আরজি কর-কাণ্ডে দোষী সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাবাসের শাস্তি দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডকে বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা হিসাবে বিবেচনা করছে না শিয়ালদহ আদালত। ধর্ষণ এবং খুনে এক মাত্র দোষী কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাবাসের শাস্তি দিয়েছেন বিচারক। আদালত শাস্তি ঘোষণার পর থেকেই সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন রাজনীতিকেরা। তৃণমূল এবং সিপিএম উভয় শিবিরই সংশয় প্রকাশ করেছে সিবিআইয়ের ভূমিকায়। কলকাতা পুলিশের ভূমিকাতেও প্রশ্ন রয়েছে বামেদের। শাস্তি নিয়ে খুশি নয় বিজেপিও।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি দোষীর ফাঁসির দাবিতেই অনড়। সিবিআইয়ের ভূমিকায় সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি সন্তুষ্ট নন। ফাঁসির সাজা হলে অন্তত মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতেন। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ সাম্প্রতিক উদাহরণ টেনে বলেছেন, “গুড়াপ, ফরাক্কা, জয়নগরের ঘটনায় রাজ্য পুলিশ তদন্ত করেছিল। সেগুলির সব ক’টিতে ফাঁসির সাজা হয়েছে। সিবিআই কেন পারল না, সেই ব্যাখ্যা তারাই দিতে পারবে।” কলকাতা পুলিশ তদন্ত চালালে এত দিনে ফাঁসির শাস্তি হয়ে যেত বলেও মত কুণালের।
কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও সন্দেহ রয়েছে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মনে। তাঁর প্রশ্ন, “বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের এত কথা বলা হল, কিন্তু তদন্তে তার প্রতিফলন কই?” আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় প্রথমে তদন্ত চালাচ্ছিল কলকাতা পুলিশ। পরে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। সেলিমের সন্দেহ, শুরুতেই তথ্যপ্রমাণ লোপাট করে তদন্তকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, “এমন ভাবে প্রথমে এফআইআর হয়েছিল, তার পর সিবিআই তদন্তটাই এমন ভাবে করেছে যে, আদালত এটাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা বলে মান্যতা দেয়নি।”
আরজি কর-কাণ্ডে দোষীর শাস্তি ঘোষণার পর খুশি নন বিজেপি নেতৃত্বও। বিজেপি নেতা অমিত মালব্যও দাবি করেন, দোষী সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাবাস এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানায় ন্যায়বিচার মেলেনি। সমাজমাধ্যমে মালব্য লিখেছেন, “এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চতর আদালতে যাওয়া উচিত।” সরাসরি সিবিআইয়ের নামোল্লেখ না করলেও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের নেপথ্যে কলকাতা পুলিশের তৎকালীন কমিশনারের কোনও ভূমিকা ছিল কি না, তা তদন্তকারী সংস্থাগুলির খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন তিনি। নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাকেও।
শাস্তি নিয়ে খুশি নন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। সুকান্ত চাইছেন, শিয়ালদহ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চতর আদালতের দ্বারস্থ হোক সিবিআই। পুলিশ তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছে বলেও দাবি সুকান্তের।