নিম্নমানের বীজ হওয়ার জেরে হিমঘরে রাখা হলেও সহজেই পচন ধরছে আলুতে। —ফাইল চিত্র।
আলুবীজের বস্তার গায়ে সাঁটানো নামী সংস্থার পরিচিত ব্র্যান্ডের লোগো। অভিযোগ, সেই পরিচিত লোগো দেখে আলুবীজ কিনে ঠকতে হচ্ছে উত্তরবঙ্গের আলু চাষিদের। নজরদারির আড়ালে রমরমিয়ে চলছে নিম্নমানের আলুবীজ বিক্রির কারবার। নিম্নমানের বীজ হওয়ার জেরে হিমঘরে রাখা হলেও সহজেই পচন ধরছে আলুতে। যাতে লোকসানে ডুবছেন আলুচাষিরা।
আলুবীজ কেনার সময় সাধারণত কৃষকরা বস্তার গায়ে লেখা লোগো দেখেন। বাজারের ভাষায় যাকে বলে ‘মার্কা’। মূলত পঞ্জাবের পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত সংস্থার ব্র্যান্ড বা মার্কাগুলির দিকেই কৃষকদের নজর থাকে। মার্কা ছাড়াও বস্তার গায়ে আঁকা ছবি বা পরিচিত লোগোর দেখেও তা কেনেন চাষিরা। তবে সে লোগো যে নকল, তা বহু ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে না।
সূত্রের খবর, আলুবীজের এই জালিয়াতরা বেশ আঁটঘাট বেঁধেই কাজ শুরু করেন। বিহারে পাঠানোর নাম করে উত্তরবঙ্গ থেকে আলু কেনা হয়। তা রাখা হয় পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া বিহারের জেলাগুলোর হিমঘরে। এর পর নামী কোনও বীজ সংস্থার বস্তা হাতিয়ে হিমঘরের আলু ভরা হয়। বস্তাবন্দি আলুবীজ পঞ্জাবের নম্বরের ট্রাকে করে নিয়ে আসা হয় ধূপগুড়ি বা আশপাশের বীজের বাজারগুলিতে। এর পর সস্তা দামে তা কৃষকদের গছিয়ে দেওয়া হয়।
লোগো এক অথচ নাম আলাদা। এর আড়ালেই চলছে আলুবীজের কালোবাজারি।
কৃষি দফতর জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গে আলুবীজের বাৎসরিক বাজার প্রায় ১ হাজার কোটি। গত কয়েক বছরে দেশের বহুজাতিক সংস্থা বীজের ব্যবসায় নেমেছে। পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করছে পঞ্জাবের পুরনো সংস্থাগুলিও। মজার বিষয় হস যে নামী হোক বা সস্তা, সমস্ত আলুবীজই ‘সার্টিফায়েড বীজ’ হিসাবে বিক্রি হয়। তবে বাস্তবে তা সার্টিফায়েড কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আলুবীজের বস্তার গায়ে ট্যাগ হিসেবে যে স্লিপ লাগানো থাকে, তাতে কোথাও ‘সার্টিফায়েড’ শব্দটির উল্লেখ থাকে না। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, ‘সার্টিফায়েড’ নামে বিক্রি হওয়া এই বীজগুলিকে আসলে বলা হয় ‘ট্রুথফুল লেভেল সিড’ (টি এল সিড)। অর্থাৎ কারবারিদের মুখের কথায় বিশ্বাস করে ‘সার্টিফায়েড বীজ’ কেনেন চাষিরা। তবে সেই বীজ থেকে আলুর ফলন মার খেলে তার ভর্তুকি পেতে নাজেহাল হতে হয় চাষিদের। উত্তরবঙ্গ হিমঘর মালিক সংগঠনের সম্পাদক মনোজ সাহা বলেন, ‘‘হিমঘরে সংরক্ষিত আলুতে পচন ধরায় বহু বার আমাদের দিকেই আঙুল উঠেছে। কিন্তু প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেই পচা আলু সরকারি ভাবে গবেষণাগারে পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে হিমঘর নয় বরং বীজের সমস্যার জন্যেই ফলন এবং সংরক্ষণে সমস্যা হচ্ছে।’’
ভুয়ো কারবারের জন্য সমস্যায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। ধূপগুড়ি আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক পবিত্র পাল বলেন, ‘‘কৃষকেরা যাতে নিম্নমানের বীজ কিনে প্রতারিত না হন, সে জন্য নিয়মিত প্রচেষ্টা চালানো হয়। এর পরেও কিছু ভুঁইফোড় লোক জালিয়াতির চেষ্টা করেন। তাঁদের রুখতে কৃষি দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করছে আমাদের সংগঠন।’’
জালিয়াতি রুখতে চলে নজরদারিও। ধূপগুড়ি ব্লকের সহকারি কৃষি অধিকর্তা তিলক বর্মণ বলেন, ‘‘বীজের মরসুমে বাজারে নজরদারি চালাই। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সহায়তাও নেওয়া হয়। পাশাপাশি সমস্ত বীজ রোপণের আগে সঠিক পদ্ধতিতে কাটা এবং বিজ্ঞানসম্মত ভাবে শোধন করার কথাও বলি। তবে কোনও জায়গায় আলুবীজ নিয়ে জালিয়াতির খবর পেলেই জানান, যাতে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে পারি।’’ অভিযোগ, নজরদারির আড়ালেই বিক্রি হচ্ছে জাল বীজ। ব্যবসায়ী ও কৃষকদের ফাঁদে ফেলছেন অসাধু বীজ কারবারিরা।