নওশাদ সিদ্দিকী। —ফাইল চিত্র।
‘ভাইজান’অন্ত প্রাণ ছিলেন মহিউদ্দিন মোল্লা। বছর চব্বিশের যুবক প্রায়ই বলতেন, ‘‘ভাইজানের জন্য আমি মরতেও রাজি।’’ বাস্তবে তা-ই হল। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে তৃণমূলের লোকজনের ছোড়া গুলিতে আইএসএফ কর্মী মহিউদ্দিন মোল্লার প্রাণ গিয়েছে বলে অভিযোগ।
আইএসএফের মিটিং-মিছিলে নিয়মিত দেখা যেত তাঁকে। বিধানসভা ভোটের পরে হিংসার ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে ১৮ দিন জেলও খেটেছিলেন। এ বার ভোটে চালতাবেড়িয়া পঞ্চায়েতের এক প্রার্থীর হয়ে প্রস্তাবক ছিলেন। পরিবারের দাবি, সে কাজেই সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। পানাপুকুর গ্রামের কাছে গুলিবিদ্ধ হন।
পরিবারের দাবি, সকাল থেকে এলাকার দখল নিয়ে তৃণমূল গুলি-বোমা চালাতে থাকে। তারই সামনে পড়ে মাথায় গুলি লাগে মহিউদ্দিনের। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে পাঠানো হয় কলকাতায়। সেখানেই মারা যান তিনি।
শুক্রবার কাশীপুর থানার জয়পুরে মহউদ্দিনের বাড়ি গিয়েছিলেন নওশাদ। পরিবারটির পাশে থাকার বার্তা দেন। মহিউদ্দিনের বৃদ্ধ বাবা কুতুবুদ্দিনকে বলেন, ‘‘ও আপনার ছেলে ছিল ঠিকই, কিন্তু আমারও ভাই। আমি আপনার সন্তানের মতো।’’ পাঁচ বোন মহিউদ্দিনের। রঙের মিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাতেন মহিউদ্দিনই। নওশাদ বলেন, ‘‘আমি সব রকম ভাবে আপনাদের পাশে আছি।’’
নওশাদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মহিউদ্দিনের স্ত্রী নুরবানু বিবি। দু’বছরের ছেলে ইশান তখন কোলে। নুরবানু বলেন, ‘‘আমরা চাই, ওঁর শেষকৃত্যে যেন আব্বাস ভাই (আইএসএফের প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকী) আসেন।’’ সেই আশ্বাস দেন নওশাদ।
তৃণমূল কর্মী রাজু সর্দারের বাড়ি ভাঙড়-২ ব্লকের বামনঘাটায়। তাঁর বাবা সিপিএম আমলে খুন হয়েছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। রাজু বৃহস্পতিবার বামনঘাটা অঞ্চলের এক তৃণমূল কর্মীর প্রস্তাবক হিসেবে ব্লক অফিসে আসছিলেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। তৃণমূলের অভিযোগ, তাঁকে আইএসএফের লোকজন পিটিয়ে, ইট দিয়ে থেঁতলে খুন করেছে।
রাজু মেছোভেড়িতে মাছ ধরতেন। স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়ে, বৃদ্ধা মাকে নিয়ে সংসার। তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম, সওকাত মোল্লারা এ দিন গিয়েছিলেন রাজুর বাড়ি। আরাবুল বলেন, ‘‘আইএসএফ নৃশংস ভাবে রাজুকে খুন করেছে। নওশাদ সিদ্দিকী ভাঙড়ে খুনের রাজনীতি করতে চাইছেন।’’
গুলি লেগে মারা গিয়েছেন আর এক তৃণমূল কর্মী রশিদ মোল্লা। তাঁর বাড়ি জীবনতলা থানা এলাকায়। রশিদের সেখানে একটি ছোট কাপড়ের দোকান আছে। বাড়িতে স্ত্রী, চার মেয়ে, দুই ছেলে। পরিবারের দাবি, রশিদ ব্যবসার কাজে রাজারহাটে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে গন্ডগোলের মধ্যে পড়েন।
সওকাত বলেন, ‘‘আইএসএফ নোংরা রাজনীতি করতে চাইছে। সাধারণ মানুষকেও ছাড়ছে না। এক জন সাধারণ তৃণমূল কর্মী ব্যবসার কাজে গিয়েছিলেন। তৃণমূল করার অপরাধে তাঁকে গুলি করে খুন করেছে।’’ দু’টি পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তৃণমূল নেতারা।