— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশে আপাতত স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি জানালেন, এখনই চাকরি বাতিল করা হচ্ছে না। কেন স্থগিতাদেশ তার ব্যাখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বললেন, যদি যোগ্য এবং অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব হয়, তা হলে গোটা প্যানেল বাতিল করা ন্যায্য হবে না। তবে এই নির্দেশ চূড়ান্ত নয়। এই স্থগিতাদেশ অন্তর্বর্তিকালীন। ১৬ জুলাই এই মামলার চূড়ান্ত নির্দেশ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে ‘সত্যের জয়’ বলেই দেখছে তৃণমূল। বিজেপিরও দাবি, এই রায় তাঁদের কাছে প্রত্যাশিত ছিল। তাদের আরও দাবি, রাজ্য সরকারের দাবি মেনে সিবিআই তদন্তে স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। সেটা চলবে। ‘জালিয়াতি’র বিষয়টিও স্পষ্ট হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তী নির্দেশ প্রকাশের পর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, ‘‘বাংলার ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিজেপি যে ‘বোমা’ ছুড়েছিল, তা নিষ্ক্রিয় করল মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট। সত্যের জয় হয়েছে। সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব এবং মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াব, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। জয় বাংলা।’’
বিজেপির মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য আবার একে রাজ্য সরকারের জয় বলে মানতে চাননি। তিনি এও মনে করেন, দুর্নীতির আশঙ্কা শেষ হচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘এটা প্রত্যাশিতই ছিল। আশা করব, জটিলতা এড়ানো যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক নিয়োগের বিষয়টিও কোর্টে জানান। প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির পরের দিনই এসএসসির অবস্থানের পরিবর্তন রহস্যজনক।’’ তার পরেই তিনি বলেন, ‘‘যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা চাকরি পান। তাঁদের পাশে রয়েছি। সহযোগিতা করব। এটা আমাদের অবস্থান।’’ তাঁর পরেই তাঁর খোঁচা, ‘‘পুরো নিয়োগ ব্যবস্থা জালিয়াতি ছিল, সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশে ছত্রে ছত্রে উঠে এসেছে। রাজ্য সরকার সিবিআই তদন্ত বার বার বন্ধ করতে চাইছিল। সেটা নির্দেশ দেয়নি কোর্ট। সিবিআই তদন্ত করবে। তাই বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে, মনে করার কারণ নেই। রাজ্য সরকার দুর্নীতির প্রশ্নের ঊর্ধ্বে উঠে নৃত্য করবে, তার কোনও কারণ নেই। দুর্নীতির আশঙ্কা ছিল, আছে, থাকবে।’’
তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মতে রাজ্য সরকার যে মানবিকতার কথা বলেছিল, সেই বিষয়টিই নির্দেশে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার, প্রশাসনিক সংস্থা, তৃণমূল যে বিষয়টি তুলে ধরছিল যে, চাকরি না খাওয়ার কথা, মানবিকতার কথা, যোগ্য অযোগ্য মিলিয়ে দিয়ে যারা সকলের চাকরি খেতে চাইছিল, চাকরি খাওয়ার রাজনীতি, সেটা প্রতিহত করার কথা, সেটাই উঠে এল সুপ্রিম কোর্টের সংক্ষিপ্ত অন্তর্বর্তী বক্তব্যে। সেই মানিবকতা এবং আবেগের দিকটির ইতিবাচক প্রতিফলন সু্প্রিম কোর্টের রায়ে দেখা গিয়েছে। যাদের অযোগ্য চিহ্নিত করা হয়েছে, এবং যারা যোগ্য, সকলের চাকরি খাওয়ার রাজনীতি যারা করছিলেন, সেটা আমরা বিরোধিতা করে এসেছি। সুদ-সদ টাকা ফেরতের বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি হচ্ছিল। বিজেপি, সিপিএম এবং কলকাতা হাই কোর্টের কোনও কোনও বিচারপতি যে রাজনৈতিক রং লাগাচ্ছিলেন, সেখান থেকে বেরিয়ে সুপ্রিম কোর্ট একটি বৃহৎ অংশের উপর যাতে অন্যায় রাজনীতির অভিঘাত না আসে, সেদিকে নজর রেখেছে।’’ এর পরেই কুণাল প্রাক্তন বিচারপতির প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, আমরা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নই। কারা রাজনীতি করেন, তা আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আমরা যে চাকরি খাওয়ার রাজনীতির বিরোধিতা করেছিলাম, তাকেই অর্ন্তবর্তিকালীন সংক্ষিপ্ত নির্দেশে মান্যতা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।’’
সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ তথা মূল মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আপাতত স্থগিতাদেশ দিয়েছে। চাকরি বহাল থাকছে। ওঁদের একটা মুচলেকা দিতে হবে। সিবিআই তদন্ত চালিয়ে যাবে। কয়েক জন খুব লাফালাফি করছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় করে। এটা রাজনীতির জায়গা নয়।’’
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।