জল-কাদায় অগম্য চকচাকলি গ্রামের রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র।
ক্যানাল পাড়ের এই রাস্তা দিয়ে ১২টি আদিবাসী পরিবারের নিত্য যাতায়াত। তবে এলাকায় ভোটার সাকুল্যে ৪২ জন। বাসিন্দাদের ধারণা, তাই হয়তো রাস্তার হাল ফেরে না। একের পর এক ভোট যায়। কিন্তু কেউই ফিরেও তাকান না। ৪২টা ভোটের জন্য বেহাল পথ উজিয়ে চকচাকলি গ্রামে প্রচারেও আসেন না শাসক-বিরোধী কোনও পক্ষই।
জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি ব্লকের শিলদা পঞ্চায়েতের ছোটশুকজোড়া গ্রাম সংসদের অধীন ছোট্ট আদিবাসী গ্রাম চকচাকলি। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ‘‘এত বছরে এতগুলো ভোট গেল। অথচ যাতায়াতের সামান্য রাস্তাটুকু হল না। শুনেছি এক জন ভোটারের জন্যও সরকার ভাবে। আলাদা ভোটকেন্দ্র করে। আমরাও তো ভোট দিই। তবে রাস্তাটুকু পাব না কেন?’’
সদ্য পঞ্চায়েত ভোট গেল। বছর ঘুরলে লোকসভার লড়াই। ওই বেহাল রাস্তা দিয়েই ছোটশুকজোড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে ভোট দিতে যান বাসিন্দারা। এখন অবশ্য ভাদ্রের নিম্নচাপের বৃষ্টিতে জল-কাদায় মাখামাখি রাস্তায় হাঁটাচলা করা যাচ্ছে না। স্থানীয় কৃষ্ণপদ সরেন, প্রমীলা সরেন, নারায়ণ মুর্মুরা বলছেন, ‘‘বৃষ্টি হলেই হাঁটা যায় না। রাস্তার জন্য অনেক বার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে বলেছি। এখানে কম ভোটার বলেই হয়তো কেউ গুরুত্ব দিচ্ছেন না।’’
ছোটশুকজোড়া গ্রাম সংসদের মধ্যে একমাত্র আদিবাসী এলাকা এটি। এলাকার ১২টি আদিবাসী পরিবারের পেশা চাষাবাদ। বাসিন্দাদের দাবি একটাই— ছোটশুকজোড়া থেকে চকচাকলি পর্যন্ত দু’কিলোমিটার ক্যানাল পাড়ের মাটির রাস্তা পাকা হোক। নিকটবর্তী শয্যাযুক্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে শিলদায়। বৃষ্টি হলে চকচাকলি থেকে শুকজোড়া পর্যন্ত রাস্তায় সাইকেল, মোটরবাইক বা গাড়ি কিছুই চলতে পারে না। অ্যাম্বুল্যান্সও ঢুকতে পারে না। প্রসূতিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিতে কালঘাম ছোটে। চকচাকলির আদিবাসী পরিবারগুলির ভোটার কার্ড, আধার, রেশন কার্ড রয়েছে। কিন্তু এখনও পানীয় জলের সুব্যবস্থা হয়নি। দু’কিলোমিটার দূরে ছোটশুকজোড়ার দুলেপাড়ার সরকারি ট্যাপ থেকে পানীয় জল আনতে হয়। বর্ষাকালে তা আরও যন্ত্রণার। চকচাকলির ছেলেমেয়েরা শুকজোড়া ও শিলদার স্কুলে পড়ে। বেহাল রাস্তায় নাজেহাল হয় তারাও। শুকজোড়া স্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়া বিজয় সরেন, সুখচাঁদ মুর্মুর কথায়, ‘‘বর্ষাকালে গামছা পরে ব্যাগে স্কুলের জামা নিয়ে রাস্তা পেরিয়ে তার পরে জামা পরে স্কুলে যাই। ফেরার সময়েও জামা খুলে গামছা পরে বাড়ি আসি।’’
প্রশাসনের দাবি, কংসাবতীর ক্যানাল পাড়ের রাস্তাটি সেচ দফতরের অধীন। প্রশাসনিক জটিলতায় রাস্তা করা যায়নি। একই কথা জানাচ্ছেন শিলদার প্রাক্তন প্রধান শিপ্রা বেজ। ছোটশুকজোড়া গ্রাম সংসদ থেকে এ বার নির্বাচিত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য সিঞ্চন সিংয়ের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘সমস্যা সরেজমিনে দেখেছি। রাস্তার জন্য জানাব।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা নবদ্বীপ দাস জুড়ছেন, ‘‘চকচাকলি গ্রামের রাস্তা ও পানীয় জলের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে।’’ বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি অনুশ্রী করেরও বক্তব্য, ‘‘সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হবে।’’