দেহ ফিরিয়ে দিল নদী, তরুণীরই কি না ধন্দ

গত কয়েক দিনে বিভিন্ন জায়গায় যমুনা নদীর ধারে কয়েক জন মহিলার দেহ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সেগুলোর কোনওটাই নিহত বাঙালি যুবক অভিজিৎ পালের বান্ধবীর দেহ নয়। বৃহস্পতিবার সকালেও যমুনার চরে এক মহিলার দেহ মিলেছে। কিন্তু সেটি অভিজিতের বান্ধবী অর্থাৎ কল্যাণীর নিখোঁজ তরুণীর কি না, বোঝা গেল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২১
Share:

গত কয়েক দিনে বিভিন্ন জায়গায় যমুনা নদীর ধারে কয়েক জন মহিলার দেহ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সেগুলোর কোনওটাই নিহত বাঙালি যুবক অভিজিৎ পালের বান্ধবীর দেহ নয়। বৃহস্পতিবার সকালেও যমুনার চরে এক মহিলার দেহ মিলেছে। কিন্তু সেটি অভিজিতের বান্ধবী অর্থাৎ কল্যাণীর নিখোঁজ তরুণীর কি না, বোঝা গেল না।

Advertisement

উত্তরাখণ্ড পুলিশ জানায়, তরুণীর যে-আত্মীয়া দেহ শনাক্তকরণের জন্য উত্তরাখণ্ডে রয়েছেন, তিনি মৃতদেহটি শনাক্ত করতে পারেননি। কলকাতা থেকে তরুণীর ভাই রওনা দিয়েছেন দেহরাদূনের উদ্দেশে। আজ, শুক্রবার বিকেলে তাঁর দেহরাদূনে পৌঁছনোর কথা। তিনি যদি দেহ শনাক্ত করতে না-পারেন, তা হলে পুলিশ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সম্মতি নিয়ে মৃতদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করাবে। দেহটি ওই তরুণীর বলে শনাক্ত হলে শনিবার ময়না-তদন্তের পরে তা তুলে দেওয়া হবে তাঁর পরিবারের হাতে।

২২ অক্টোবর অভিজিতের সঙ্গে দিওয়ালির ছুটিতে উত্তরাখণ্ডে বেড়াতে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। সে-দিন তাঁরা ছিলেন চকরাতায়। কিন্তু ২৩ অক্টোবর থেকে দু’জনের আর খোঁজ মেলেনি। ৩০ অক্টোবর উত্তরকাশীতে পাহাড়ের একটি খাদে পাওয়া যায় অভিজিতের মৃতদেহ। শনাক্তকরণের আগেই তাঁর দেহ পুড়িয়ে ফেলে স্থানীয় পুলিশ।

Advertisement

ওই খুনের ঘটনায় উত্তরাখণ্ড পুলিশ ইতিমধ্যেই রাজু দাস নামে চকরাতার এক গাড়িচালক এবং তার তিন সঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের অভিযোগ, রাজু এবং তার তিন শাগরেদ প্রথমে অভিজিৎ এবং তাঁর বান্ধবীর সর্বস্ব লুঠ করে। তার পরে খুন করে দু’জনকেই। খুনের আগে ওই তরুণীর উপরে অত্যাচার করা হয়েছিল বলে ধৃতদের বয়ানের ভিত্তিতে জানিয়েছে পুলিশ। অত্যাচার ও খুনের পরে দু’টি দেহ ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয় দুষ্কৃতীরা। ধৃতেরা জেরার মুখে পুলিশকে বলেছে, তারা প্রথমে তরুণীর দেহটি যমুনা সেতু থেকে নদীতে ফেলে দেয়। কিন্তু অভিজিতের দেহটি সেখানে ফেলার আগেই অন্য একটি গাড়ির আলো দেখতে পেয়ে তারা ছক বদলে অন্যত্র চলে যায়। তার পরে নির্জন জায়গায় অভিজিতের দেহ খাদে ফেলে দেয়।

তরুণীর দেহ উদ্ধারে বৃহস্পতিবার সকালে চারটি বিশেষ উদ্ধারকারী দলকে নামায় উত্তরাখণ্ড প্রশাসন। দু’টি দল নদীপথে খুঁজতে থাকে। অন্য দু’দল নদীর ধার বরাবর হেঁটে তল্লাশি চালায়। একটি দল নদীর চরে মহিলার মৃতদেহটি দেখতে পায় বলে উত্তরকাশীর পুলিশ সুপার জগৎরাম জোশী জানান। তিনি জানান, নদীর মাঝ বরাবর বালি ও পাথর জমে তৈরি হওয়া একটি কোনায় আটকে ছিল দেহটি। যেখানে তরুণীর দেহ ছুড়ে ফেলা হয়েছিল, সেখান থেকে ওই জায়গার দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। জোশী বলেন, “এত দিন ধরে এদহটি দীর্ঘ জলপথ পেরিয়ে এসেছে। বারবার ধাক্কা খেয়েছে পাথরে। তাই চেহারাটা আর চেনার মতো অবস্থায় নেই।” ওই অবস্থাতেই দেহটি স্থানীয় পুরোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

তরুণীর যে-আত্মীয়া (মামাতো ভাইয়ের স্ত্রী) দেহরাদূনে রয়েছেন, তিনি ওই হাসপাতালে গিয়ে মৃতদেহটি দেখে এসেছেন। ওই মহিলা বলেন, “মৃতদেহ দেখে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। সেটি পুরোপুরি বিকৃত হয়ে গিয়েছে। মাথায় একটিও চুল নেই। গায়ে এমন কোনও অলঙ্কার নেই, যা দেখে শনাক্ত করতে পারি। ওর (তরুণীর) ভাই কলকাতা থেকে আসছে। সে-ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।”

অভিজিৎ এবং তাঁর বান্ধবীর হত্যাকাণ্ড স্থানীয় বাসিন্দাদের মতো উত্তরাখণ্ড পুলিশকেও চমকে দিয়েছে। এমন শান্ত পাহাড়ি জায়গায় স্থানীয় চার যুবক কী ভাবে এই দুষ্কর্ম করতে পারল, ভেবে পাচ্ছেন না খোদ এসপি-ও। তাঁর কথায়, “অবিশ্বাস্য লাগছে। সাধারণ পাহাড়ি মানুষ শান্তিপ্রিয় বলেই পরিচিত। পর্যটকদের তাঁরা ভগবান জ্ঞান করেন। একেবারে অজ্ঞাতপরিচয় দুই যুবক-যুবতীর উপরে কেন এমন আক্রোশ, সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। এই চার অভিযুক্ত যাতে চরমতম শাস্তি পায়, আমরা সেই চেষ্টাই চালাচ্ছি।”

চকরাতার বাসিন্দারাও হতবাক। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধও। এতটাই যে, ধৃত চার জনের ফাঁসির দাবি তুলেছেন তাঁরা। ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন মূল অভিযুক্ত রাজুর বাবা। এই ঘটনাকে তাঁদের সামাজিক মূল্যবোধের উপরে বিষম আঘাত হিসেবে গণ্য করছেন স্থানীয় মানুষ। শুধু তা-ই নয়, এই জোড়া খুন তাঁদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি পর্যটনের উপরে শেষ পর্যন্ত কতটা যে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে চিন্তিত চকরাতাবাসী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement