Polio

Polio in Kolkata: পোলিয়োমুক্ত দেশ ঘোষণা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আট বছর পরে জীবাণু মিলল কলকাতায়!

শহরের ১৫ নম্বর বরোয় মেটিয়াবুরুজ এলাকায় নর্দমার জলের নমুনায় পোলিয়োর জীবাণু (ভিডিপিভি, টাইপ-১) পাওয়া গিয়েছে মে মাসের শেষে!

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২২ ০৫:৫৪
Share:

ফাইল ছবি

আট বছর আগে ভারতকে পোলিয়োমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। কিন্তু সম্প্রতি ফের সেই ভয়াল রোগের জীবাণুর সন্ধান মিলল নর্দমার জলের নমুনায়! তা-ও খাস কলকাতায়। যা নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

শহরের ১৫ নম্বর বরোয় মেটিয়াবুরুজ এলাকায় নর্দমার জলের নমুনায় পোলিয়োর জীবাণু (ভিডিপিভি, টাইপ-১) পাওয়া গিয়েছে মে মাসের শেষে! অর্থাৎ, পরিবেশে ফের নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে পোলিয়োর জীবাণু। এ দেশে শেষ পোলিয়ো রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল ২০১১ সালে। আক্রান্ত হয়েছিল হাওড়া জেলার দু’ বছরের এক শিশুকন্যা। এর পর থেকে আর কোনও ‘পোলিয়োর কেস’ পাওয়া যায়নি। ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ ভারতকে পোলিয়োমুক্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে শংসাপত্রও দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

কিন্তু এর পরেও সাবধানতায় ঢিল না দিয়ে পোলিয়োর উপরে নজরদারি কর্মসূচি (সার্ভেল্যান্স) এবং পালস্‌ পোলিয়ো টিকাকরণের কর্মসূচি চলেছে নিয়মিত ভাবে। শিশুদের রুটিন টিকাকরণের মধ্যেও গুরুত্ব-সহ রয়েছে পোলিয়ো টিকা। এ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরে লাগাতার প্রচারও কম হয়নি। তা সে প্রতি রবিবার টিকাকরণ কর্মসূচি হোক বা গান বেঁধে কার্যত বাড়ি-বাড়ি গিয়ে টিকা নিতে আহ্বান।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতরের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা জানিয়েছেন, এত দিন পরে নর্দমায় পোলিয়োর জীবাণু পাওয়ার অর্থ, প্রথমত তা কোনও পোলিয়ো-আক্রান্তের মল থেকে নিঃসৃত হয়ে থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত এমনও হতে পারে যে, লাইভ পোলিয়ো ভ্যাকসিন নিয়েছে, এমন কোনও শিশুর মল থেকে সেই ভাইরাস বেরিয়েছে। সেই শিশু খোলা জায়গায় মলত্যাগ করেছে বলে তা মিশে গিয়েছে নর্দমার জলে ।

প্রথমটি হলে ধরে নিতে হবে, ইতিমধ্যেই কোনও শিশু পোলিয়োয় আক্রান্ত হয়েছে। আর দ্বিতীয়টি হলেও ভয় থাকছে যে, তার মল থেকে জীবাণু ছড়িয়ে অন্য শিশুর দেহে প্রবেশ করে রোগ বাঁধাতে পারে। কী ভাবে? অনেক জায়গাতেই পয়ঃপ্রণালীর যা দশা, তাতে নর্দমার জলের পাইপে বহু জায়গায় চিড় থাকে। তা দিয়ে ওই নোংরা জল কাছের খাওয়ার কিংবা স্নানের জলে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে তেমন হলে, জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা। সরাসরি ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে একই নর্দমায় কম দূরত্বে একাধিক জনের খোলা শৌচেও। ফলে এখন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের লক্ষ্য, কোনও শিশু পোলিয়ো আক্রান্ত হয়েছে কি না, তা খুঁজে বার করা। যা সহজ নয় বলে মানছেন তাঁরা।

ঘটনার প্রেক্ষিতে ২৬ মে স্বাস্থ্যভবনে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিনিধিরা ছিলেন। সেখানে আলাদা করে মেটিয়াবুরুজ এলাকায় বিশেষ ‘সার্ভেল্যান্স’ চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। হু-এর কর্তাদের কথায়, ‘‘সার্ভেল্যান্স মানে, ওই অঞ্চলে রুটিন টিকাকরণে আরও জোর দেওয়া, খোলা জায়গায় শৌচকর্ম আটকানো, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে কোথাও ‘ইমিউনো ডেফিসিট চাইল্ড’ বা জন্মগত ভাবে রুগ্ন (যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম) শিশু আছে কি না, তা দেখা। সে রকম কাউকে পেলে, তাকে পরীক্ষা করা জরুরি। কারণ, এদের পোলিয়ো ভাইরাস বেশি আক্রমণ করতে পারে। অঙ্গে শিথিলতা জনিত পক্ষাঘাত রয়েছে, এমন শিশুদেরও চিহ্নিত করে পরীক্ষা করা দরকার। কারণ, পোলিয়োয় অঙ্গে এমন পক্ষাঘাত হতে পারে।’’

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর কথায়, ‘‘পোলিয়ো ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। এলাকায় প্রয়োজনীয় সার্ভেল্যান্স কর্মসূচি চলছে। রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারও মধ্যে রোগ এসেছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার সই করা চিঠি রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনও ‘ইমিউনো ডেফিসিট চাইল্ড’ ভর্তি থাকলে, দ্রুত তার মলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বাড়ি যাওয়ার পরেও এরা যাতে খোলা জায়গায় শৌচ না করে, সে ব্যাপারে এদের অভিভাবকদের বোঝানো হবে।

কেন এত বছর পরে হঠাৎ পোলিয়ো জীবাণু পরিবেশে মিলল, সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞেরা গত দু’বছরের করোনার পরিস্থিতিকেও দায়ী করছেন। কারণ, করোনার জন্য রুটিন টিকাকরণ ধাক্কা খেয়েছে এবং সার্ভেল্যান্স সে ভাবে হয়নি। ২৬ মে স্বাস্থ্য দফতরের বৈঠকেও রুটিন টিকাকরণে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন শহর এলাকায় খারাপ ফল নিয়ে কথা উঠেছে। পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, ২০২১-২২ সালে কলকাতায় রুটিন টিকাকরণ অত্যন্ত কম। মাত্র ৬০ শতাংশ। পালস্‌ পোলিয়ো টিকার বাইরে রুটিন টিকাকরণেও পোলিয়ো টিকা (আইপিভি) দেওয়া হয়। সেটা অনেক শিশু নেয়নি। সারা রাজ্যে ওই বছরে আইপিভি-র প্রথম ডোজ় নিয়েছে ৯২ শতাংশ শিশু ও দ্বিতীয় ডোজ় ৮৭ শতাংশ। একাধিক জেলায় এমন অনেক ‘কেস’ পাওয়া গিয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশ কিছু বাড়িতে শিশুরা পোলিয়ো-টিকার ড্রপ খেয়েছে বলে তথ্য নথিভুক্ত করলেও, পরে জানা গিয়েছে, আসলে তারা তা খায়নি। পোলিয়ো প্রতিরোধে এই ‘সামান্য’ বিচ্যুতিও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কায় বিশেষজ্ঞেরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement