সিনেমার পুষ্পাকে হার মানাবে ‘পাহাড়ি’ পুষ্পার কাহিনি। ছবি: সংগৃহিত।
পুলিশ প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে লাল চন্দনকাঠ পাচার করতেন পুষ্পারাজ। ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ ছিল সিনেমা। কিন্তু এই পুষ্পার গল্প সত্যি। নাম পুষ্পা... পুষ্পা মণ্ডল।
একা প্রৌঢ়া কী ভাবে বছরের পর বছর পুলিশ প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে পাহাড়ে রমরমিয়ে মাদক ব্যবসা চালিয়ে গেল, তা নিয়ে অবাক অনেক তদন্তকারীও।
পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দিব্যি কারবার চালিয়ে যাচ্ছিল পুষ্পা। দীর্ঘ দিন ধরেই তাকে খুঁজছিল পুলিশ। অবশেষে রবিবার তাকে গ্রেফতার করেছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি)। পুষ্পার সঙ্গে আরও কয়েক জন পাকড়াও হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ ব্রাউন সুগার। কে এই পুষ্পা?
Warhammer 40,000k Darktide Gameplay Overview Trailer gamescom 2022
Hubris VR - Official Gameplay Trail
পুলিশ সূত্রে খবর, বাংলার পাহাড়ের সীমান্ত এলাকায় মাদক কারবারির অন্যতম নাম পুষ্পা। কম করে ১৫ বছর ধরে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে মাদক পাচারে জড়িত সে। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অন্তর্গত পানিট্যাঙ্কি ইন্দো-নেপাল সীমান্ত ছিল তার অন্যতম ডেরা। এক সময় পানিট্যাঙ্কির ইন্দো-নেপাল সীমান্তে সুপারির রমরমা কারবার ছিল পুষ্পার। এই এলাকা বরাবরই সুপারি মাফিয়াদের অন্যতম জায়গা। মেচি নদী পার করে গাড়ি করে সেখানে পৌঁছনো যায়। সেখান থেকে মাদক ব্যবসায় হাতেখড়ি মধ্যবয়স্কার। কার্যত একা হাতেই পুরো কারবার সামলে এসেছে পুষ্পা। দেখতে শুনতে সাধারণ আটপৌরে মহিলার কাণ্ডকারখানা যত সামনে আসছে, ততই অবাক হচ্ছে পুলিশ। তবে প্রশাসনিক মহলেও আগে থেকেই যে তার খানিকটা পরিচয় ছিল তা বলাই বাহুল্য।
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের সঙ্গে যুক্ত এক পুরনো পুলিশ অফিসাররা ‘পাহাড়ি পুষ্পা’ সম্পর্কে বেশ অবগত। হলফ করে না বলা গেলেও পুষ্পা যে পুলিশের জালে আগে ধরা পড়েনি তা একেবারে নাকচও করা যায় না। কিন্তু কোনও বারই তাকে বাগে পেয়েও ধরে রাখতে পারেনি পুলিশ। সূত্রের খবর, মাত্র বছর দুই আগে পুষ্পা মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত হয়। তার আগে পানিট্যাঙ্কি, নকশালবাড়ি এলাকায় বসবাস করত সে। কিন্তু স্থায়ী ঠিকানা বলতে যা বোঝায়, তা নেই এই পুষ্পার। পাহাড়ে মাদক কারবারিদের খোঁজ নিতে গিয়ে পুলিশের এসওজির আতশকাচের নীচে আসে পুষ্পার নাম। পুলিশ জানতে পারে মাটিগাড়ার আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েতের সাধন মোড় এলাকায় পুষ্পা বেশির ভাগ সময় থাকে। হালে সেখানেই জমি কিনে বাড়ি করে থিতু হয়েছিল।
কিছু দিন আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে পুষ্পা। মাদক কারবারে পুষ্পা সঙ্গে নেয় একটি ছেলেকে। সে তার নিজের ছেলে কি না তা তদন্তসাপেক্ষ। পুষ্পার অনেক কথাই পুলিশের কানে আসত। কিন্তু তাকে শুধু ধরলেই তো হবে না। ধরে রাখতে হলে চাই প্রমাণ। কাজেই সার্ভিলেন্সে বসানো হয় পুষ্পার মোবাইল নম্বর। সেই থেকে শুরু হয় তদন্ত। সেই ফোনের সূত্র ধরে পুজোর আগে থেকে কিষাণগঞ্জ পর্যন্ত পুষ্পার পিছু নেই এসওজি। কিন্তু তথ্যপ্রমাণের অভাবে সেই যাত্রাতেও বেঁচে যায় পুষ্পা। ঠিক যেন সিনেমার পুষ্পা!
এই বাস্তবের পুষ্পা, পুষ্পা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।
এর পর পুলিশের নজরে পড়ে কী ভাবে তৎপরতার সঙ্গে নিজের মাদক কারবারের জাল বিস্তার করছে। পাহাড় থেকে ক্রমে সীমান্ত হয়ে সমতলে ছড়িয়ে পড়ে ‘পুষ্পারাজ’। আর শুধু দার্জিলিং বা কালিম্পঙে থেমে থাকে না পুষ্পার ‘ব্যবসা’। সিকিমেও ছড়িয়ে পড়ে কারবার। এর মধ্যে পুলিশ খবর পায় ভরত মণ্ডল ওরফে ট্যাবলেট নামে এক জন মালদহ থেকে মাদক নিয়ে আসছে পুষ্পার কাছে। আর দেরি নয়। এ বারের সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। জলদি জাল বিছিয়ে ফেলে এসওজি। পুষ্পার বাড়ি থেকে যেখানে যেখানে তার কারবারের সক্রিয়তা, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েন মোট ৭ দুঁদে অফিসার।
রবিবার ভোর ৫টা। শুরু হয় পুলিশের অপারেশন। তার পর দীর্ঘ অপেক্ষা। বেলা গড়িয়ে তখন দুপুর ২টো। টানটান হয়ে গেলেন আধিকারিকরা। ওই তো ট্যাবলেট ঢুকছে পুষ্পার বাড়িতে। সঙ্গে আরও এক মহিলা। যাকে আরতি নামে চেনে পুলিশ। তার পিছুপিছু ‘লোকাল সাপ্লায়ার’ বিনোদ প্রসাদও উপস্থিত। এই সুযোগ আর ছাড়ে কে। সঙ্গে সঙ্গে হানা দেয় এসওজি। হাতেনাতে গ্রেফতার হয় পুষ্পা ও তার সঙ্গীরা। তার পর পুষ্পা-সহ বাকি ধৃতদের মাটিগাড়া থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। দেখা যাক আরও কার কার নাম উঠে আসে।’’ সিনেমার পুষ্পারাজের দ্বিতীয় কাহিনি পর্দায় আসছে। তবে পাহাড়ের পুষ্পার রাজত্ব এ বার শেষ হল বলে আশাবাদী প্রশাসন।