লালবাজার। ফাইল চিত্র।
ভাঙড়ের দলীয় বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আজ, বুধবার আইএসএফের (ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট) ডাকা মিছিলের অনুমতি দিল না লালবাজার। সেই সঙ্গে লালবাজারের তরফে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করা হয়েছে মঙ্গলবার। লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছে, প্রজাতন্ত্র দিবস এবং সরস্বতী পুজোর প্রাক্কালে শহরের বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠান শুরু হবে। তাই প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছেই শান্তি বজায় রাখার আবেদন করা হচ্ছে। লালবাজারে পুলিশ হেফাজতে থাকা বিধায়ক নওশাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও মঙ্গলবার পুলিশ-কর্তাদের কাছে অনুমতি পাননি সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী।
ধর্মতলায় শনিবার পুলিশ এবং আইএসএফের খণ্ডযুদ্ধের ঘটনায় মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের বাড়ি থেকে আরও এক জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে লালবাজার। পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, ধৃতের নাম সৈয়দ আলমগির হোসেন। ধৃত ব্যক্তি নিজেকে ‘টেরিটোরিয়াল আর্মি’র হাবিলদার হিসেবে পরিচয় দিয়েছে বলে লালবাজার জানিয়েছে। পুলিশি জেরায় ধৃত ব্যক্তি জানিয়েছেন, দু’মাসের জন্য ছুটিতে এসেছিলেন। আইএসএফের সভা থাকায় তিনি শনিবার ধর্মতলায় আসেন। পুলিশ যদিও ধৃতের দাবি খতিয়ে দেখছে। লালবাজারের এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা সেনা বাহিনীর কাছে ওই ব্যক্তির ব্যাপারে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠাব। আদৌ সেনা কর্মী কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
ধৃত নওশাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য আইনজীবীকে পাশে নিয়ে এ দিন লালবাজার গিয়েছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজনবাবু। যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) ও যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকারের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তবে হেফাজতে থাকা নওশাদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেননি পুলিশ-কর্তারা। অনুমতি পাননি ফুরফুরা শরিফের প্রতিনিধিরাও। পরে বাইরে সুজনবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপি, দু’টোই শাসক দল। এই রাজ্যে বিরোধী পক্ষের বিধায়ক বলতে নওশাদ এক জনই। অনুব্রত মণ্ডল হলে পুলিশ হেফাজতে জামাই আদর আর বিরোধী পক্ষের বিধায়কের সঙ্গে অমানবিক আচরণ! আরবুল ইসলামকে ছেড়ে রেখে নওশাদদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।’’ ধৃত আইএসএফ কর্মী-সমর্থকদের আত্মীয়েরাও লালবাজারে এসেছিলেন। পরিবারের লোকজন যাতে ধৃতদের হাতে জামা-কাপড় ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে আসতে পারেন, তার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন সুজনবাবু। নওশাদদের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে সরব হওয়ার জন্য সকলের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও।
নওশাদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনই বলেছেন, ‘‘কোনও বিধায়ক তাঁর দল নিয়ে রাস্তায় নেমে ভাঙচুর করবেন, জনজীবন স্তব্ধ করে দেবেন আর ধর্ম বা বিধায়ক-পদের আশ্রয় নিতে চাইবেন, তা হতে পারে না! কেউই দেশের আইনের ঊর্ধ্বে নন।’’
আইএসএফ এবং পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়ার জন্য হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, বেপরোয়া ভাবে লাঠি চালিয়েছে পুলিশ। বিনা উর্দিতে থাকা কিছু লোককেও লাঠি চালাতে দেখা গিয়েছে। কোনও জমায়েত হঠাতে কত দূর বলপ্রয়োগ পুলিশ করতে পারে, তারও নির্দেশিকা প্রয়োজন। আগামী সপ্তাহে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হতে পারে।