ফাইল ছবি
স্বাস্থ্যকর্তাদের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণের অনেক আগেই পাভলভ হাসপাতালের পরিকাঠামোর কোথায় কী ধরনের ঘাটতি রয়েছে, তা জানিয়েছিল তপসিয়া থানা। গত বছর পাভলভের এক আবাসিক নিখোঁজের তদন্তে নেমে ওই থানা যে-রিপোর্ট দিয়েছিল, সেই ঘাটতির উল্লেখ ছিল তাতেই। সেই রিপোর্ট পাঠানো হয় মনোরোগের ওই হাসপাতালের সুপার গণেশ প্রসাদের কাছেও। কিন্তু অব্যবস্থার কোনও সুরাহা হয়নি। বরং রাজ্যে মানসিক চিকিৎসার এই উৎকর্ষ কেন্দ্রে অমানবিক অব্যবস্থা বহাল রয়েছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি জানার পরে স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশ বলছেন, ‘‘অব্যবস্থা যে অনেক দিন ধরেই চলছে, ফের তা প্রমণিত হল।’’
গত বছর জুলাইয়ে চিকিৎসাধীন এক নাবালিকা রোগী অন্তর্ধানের তদন্তে নেমে পাভলভ হাসপাতালের পরিকাঠামোগত কিছু খামতির কথা তুলে ধরেছিলেন তপসিয়া থানার তদন্তকারী অফিসার। তাঁর রিপোর্টে স্পষ্ট জানানো হয়েছিল, হাসপাতালে ওয়ার্ডমাস্টারের কোনও অফিসই নেই। এমনকি হাসপাতালের আবাসিকদের মধ্যে কারা চিকিৎসাধীন এবং কাদের পুলিশি পাহারার মধ্যে থাকার কথা, তা উল্লেখ লিখে রাখার মতো কোনও রেজিস্টারও নেই ওয়ার্ড অফিসে। অভিযোগ, আবাসিকদের রেজিস্টার যথাযথ ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না-করায় কোন কোন রোগী পাহারার মধ্যে রয়েছেন, পুলিশকর্মীদের পক্ষে তা চিহ্নিত করতে সমস্যা হয়। মূলত সেই কারণে ওই নিখোঁজ নাবালিকার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কর্মীরা নির্দিষ্ট ভাবে কোনও তথ্য বা নথি দিতে পারেননি বলে পুলিশের অভিযোগ।
থানার সেই রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছিল, গোবরা রোডের দিকের পাভলভ হাসপাতালের সীমানাপ্রাচীরের উপরে থাকা তারের জাল অনেক জায়গাতেই ছেঁড়া। ওই প্রাচীরের সঙ্গে যে-পাইপলাইন রয়েছে, তা বেয়ে পাঁচিল টপকানো সম্ভব। তদন্তে জানা গিয়েছিল, শেষ ছ’মাসে ওই জায়গা দিয়ে বিভিন্ন সময়ে কুড়ি-বাইশ জন আবাসিক বেরিয়ে গিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে সেই জায়গাটা একই অবস্থায় রয়েছে। হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পূর্ত দফতর মেরামত করছে না।
পুলিশের রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছিল, পাভলভ হাসপাতাল চত্বরে যে-সব পুলিশকর্মী পাহারার দায়িত্বে থাকেন, তাঁরা ওয়ার্ডের সামনে কিংবা সিঁড়িতে দীর্ঘ ক্ষণ বসতে পারেন না। কারণ, সেই সব জায়গা অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন এবং দুর্গন্ধময়। এই সব অভিযোগ শুনে স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশ বলছেন, ‘‘এত উদাসীনতা কেন, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।’’
স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, পাভলভের অব্যবস্থা নজরে আসা এবং ‘শো-কজ়’ কারণ দর্শানোর নোটিসের প্রেক্ষিতে সুপার গণেশ প্রসাদের উত্তর জমা পড়ার পরে স্বাস্থ্য ভবন কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টায় জলখাবার, বেলা দেড়টায় মধ্যাহ্নভোজ এবং রাত ৮টায় খাবার দিতে হবে। চিকিৎসা-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সামলাতে হবে ডেপুটি সুপার (নন-মেডিক্যাল)-কে। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডে রাউন্ড দিয়ে সেই তথ্য রেজিস্টারে নথিভুক্ত করতে হবে।
কিন্তু যাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সেই সুপার গণেশ প্রসাদের বিরুদ্ধে কবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, প্রশ্ন স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশের।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।