সুপ্রিম কোর্টে এসএসসি মামলার শুনানি শেষ হল। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার ২৫৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশে আপাতত স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি জানালেন, এখনই চাকরি বাতিল করা হচ্ছে না। কেন স্থগিতাদেশ, তার ব্যাখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বললেন, যদি যোগ্য এবং অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব হয়, তা হলে গোটা প্যানেল বাতিল করা ন্যায্য হবে না।
একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, আপাতত কাউকে বেতন ফেরত দিতে হবে না। তবে এসএসসির ২০১৬ সালের প্যানেলে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন তাঁদের মুচলেকা দিতে হবে। পরে তাঁদের নিয়োগ ‘অবৈধ’ বলে প্রমাণিত হলে অযোগ্যদের টাকা ফেরত দিতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সিবিআই যেমন অবৈধ নিয়োগ নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল, সেভাবেই তদন্ত চালিয়ে যাবে। তবে সুপারনিউমেরারি পদ তৈরি নিয়ে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে তদন্তে স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। এই নির্দেশ অবশ্য চূড়ান্ত নয়। এই স্থগিতাদেশ অন্তর্বর্তিকালীন। ১৬ জুলাই এই মামলার চূড়ান্ত নির্দেশ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
আমরা দুঃখিত
(এই প্রতিবেদনে আগে লেখা হয়েছিল, চাকরি বাতিল সংক্রান্ত হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিল না সুপ্রিম কোর্ট। যা সঠিক নয়। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এবং সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী)
গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পর বিকাশ বলেন, ‘‘আপাতত স্থগিতাদেশ দিয়েছে। চাকরি বহাল থাকছে। ওদের একটা মুচলেকা দিতে হবে। সিবিআই তদন্ত চালিয়ে যাবে। কয়েক জন খুব লাফালাফি করছিল অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় করে। এটা রাজনীতির জায়গা নয়।’’
অন্য দিকে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার বা তৃণমূল কংগ্রেস বার বার যে কথা বলছিল—মানবিকতার কথা, চাকরি না খাওয়ার কথা, তারই ইতিবাচক প্রতিফলন আপাতত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বোঝা যাচ্ছে।’’
পৃথকীকরণ যেখানে সম্ভব সেখানে শুধু যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। রাজ্য ও এসএসসি কেউ সেই পর্যায়ে নেই যে ভবিষ্যতের দুর্নীতি রুলড আউট করা যাবে? প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের।
এসএসসি চাকরি বাতিল নিয়ে নির্দেশ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। সমস্ত পক্ষ কী কী যুক্তি দিয়েছে, তা-ই বলছে তিন বিচারপতির বেঞ্চ। সব পক্ষের বক্তব্যের মূল অংশগুলি বলা শেষ হলে বলা হবে নির্দেশ।
ইতিমধ্যেই শর্তসাপেক্ষে স্থগিতাদেশের ইঙ্গিত মিলেছে কোর্টের বক্তব্যে। লোকসভা ভোট পর্ব শেষে জুলাই মাসে পরবর্তী শুনানি করার কথাও বলা হয়েছে। তবে স্পষ্ট করে কোনও নির্দেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। এখন দেখার ‘সংক্ষিপ্ত নির্দেশে’ সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ কী কী বলে।
এসএসসির চাকরি বাতিল মামলায় সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ‘সংক্ষিপ্ত নির্দেশ’ দেবে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ১০ মিনিটের বিরতি নিয়ে ফিরলেন বিচারপতিরা। আবার বসল আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এই বক্তব্য শুনে হঠাৎই বললেন, ‘‘হাই কোর্টের রায়ে এখনই কোনও স্থগিতাদেশ দিচ্ছি না। সিবিআই তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা জুলাইতে আবার মামলা রাখছি। এখন শুধু সব পক্ষকে নোটিস জারি করছি।’’
পরে এক আইনজীবী প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে বলতে গেলে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বিচারপতিরা বললেন, আমরা তাঁর আচরণ নিয়ে কথা বলতে বসিনি।
আইনজীবী অভিষেক মনুসিঙ্ঘভিও আদালতের কাছ থেকে দু’মিনিট সময় চান কিছু বলার জন্য। কিন্তু জবাবে প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘‘আমরা সব পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। এর পরে বিস্তারিত শুনানিতে বাকিটা শোনা হবে।’’
সব পক্ষের বক্তব্য শেষে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ১০ মিনিটের বিরতি নিলেন বিচারপতিরা। জানালেন, ফিরে এসে সংক্ষিপ্ত নির্দেশ দেবেন।
মূল মামলাকারীদের আইনজীবী মনিন্দর সিংহ বললেন, ‘‘ওএমআর শিট মেলানো সম্ভব নয়। প্রত্যেকের দুটো করে ওএমআর শিট হবে। একটি এসএসসির কাছ থেকে, অন্যটি নাইসার কাছ পাওয়া যাবে। এ বার কোনও ওএমআরে কারচুপি হয়েছে কী ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব? এর থেকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করাই ভাল।’’
কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বাতিল করা ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগে চাকরি হারিয়েছিলেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন। তাতে যোগ্যতার নিরিখে চাকরিপ্রাপ্তেরা সরব হয়েছিলেন নিজেদের চাকরি নিয়ে। প্রশ্ন তুলেছিলেন, কী ভাবে অযোগ্যদের সঙ্গে এক সারিতে ফেলে চাকরি বাতিল করা হল তাঁদের। তাঁদের অপরাধ কী? এ ব্যাপারে হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন এই চাকরিহারারা। তাঁদের পাশে থেকে সুপ্রিম কোর্টে চাকরিহারাদের পক্ষে সওয়াল করেছিল রাজ্যও। এ ব্যাপারে আগের শুনানিতে চাকরি বাতিলের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। তবে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ যা বলেছে, তাতে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার হয়েছে চাকরিহারাদের। কারণ সুপ্রিম কোর্ট যা বলেছে, তাতে অনেকেই মনে করছে শর্তসাপেক্ষে স্থগিতাদেশের পক্ষে কথা বলেছে শীর্ষ আদালত। একই সঙ্গে যোগ্য এবং অযোগ্যদের আলাদা করার প্রশ্নেও বিচারপতিরা বলেছেন, তাঁরা যোগ্য এবং অযোগ্যদের আলাদা করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বললেন, ‘‘পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা বিবেচনা করব। তার আগে আমরা কোনও শর্ত ছাড়া স্থগিতাদেশ দিতে আগ্রহী নয়।’’ বিচারপতি পারদিওয়ালা জানালেন, ‘‘যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই করা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ’’
বিকাশের বক্তব্য শোনার পর প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘‘নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ হলে সম্পূর্ণ নিয়োগই তো বাতিল হয়ে যাবে।
প্রধান বিচারপতি বললেন, এ বারে বিপরীত পক্ষের বক্তব্য শোনা হবে। সওয়াল করতে শুরু করলেন নিয়োগ দুর্নীতির মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। বললেন, ‘‘টাকার বিনিময়ে বাজারে চাকরি বিক্রি করা হয়েছে।’’
প্রধান বিচারপতি: ওএমআর শিট নিয়ে আপনার অবস্থান কী?
বিকাশ: নাইসা নামক সংস্থা আজকে উঠে গিয়েছে। ওই সংস্থাকে মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সিবিআই সেখান থেকে যে ওএমআর উদ্ধার করেছিল এসএসসি তা গ্রহণ করে। ২৩ হাজার ১২৩ চাকরির সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। বেআইনি নিয়োগ হয়েছে ৮৩২৪ জনের।
প্রধান বিচারপতি: তা হলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল চাইছেন কেন?
বিকাশ: কারণ এটা একটা বিরাট দুর্নীতি হয়েছে। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই অবৈধ।
এসএসসির উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, যোগ্য এবং অযোগ্যদের আলাদা করার জন্য আপনাদের কাছে আজ কোনও উপযুক্ত তথ্য আছে?
চাকরিহারাদের আইনজীবী আদালতকে বললেন, প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা উচিত। কারণ তিনি ইন্টারভিউতে বলেছেন, তাঁকে রাজনীতিতে নামার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা হোক।
প্রধান বিচারপতি: আমরা মনে হয় মামলার মূল বিষয়ে ফোকাস করা উচিত।
চাকরিহারাদের আইনজীবীদের যুক্তি শুনে প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘‘আপনি কি বলছেন ওই ওএমআর শিট ঠিক নয়?
আইনজীবী: সেটা না। তদন্তে সবটা প্রমাণিত হয়নি। আমাদের প্রশ্ন, তদন্তে প্রমাণ হওয়ার আগেই কী করে এত হাজার চাকরি বাতিল হয়ে গেল?
চাকরিহারাদের আইনজীবীরা আদলতকে জানালেন, সিবিআই যে ওএমআর শিট উদ্ধার করেছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ ওই সমস্ত ওএমআর শিট নাইসার দফতর থেকে উদ্ধার হয়নি। পাওয়া গিয়েছে ই সংস্থার প্রাক্তন এক কর্মী পঙ্কজ বনসলের বাড়ি থেকে।
চাকরিহারাদের আইনজীবীদের সওয়াল শুনে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘আপনি কি বলতে চাইছেন কেউ অবৈধ ভাবে চাকরি পায়নি?’’
চাকরিহারাদের অন্য আইনজীবী: বৈধ এবং অবৈধদের একই তুলি দিয়ে রং করা হয়েছে। ৫ বছর ধরে চাকরি করছেন। বেআইনি নিয়োগ হয়নি। তার পরেও চাকরি গেল বহু শিক্ষকের।
চাকরিহারাদের আরও এক আইনজীবী আদালতকে এ-ও জানালেন যে, যোগ্যদের আলাদা করা সম্ভব। যদি ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ সঠিক ভাবে করা হয়ে থাকে।
প্রধান বিচারপতি: কিসের ভিত্তিতে জোর দিয়ে বলছেন যোগ্যদের আলাদা করা সম্ভব?
আইনজীবী: সিবিআই যে তালিকা দিয়েছে তা থেকেই এটা করা যাবে।
আদালতে চাকরিহারাদের আইনজীবী বললেন, ‘‘সিবিআইয়ের উদ্ধার করা ওএমআর শিটের কোনও আইনি বৈধতা নেই। ৬৫ বি এভিডেন্স আইন অনুযায়ী বৈদ্যুতিন তথ্যের কোনও সার্টিফিকেট নেই। অথচ, এক কথায় ২৬ হাজার চাকরি চলে গেল। তাঁর যুক্তি, ৬৫বি আইনের ধারা মেনে শংসাপত্র না থাকলে প্রযুক্তির দিক থেকে এর বড় প্রভাব পড়তে পারে।’’
সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল শুরু করলেন চাকরিহারাদের আইনজীবী প্রতীক ধর। এর আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বক্তব্য শুনেছে শীর্ষ আদালত। প্রতীক বললেন, ‘‘ওএমআর শিটের যে তথ্য সিবিআই হাতে পেয়েছে তাতে ৬৫বি এভিডেন্ট অ্যাক্ট প্রমাণ করা হয়নি।’’
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে চলছে শুনানি। বাকি দুই বিচারপতির নাম জে বি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্র।
সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চে আবার শুরু হল এসএসসি মামলার শুনানি। ইতিমধ্যেই এসএসসি আদালতকে জানিয়েছে, বাতিল হওয়া ২৫৭৫৩ চাকরির মধ্যে প্রায় ১৯ হাজার চাকরি পেয়েছিলেন যোগ্য প্রার্থীরা। আদালত সেই যোগ্যদের চাকরি ফেরানো নিয়ে কিছু বলে কি না সে দিকেও থাকছে নজর।