হাহাকার: রবিবার সিপিএমের দফতরে দলের কর্মী সলিল বসুকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সূর্যকান্ত মিশ্র ও বিমান বসু। নবান্ন অভিযানে আক্রান্ত সলিলবাবু এ দিন সকালে মারা যান। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
নবান্ন অভিযানের দিন পুলিশের সঙ্গে রাস্তায় লড়াই বেধেছিল বামেদের। এ বার সেই অভিযানে অংশ নেওয়া এক কর্মীর মৃত্যু ঘিরে পুলিশের সঙ্গে নতুন করে সংঘাত বাধল সিপিএমের। অপপ্রচার চালানোর জন্য কিছুটা নজিরবিহীন ভাবেই সিপিএমের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে লালবাজার! সিপিএমও পাল্টা বলেছে, হুমকি না দিয়ে বরং মৃত কর্মীর ময়না তদন্ত করে সত্য উদঘাটন করা হোক।
আর জি কর হাসপাতালে রবিবার সকালে মৃত্যু হয় সিপিএম কর্মী সলিল (বাবলু) বসুর। সিপিএমের অভিযোগ, দমদম নয়াপট্টির বাসিন্দা, ৬০ বছরের সলিলবাবুর মাথায় পুলিশের লাঠির আঘাত লেগেছিল নবান্ন অভিযানের দিন। কিন্তু তিনি আঘাতের গুরুত্ব না বুঝে বাড়ি চলে যান। পরের দিন ধিক্কার মিছিলে যোগ দিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে জানা যায়, তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তার পর থেকেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, পুলিশের লাঠির জেরেই সলিলবাবুর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এবং তা থেকে চরম পরিণতি। সলিলবাবুকে ‘নবান্ন অভিযানের প্রথম শহিদ’ আখ্যাও দিয়েছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা।
সলিলবাবুর মৃত্যু নিয়ে সকাল থেকে সিপিএম আসরে নামতেই পাল্টা সক্রিয় হয় লালবাজার। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর)-এর তরফে পাল্টা বিবৃতি দিয়ে দাবি করা হয়, দলের এক কর্মীর মৃত্যু ঘিরে মিথ্যাচার করছে একটি রাজনৈতিক দল। পুলিশের দাবি, বাথরুমে পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন সলিলবাবু। হাসপাতালের নথিতে তেমনই উল্লেখ আছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। কিন্তু সেই মৃত্যু ঘিরে পুলিশকে বদনাম করা এবং রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা আরও দুর্ভাগ্যজনক’। পুলিশের নাম কলঙ্কিত করার এমন ‘অপচেষ্টা’ জারি থাকলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে সেই বিবৃতিতে।
আরও পড়ুন: মেয়েরাও যাবে যুদ্ধে, তৈরি সেনা
বছরদুয়েক আগে বামেদের লালবাজার অভিযানে আহত এক কর্মীর মৃত্যু ঘিরেও চাপান-উতোর বেধেছিল। পুলিশের সে বারও দাবি ছিল, বাথরুমে পড়ে আঘাত লেগেছিল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির। কিন্তু পুলিশের দিকে আঙুল তোলায় মামলার হুঁশিয়ারি এবং লালবাজারের বিবৃতিতে ‘রাজনৈতিক ফায়দা’র প্রসঙ্গ তোলা বেনজির বলেই মনে করছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা।
পুলিশের ভূমিকার কড়া নিন্দা করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু বলেছেন, ‘‘শাসক দলের মুখপাত্রের মতো ভূমিকা পালন করছেন পুলিশ আধিকারিকেরা! কাকে হুমকি দিচ্ছেন ওঁরা? ও রকম মামলা-মোকদ্দমা আমরা অনেক দেখেছি। আপনাদের সাহস থাকলে ময়না তদন্ত করে দেখান!’’ ময়না তদন্তের দাবিতে সলিলবাবুর মরদেহ রেখে দিয়ে তাঁর পরিবার এবং সিপিএমের দমদমের স্থানীয় কমিটির তরফে থানায় পাল্টা অভিযোগও দায়ের করা হচ্ছে। বামফ্রন্টের অন্যা নেতাদের সঙ্গে আলিমুদ্দিনে সলিলবাবুকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবু আজ, সোমবার জেলায় জেলায় ধিক্কার দিবস পালনের ডাক দিয়েছেন।