Kanyashree University

পরিকাঠামো কোথায়? পড়ুয়া কমছে কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু হয়। নিজস্ব ভবন না-থাকায় প্রথমে কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজে এর ক্লাস হচ্ছিল। বছর খানেক পরে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের নতুন ভবনে ক্লাস শুরু হয়।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৪৩
Share:

কৃষ্ণনগরের কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন? নেই। কোনও স্থায়ী অধ্যাপক বা শিক্ষক? নেই। স্থায়ী উপাচার্য? তা-ও নেই। তিন বছর পেরিয়েও এমনই হাল কৃষ্ণনগরের কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের। ফল? ছাত্রী সংখ্যা কমছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদিও কারও কারও মতে, রাজ্য জুড়েই পড়ুয়াদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষায় অনীহা দেখা গিয়েছে। তারও প্রতিফলন হয়েছে কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়েও। কিন্তু কর্মীদের অনেকেই মনে করছেন, পরিকাঠামোর অভাব দেখেও অনেক ছাত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার উৎসাহ হারাচ্ছেন। বরং তাঁরা চলে যাচ্ছেন নিকটবর্তী বর্ধমান বা কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Advertisement

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু হয়। নিজস্ব ভবন না-থাকায় প্রথমে কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজে এর ক্লাস হচ্ছিল। বছর খানেক পরে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের নতুন ভবনে ক্লাস শুরু হয়। কৃষ্ণনগর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ্যের আবাসনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি বিষয়ে মোট আসন ৪৬০টি। এ বছর ভর্তি হয়েছেন ৩৪৩ জন। যেখানে গত বছর ভর্তি হয়েছিলেন ৪৩৭ জন।

কৃষ্ণনগরে ছাত্রীদের জন্য কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয় চালুর কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসন সূত্রে খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন তৈরির জন্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তবে সেই টাকা পূর্ত দফতরের হাতে আসেনি। ফলে ভবন তৈরির কাজ বিশ বাঁও জলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষাকর্মী। সকলেই অস্থায়ী। ১৪৪ জন অতিথি অধ্যাপক। কোনও স্থায়ী অধ্যাপক নেই।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হয়েছেন কাজল দে। তিনি বর্তমানে ডায়মন্ড হারবার উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তাঁকে কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে তিনিও নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারেন না। এ ছাড়া ফিনান্স অফিসার, কন্ট্রোলার, রেজিস্ট্রার— সকলেই অবসরপ্রাপ্ত। তাঁদের নতুন করে নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের সকলে আবার নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারেন না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজস্ব ভবন না থাকায় পড়ুয়ারা তো বটেই, সমস্যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। কৃষ্ণনগর সরকারি মহাবিদ্যালয়ে বসেন রেজিস্ট্রার ও উপাচার্য। আর পঠনপাঠন হয় কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের নতুন ভবনে। দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। ফলে ফাইল চালাচালি বা সামান্য কোনও কাজে দূরত্ব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। প্রশাসনিক ভবনে কোনও কাজ থাকলে তা সেরে ক্লাসে ঢুকতে দেরি হয়ে যায় বলে পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ। অনেক পড়ুয়াই জানিয়েছেন, কলেজে পড়ার পর ফের বিদ্যালয় চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস করতে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়েন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিকাঠামোর কথা সকলেই কম-বেশি জানেন। ফলে খুব বাধ্য না-হয়ে কোনও পড়ুয়া ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে চাইছেন বলে অধ্যাপকদের একাংশের দাবি। আবার অনেকে ভর্তি হলেও অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলে চলে যাচ্ছেন। এক অধ্যাপকের কথায়, “এই জেলাতেই আছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়। পাশেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। সকলেই চান ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে। ছাত্রী কম হওয়ার পিছনে এটাও
একটা কারণ।”

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি এমনই যে, খাতায়-কলমে গণিত বিষয় থাকলেও এত দিন তা চালু করা যায়নি। গত বছর এক জন ছাত্রী অঙ্ক নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। মাত্র এক জনের জন্য বিষয়টি চালু হয়নি। এ বছর অঙ্ক নিয়ে ন’জন ভর্তি হয়েছিলেন। দু’জন ছেড়ে চলে গিয়েছেন। অথচ আসন রয়েছে ৩০টি। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবব্রত সাহা বলেন, “ভর্তি প্রক্রিয়া সদ্য শেষ হয়েছে। ফলে এখনই এই বিষয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কোনও কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement