Nabanna

নবান্ন অভিযানে পুলিশের মার, হরতালের ডাক

বিধানসভা নির্বাচনের অদূরে দাঁড়িয়ে বাম যুব ও ছাত্রদের নবান্ন অভিযান ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল কলকাতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৮:৩৩
Share:

এস এন ব্যানার্জি রোডে বাম-কংগ্রেসের ছাত্র-যুব সংগঠনের নবান্ন অভিযানে পুলিশের লাঠি। ছবি: সুমন বল্লভ

বিধানসভা নির্বাচনের অদূরে দাঁড়িয়ে বাম যুব ও ছাত্রদের নবান্ন অভিযান ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল কলকাতা। অভিযানে বামেদের সঙ্গী ছিল কংগ্রেসের যুব ও ছাত্র সংগঠনও। ধর্মতলার আশেপাশে বৃহস্পতিবার যুব ও ছাত্র মিছিল আটকাতে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান চালাল পুলিশ। বহু মিছিলকারী আহত হয়েছেন পুলিশের মারে। বাম নেতাদের দাবি, তাঁদের কয়েকশো ছেলে-মেয়ে আহত হয়েছেন। অনেককে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। ঘটনার প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে রাজ্যে ১২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে বামেরা। হরতালকে সক্রিয় ভাবে সমর্থনের কথা জানিয়েছে কংগ্রেস।

Advertisement

শাসক তৃণমূল অবশ্য পাল্টা দাবি করেছে, ধর্মঘটের রাজনীতিকে আগেই প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলার মানুষ। ধর্মঘটে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্যও। সরকারি কর্মীদের কাজে যোগ দিতে আসার জন্য কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে নিদের্শিকাও জারি হয়েছে।

মিছিলকারীদের বক্তব্য, কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় তাঁদের সমর্থকেরা অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পরেও পুলিশ লাঠিপেটা করেছে, জলও খেতে দেয়নি। লাথি মারার অভিযোগও উঠেছে। আহতদের মধ্যে এক জনের চোখের আঘাত গুরুতর। লালবাজারের তরফে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, মিছিলকারীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছুড়েছেন। আহত হয়েছেন ডিসি-সহ কয়েক জন পুলিশকর্মীও। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকের বক্তব্য, এমন ভাবে পুলিশ আশপাশের সব রাস্তা আটকেছিল যে, ইটের ঘায়ে আহত পুলিশকর্মীদের উদ্ধারেও সময়মতো অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে পারেনি। যার ভিত্তিতে এ দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কলকাতা পুলিশের ‘পেশাদারিত্ব’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

Advertisement

বাম ও সহযোগী দলগুলির তরফে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন বলেছেন, ‘‘শিক্ষার উন্নয়ন ও কাজের দাবিতে যে নবান্ন অভিযানের কর্মসূচি ছিল, তাকে চারিদিক থেকে ঘিরে খানিকটা জালিয়ানওয়ালাবাগের মতো অবস্থা তৈরি করে তৃণমূল সরকারের পুলিশ বাহিনী নির্মম অত্যাচার নামিয়ে এনেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য বামফ্রন্ট ও সহযোগী দলসমূহের পক্ষ থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজ্যব্যাপী হরতালের আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।’’ ধর্মঘটকে ‘সফল’ করার আহ্বান জানিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর তরফে বিবৃতি দিয়েও বলা হয়েছে, ‘দিল্লিতে স্বৈরাচারী বিজেপি সরকার যেমন কৃষকদের উপরে নির্মম অত্যাচার করছে, সেই বিজেপিরই প্রতিবিম্ব রাজ্যের তৃণমূল সরকার একই রকম দমন-পীড়নের মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রের আওয়াজ বন্ধ করতে চাইছে’।

রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ধর্মঘটের রাজনীতিকে বাংলার মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন, এ বারও তা-ই করবেন। বাম-কংগ্রেস সেই প্রত্যাখ্যানের রাস্তাতেই আবার যেতে চাইছে! তা ছাড়া, কোভিড পরিস্থিতির পরে নানা রকম সতর্কতা নিয়ে স্কুল খুলছে শুক্রবার। সে দিনই ধর্মঘট ডেকে ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের উপরে যন্ত্রণা চাপিয়ে দেওয়া নিন্দাজনক।’’ এসএফআই-সহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলি অবশ্য আজ ছাত্র ধর্মঘটেরও ডাক দিয়েছে।

সিপিএম বিধায়ক শেখ ইব্রাহিম আলির নেতৃত্বে ‘চাকরি চাই, শিল্প চাই’ দাবি নিয়ে এ দিন সকালেই নবান্নের মুখে পৌঁছে যান কয়েক জন। নবান্নের গেটে বিক্ষোভ দেখানোর সময় পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে। কলকাতায় কলেজ স্কোয়ার থেকে কয়েক হাজার সমর্থক নিয়ে যে বড় মিছিলটি নবান্নের উদ্দেশে রওনা দেয়, সেটির মুখ ঘুরিয়ে এস এন ব্যানার্জি রোডে আটকে দেয় পুলিশ। সেখানেই শুরু হয় গোলমাল। লাঠিপেটা খাওয়ার পরে এস এন ব্যানার্জি রোড থেকে গিয়ে মৌলালি মোড়ে অবরোধ করেন বাম যুব-ছাত্রেরা। সেখানেও লাঠিপেটা করে পুলিশ তাঁদের হঠিয়ে দেয়। ডোরিনা ক্রসিং-এ খণ্ডযুদ্ধের এলাকা থেকে বেরিয়ে এসে এক দল ছাত্র-যুব কার্জন পার্কের উল্টো দিকে রাজভবনের ফটকের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন। অবরোধ হয় গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলের কাছেও। ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে এগোতে গিয়ে ধর্মতলার কাছে পুলিশের মারে আহত হন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র, ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি সৌরভ প্রসাদ প্রমুখ। এই মিছিল ঘিরে উত্তর ও মধ্য কলকাতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যানজট হয়েছিল।

মিছিলে এ দিন নানা ‘চমক’ দিয়েছে বামেরা। মিছিলে ফুটবল খেলতে দেখা গিয়েছে, রেফারির বাঁশি বাজাতে দেখা গিয়েছে। শোনা গিয়েছে, ‘খেলা হবে’ স্লোগান। মিছিলকারীদের বক্তব্য, ভোটের খেলায় তৃণমূল সরকারকে ‘রেফারির লাল কার্ড’ দেখানোর প্রতীক তাঁরা মিছিলে তুলে ধরেছেন। মিছিল এস এন ব্যানার্জি রোডে কলকাতা পুরসভার সদর দফতরের কাছে পৌঁছতেই রাস্তা আটকে দেয় পুলিশ। যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) মুরলীধর শর্মার নেতৃত্বে রাস্তার উপরে বিরাট ধাতব পাঁচিল তোলা হয়েছিল, ছিল বাঁশের ব্যারিকেডও। মিছিল ব্যারিকেডের সামনে পৌঁছনোর কয়েক মিনিট পরেই কিছু ছোট ইট, কাঠের টুকরো উড়ে আসতে দেখা যায়। সেই সময়ে প্রথমে জলকামান চালায় পুলিশ। সেই জলস্রোতের মধ্যেই বিভোক্ষকারীরা ধাতব পাঁচিলটি উপড়ে দেন। তার পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে শুরু করে পুলিশ। তাতেও অবশ্য মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করা যায়নি। তার পরেই ব্যারিকেড টপকে মিছিলে লাঠি চালাতে শুরু করে পুলিশ। নামানো হয় র‌্যাফও। বিভিন্ন গলির মধ্যে তাঁদের তাড়া করে নিয়ে গিয়ে পুলিশ মেরেছে বলে মিছিলকারীদের অভিযোগ। যার প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের মন্তব্য, ‘‘নিউ মার্কেটের বিভিন্ন গলির মধ্যে ছাচ্র-যুবদের নির্মম ভাবে মেরেছে পুলিশ। বিদায় নেওয়ার আগে তৃণমূল সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাব ন্যক্কারজনক ভাবে স্পষ্ট হল আবার!’’

মিছিলে আহত হয়ে পড়ে ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা থেকে আসা এক বাম সমর্থক। তিনি বলেন, ‘‘লাঠির ঘা ঘেয়ে পড়ে যাওয়ার পরে চার-পাঁচ জন পুলিশকর্মী এসে আমাকে লাথি মারেন, মাথাতেও লাঠি দিয়ে মারেন। তার পর কিছু ক্ষণ আমার হুঁশ ছিল না।’’ বাম ছাত্র-যুব নেতৃত্বের দাবি, আগের রাত থেকে শহরের রাস্তায় প্রায় দুর্গ গড়ে তুলে ‘পরিকল্পিত’ ভাবে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। আহতদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম হাসপাতাল, স্টুডেন্টস্ হেল্‌থ হোম, ফুয়াদ হালিমদের চিকিৎসা কেন্দ্র-সহ নানা জায়গায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement