দাম কমবে কবে? কৃষি দফতরের এক কর্তার দাবি, তিন-চার দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু কী ভাবে, তার কোনও ব্যাখ্যা দেননি তিনি।

এ দিন টাস্ক ফোর্সের বৈঠকের পরে কৃষি দফতরের কর্তারা জানান, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ওই রাজ্যে ১৭ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন ৫ হাজার টন আলু পাঠানো হবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছিল ঝাড়খণ্ডে। ওই সাত দিনে ঝাড়খণ্ডেও রোজ ৫০০ টন করে আলু পাঠানো হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement