দিব্য হাজির পুজো উদ্বোধনে, জন তবু অধরাই

থানায় চড়াও হয়ে হামলায় অভিযুক্ত শিলিগুড়ির তৃণমূল নেতা বিজন নন্দী ওরফে জনকে দেখা গেল শুক্রবার বহাল তবিয়তে বিশ্বকর্মা পুজোর উদ্বোধন করতে। বিরোধীদের দাবি, পুলিশ যে শাসক দলের হয়েই কাজ করে, এই ঘটনায় তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৩৩
Share:

এনজেপি-র তৃণমূল কার্যালয়ে বিজন নন্দী ওরফে জন (বাঁ দিক থেকে প্রথম)। ছবি: সন্দীপ পাল।

থানায় চড়াও হয়ে হামলায় অভিযুক্ত শিলিগুড়ির তৃণমূল নেতা বিজন নন্দী ওরফে জনকে দেখা গেল শুক্রবার বহাল তবিয়তে বিশ্বকর্মা পুজোর উদ্বোধন করতে। বিরোধীদের দাবি, পুলিশ যে শাসক দলের হয়েই কাজ করে, এই ঘটনায় তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। কংগ্রেস পুলিশকে বলেছে ‘দলদাস’। সিপিএমের দাবি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ও পুলিশের একাংশের যোগসাজশেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

Advertisement

শহরের যে জায়গায় তাঁর সব থেকে বেশি দাপট, সেই এনজেপি-তেই সকাল থেকে বেশ কয়েকটি পুজো মণ্ডপে সদলবলে দেখা গিয়েছে জনকে। গিয়েছেন দলের অফিসেও।

কিন্তু কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না? ঘটনাচক্রে, আলাদা ভাবে হলেও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ও শিলিগুড়ির এসিপি (পূর্ব) পিনাকী মজুমদার দু’জনেই প্রায় একই সুরে ফের জানিয়েছেন, থানায় চড়াও হয়ে আসামি ছিনতাইয়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন। পিনাকীবাবু জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে, প্রয়োজন মতো পদক্ষেপ করা হবে। গৌতমবাবু গোড়া থেকেই জনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ দিনও বলেন, ‘‘ওঁর বিরুদ্ধে দু’জনকে পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ডাহা মিথ্যে।’’

Advertisement

এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ সিপিএমের সদর দফতরে দলের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার অভিযোগ করেন, জনকে গৌতমবাবুই রক্ষাকবচ জোগাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রী গৌতমবাবু, পুলিশের একাংশের যোগসাজশেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।’’ শিলিগুড়ির মেয়র তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (পূর্ব) পিনাকী মজুমদার যে ভাবে থানা থেকে আসামি ছিনতাই হয়নি বলে বিবৃতি দিচ্ছেন, তাতে মামলার পরিণতি বোঝাই যাচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘তদন্তের নিরপেক্ষতায় ওই এসিপিকে সরিয়ে দ্রুত শাস্তি দেওয়া হোক। অভিযুক্ত নয়তো গ্রেফতার হবে বলে মনে হয় না।’’

এর পরেই বেলা ১টা নাগাদ সিপিএম অফিসের অদূরে জেলা কার্যালয়ে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক তথা কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা (সমতল) সভাপতি শঙ্কর মালাকার অভিযোগ করেন, ‘‘পুলিশ মার খেয়েও চুপ করে বসে আছে। এমন আচরণ দলদাস ছাড়া অন্য কারও পক্ষে করা সম্ভব নয়।’’

প্রশ্ন উঠেছে, যদি মঙ্গলবার রাতে এনজেপি ফাঁড়িতে তেমন ঘটনাই না ঘটে থাকে তা হলে পুলিশ কেন দু’টি মামলা দায়ের করল? একটিতে জন ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে থানায় চড়াও হয়ে মারধরের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অন্য দিকে পুলিশের তরফে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে থানায় হট্টগোলের মামলা করা হয়েছে। তা হলে দ্বিতীয় মামলায় জনের নাম নেই কেন?

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে এনজেপি ফাঁড়িতে তৃণমূল কর্মীরা জনের নেতৃত্বেই হামলা করেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন ডিউটি অফিসার জলেশ্বর রায়। সিপিএম-ও একই অভিযোগ করেছিল। কিন্তু জলেশ্বরবাবু পরে আর থানায় সেই অভিযোগ করেননি। নার্সিংহোম থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে রয়েছেন। ফোন তুলছেন না। বাড়িতে গেলেও পাওয়া যাচ্ছে না তাঁকে। সে জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ও পুলিশের বিরুদ্ধে ঘটনাটি লঘু করার অভিযোগ তুলেছেন সিপিএম নেতারা।

তবে গৌতমবাবু দাবি করেছেন, ‘‘মেয়র হওয়ার পরে কাজের কাজে মন না দিয়ে অশোকবাবু অকারণে গোলমাল পাকিয়ে এলাকা অশান্ত করতে চাইছেন। তদন্তে সব স্পষ্ট হবে।’’ এনজেপিতে দলীয় অফিসে বসে জন এক ধাপ এগিয়ে জানিয়ে দেন, তদন্তের সময়ে থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হোক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সেখানে যদি দেখা যায়, আমি থানায় ঢুকে হট্টগোল করেছি, তা হলে অভিযোগ মেনে নেব।’’

পুলিশের একাংশের দাবি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে হট্টগোলের ছবি ধরা পড়লেও জনকে থানার ভিতরে দেখা যায়নি। পুলিশের একাংশের সন্দেহ, জন হয়তো থানার অদূরে রাস্তায় নিজের গাড়ির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। যদিও এসিপি (পূর্ব) পিনাকীবাবু এ দিন বলেন, ‘‘একদম সময় ধরে সিসিটিভি ফুটেজ রাখা আছে। প্রয়োজনে সেই ফুটেজ আদালতে জমা দেওয়া হবে।’’

তা হলে জলেশ্বরবাবু কেন আগে জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন? এখন তিনি কেন নীরব? ‘আক্রান্ত সহকর্মী’র পাশে ‘সিনিয়র’রা দাঁড়াচ্ছেন না বলে কেনই বা নিচুতলায় অভিযোগ উঠছে? পুলিশের এক কর্তার যুক্তি, ‘‘ওই অফিসার লিখিত ভাবে কমিশনারের কাছে কিছু এখনও জানাননি। তিনি বাড়ি থেকে ফিরে যদি জানান, তখনই সব স্পষ্ট হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement