আসানসোল যাওয়ার পথে বাধা পেয়ে পুলিশের সঙ্গে তুমুল বচসায় লকেট চট্টোপাধ্যায়। ছবি: বিকাশ মশান।
এক দিকে ১৪৪ ধারা জারি গোটা শহরে, রাস্তায় রাস্তায় টহল পুলিশ-র্যাফ-কমব্যাট ফোর্সের। অন্য দিকে তীব্র রাজনৈতিক টানাপড়েন আসানসোল-রানিগঞ্জের পরিস্থিতিকে ঘিরে। আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় গোলমালে জড়ালেন পুলিশের সঙ্গে। আর এক বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে আসানসোল পৌঁছতেই দিল না পুলিশ, আটকে দেওয়া হল দুর্গাপুরে। প্রতিবাদে রাস্তাতেই ধর্নায় বসে পড়লেন লকেট।
রামনবমীর মিছিলকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জ। মিছিলকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেখান থেকেই উত্তাপ ছড়ায় গোটা রানিগঞ্জ শহরে। পরের দিনই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আসানসোলও। গত ৪৮ ঘণ্টায় শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে গোলমালের খবর এসেছে। রাজ্য সরকার বিরাট পুলিশ বাহিনী পাঠিয়েছে এলাকায়। পাঠানো হয়েছে বেশ কয়েক জন সিনিয়র আইপিএস-কেও।
দুই শহরের পরিস্থিতিই বৃহস্পতিবার থমথমে। রাস্তাঘাট সম্পূর্ণ সুনসান, দোকান-বাজার খোলেনি। আসানসোল এবং রানিগঞ্জের বিভিন্ন রাস্তায় টহল দিচ্ছে, পুলিশ, র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স। আসানসোলে সাধারণ মানুষকে রাস্তায় না বেরনোর পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। তবে রানিগঞ্জের কিছু কিছু এলাকায় এখনও বিচ্ছিন্ন ভাবে উত্তেজনা রয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পথে।
রাজনীতি অবশ্য থেমে নেই। রাজু সিংহ নামে এক বিজেপি কর্মী সংঘর্ষে জখম হয়ে ভর্তি রয়েছেন দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বৃসহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে রাজু সিংহের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তিনি আসানসোলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করতেই পুলিশ তাঁর পথ আটকে দেয়।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েতের ঢাকি কাঠি, সর্বদল বৈঠক করে প্রস্তুতি শুরু কমিশনের
বাধা পেয়েই পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান লকেট। ১৪৪ ধারা রয়েছে রানিগঞ্জ এবং আসানসোলে, দুর্গাপুরে ১৪৪ ধারা নেই, তা হলে দুর্গাপুরে কেন তাঁর পথ আটকানো হচ্ছে? প্রশ্ন তোলেন লকেট। কিন্তু পুলিশ জানিয়ে দেয় আসানসোলের দিকে আর এগোতে দেওয়া হবে না তাঁকে।
আসানসোল যেতে বাধা পেয়ে দুর্গাপুরে ধর্না বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। ছবি: বিকাশ মশান।
পুলিশ তাঁকে এগোতে না দেওয়ায় লকেট হাসপাতালের সামনেই রাস্তার ধারে ধর্নায় বসে পড়েন। ঘটনাস্থল ঘিরে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়। ঘণ্টা দেড়েক পর ধর্না থেকে তুলে বিজেপি নেত্রীকে কলকাতার দিকে ফেরত পাঠিয়ে দেয় পুলিশ।
আরও পড়ুন: এ পারের অপেক্ষায় ৬০ হাজার রোহিঙ্গা, নেপথ্যে শাসক দলের নেতা!
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল আসানসোলেও। এলাকার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র দাবি, তিনি বেরিয়েছিলেন শহরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে, কল্যাণপুর এলাকায় পৌঁছনোর পর ত্রাণ শিবির থেকে ছুটে আসেন লোকজন এবং সাহায্যের আর্জি জানান। পুলিশ-প্রশাসন তাঁদের সাহায্য করছে না বলে তাঁরা অভিযোগ করেন, দাবি বাবুলের। ত্রাণ শিবিরের বাসিন্দাদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন চলাকালীনই পুলিশ এসে তাঁকে বাধা দেয় বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অভিযোগ করেছেন। পুলিশের সঙ্গে বাবুল সুপ্রিয়র ধস্তাধস্তির ছবিও ধরা পড়েছে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়।
আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলছেন, আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনারকে এবং পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসককে তিনি ফোন করেছেন, পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য দেখা করতে বলেছেন। কিন্তু জেলাশাসক বা পুলিশ কমিশনার, কেউই তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অভিযোগ।
বাবুল সুপ্রিয় বলেছেন, ‘‘আমি নিজেই সকালে বেরিয়েছিলাম পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। পুলিশ আমাকে বাধা দিয়েছে। কয়েকজন কনস্টেবল অত্যন্ত আপত্তিকর আচরণ করেছেন।’’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অভিযোগ সম্পর্কে পুলিশের তরফ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে বাবুল সুপ্রিয় বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত এফআইআর দায়ের করেছে।